রাফিনিয়ার পর দলবদলের বাজারে ঝলক দেখিয়ে জুলস কুন্দেকেও কিনেছে বার্সেলোনা
রাফিনিয়ার পর দলবদলের বাজারে ঝলক দেখিয়ে জুলস কুন্দেকেও কিনেছে বার্সেলোনা

কুন্দে-রাফিনিয়ার মতো ‘দলবদল–ছিনতাইয়ের শিকার’ যাঁরা

দলবদল-ছিনতাই!

শব্দ দুটি দেখে নড়েচড়ে বসা স্বাভাবিক। অবশ্য এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Transfer Hijack’ শুনলে অতটা আজগুবি লাগবে না! ফুটবল দলবদল চলার সময়ে গণমাধ্যমের কল্যাণে এই শব্দ জোড়ার উপস্থিতি দেখা যায় প্রায়ই। দেখা গেল ক্লাব বদলের ব্যাপারে এক খেলোয়াড় কোনো আগ্রহী ক্লাবের সঙ্গে কথাবার্তা পাকা করে ফেলেছেন, আগ্রহী ক্লাবের সঙ্গে দলবদল ফি নিয়ে খেলোয়াড়টির ক্লাবের কথাবার্তাও চূড়ান্ত, এর মধ্যে তৃতীয় এক ক্লাব এসে বাড়তি বেতন-বোনাস কিংবা আদর্শ ক্রীড়া প্রকল্পের লোভ দেখিয়ে হুট করে সেই খেলোয়াড়কে ‘পটিয়ে’ নিজেদের ক্লাবে নিয়ে গেল। ফুটবল-দুনিয়ায় এমন ‘ছিনতাই’–কাণ্ডের নমুনা দেখা বিচিত্র কিছু নয়।

সম্প্রতি ফরাসি ডিফেন্ডার জুলস কুন্দে আর ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনিয়ার কল্যাণে ‘দলবদল-অপহরণ’–এর আরও দুটি নমুনা দেখা গিয়েছে। দুই খেলোয়াড়ের প্রতিই আগ্রহী ছিল চেলসি। বার্সেলোনার আগ্রহ থাকলেও, শুরুতে চেলসির মতো অত বেশি ছিল না। টমাস টুখেলের অধীনে এই দুই খেলোয়াড় খেলবেন, এ উদ্দেশ্যে চেলসি দুই খেলোয়াড়ের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও পাঠায়। রাফিনিয়ার ক্লাব লিডস ইউনাইটেড আর কুন্দের সেভিয়া সে প্রস্তাব গ্রহণও করে। কিন্তু খেলোয়াড় দুজনের পছন্দের ক্লাবের তালিকার শীর্ষে যে বার্সেলোনা ছিল, চেলসি নয়!

ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শেষমেশ আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায় বার্সেলোনা। সেটা পেয়ে চেলসিকে শূন্য হাতে ফেরত পাঠান দুই খেলোয়াড়ই। রাফিনিয়া-কুন্দে, দুজনই এখন জাভির ‘সৈনিক’। দলবদলের বাজারে বছরের পর বছর ধরে এমন অনেক কাণ্ডই ঘটেছে, ঘটছে। সেসব কাণ্ডের কয়েকটার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন!

উইলিয়ান

উইলিয়ান (আনঝি মাখাচকালা থেকে চেলসি)

ব্যর্থ ক্লাব: টটেনহাম হটস্পার

গ্যারেথ বেলের বিকল্প হিসেবে ব্রাজিলের এই উইঙ্গারকে বড্ড মনে ধরেছিল টটেনহামের। রাশিয়ার ক্লাব আনঝিকে ৩ কোটি ইউরো দেওয়ার জন্য রাজিও হয়ে গিয়েছিল তারা। কিন্তু উইলিয়ান সব সময়ই চেয়েছিলেন, লন্ডনের কোনো ক্লাবে যদি খেলতেই হয়, চেলসির হয়েই খেলবেন। কিন্তু চেলসি যদি তাঁকে না চায়, তিনি একা চাইলে হবে? তাই টটেনহামে খেলার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিলেন, প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছিলেন।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঝামেলা পাকায় চেলসি। শারীরিক পরীক্ষা শেষে উইলিয়ান যখন টটেনহামের অনুশীলন মাঠের পথে, তখন আনঝিকে প্রস্তাব পাঠায় চেলসি। শেষ মুহূর্তে ‘ইউ টার্ন’ নেন উইলিয়ান। আট ঘণ্টা ধরে টটেনহামের অফিসে দলটার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করে শেষমেশ চেলসিতে নাম লেখান উইলিয়ান

ডি স্টেফানো হতে পারতেন বার্সার

আলফ্রেদো দি স্তেফানো (মিলিওনারিওস থেকে রিয়াল মাদ্রিদ)

ব্যর্থ ক্লাব: বার্সেলোনা

কল্পনা করে দেখুন, রিয়াল মাদ্রিদ নয়, বার্সেলোনার হয়ে খেলছেন আলফ্রেদো দি স্তেফানো। বিচিত্র ঠেকছে, তাই না? রিয়াল মাদ্রিদের ‘সুপার ক্লাব’ হয়ে ওঠার নেপথ্যে যে এই তারকার ভূমিকা অনেক বেশি! ১১ বছরের রিয়াল ক্যারিয়ারে দলটাকে আটবার লিগ জিতিয়েছেন, ইতিহাসের একমাত্র দল হিসেবে রিয়াল টানা পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয় করে এই স্টেফানো থাকার সময়েই। অথচ এ সবকিছুই হয়তো অসম্ভব হতো, যদি কাতালানপাড়ায় পা পড়ত দি স্তেফানোর।

আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের হয়ে মাঠ মাতিয়ে খেলোয়াড় ধর্মঘটের সুবিধা নিয়ে দি স্তেফানো পাড়ি জমান কলম্বিয়ায়, যে দেশটা নতুন নতুন লিগ প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। কলম্বিয়ার ক্লাব মিলিওনারিওসে খেলতে শুরু করেন। কিন্তু কলম্বিয়ান লিগ তখন ফিফা অনুমোদিত ছিল না। অর্থাৎ সেই লিগের কোনো খেলোয়াড়কে যদি ফিফা নিবন্ধিত লিগের কোনো দল কিনতে চায়, তাহলে ফিফা নিবন্ধিত লিগের যে ক্লাবে খেলোয়াড়টি আগে খেলেছেন, সেই ক্লাবকে তৃতীয় পক্ষ বানিয়ে তিন পক্ষ মিলে চুক্তির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। অর্থাৎ দলবদলের অফিশিয়াল কাগজে ফিফা নিবন্ধিত দলের নাম দেখাতে হবে। এখানেই দৃশ্যপটে আসে দি স্তেফানোর আগের ক্লাব রিভার প্লেট। দি স্তেফানোর দলবদলের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই বার্সেলোনার প্রস্তাব গ্রহণ করে নিজেদের পক্ষ থেকে চুক্তির কাজ শেষ করল আর্জেন্টিনার ক্লাব।

কিন্তু রিভার প্লেট একা একা কাজ করবে, আর মিলিওনারিওস চুপচাপ বসে বসে দেখবে, তা কি হয়? চুক্তিপত্রে তারা একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছিল, রিভারপ্লেট কোনো আগ্রহী দলের সঙ্গে দি স্তেফানোর দলবদলের ব্যাপারে রাজি হয়ে গেলেও, মিলিওনারিওসের আপত্তি থাকলে সে চুক্তি বাতিল হতে বাধ্য।

আর এটাই কপাল পোড়াল বার্সেলোনার। বার্সেলোনা চুক্তির এই শর্তটাকে শুরুতে পাত্তা দেয়নি। আর এটাই রাগিয়ে দেয় মিলিওনারিওসকে। দি স্তেফানোর বার্সা–যাত্রায় বেঁকে বসে কলম্বিয়ার ক্লাবটা। আর সেই সুযোগে এই ফরোয়ার্ডকে দলে ভেড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ।

লোইক রেমি

লোইক রেমি (কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স থেকে চেলসি)

ব্যর্থ ক্লাব: লিভারপুল

নিউক্যাসল ইউনাইটেড আর কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের হয়ে ফরাসি স্ট্রাইকার রেমি তখন মাঠ মাতাচ্ছেন। এমন এক স্ট্রাইকারকে লুইস সুয়ারেজ-ড্যানিয়েল স্টারিজদের সঙ্গী করতে চাইল লিভারপুল। ৮৫ লাখ পাউন্ডের রিলিজ ক্লজও দিতে রাজি হয়ে গেল ক্লাবটা। কিন্তু ঝামেলা বাধল শারীরিক পরীক্ষা করাতে গিয়ে। দেখা গেল, হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা আছে এই স্ট্রাইকারের। লিভারপুলের দোনোমনার সুযোগ নিয়ে আরও ২০ লাখ পাউন্ড বাড়তি দিয়ে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স থেকে রেমিকে দলে টানে চেলসি।

ক্লিন্ট ডেম্পসি

ক্লিন্ট ডেম্পসি (ফুলহ্যাম থেকে টটেনহাম হটস্পার)

ব্যর্থ ক্লাব: লিভারপুল

ব্রেন্ডান রজার্স চেয়েছিলেন, স্টিভেন জেরার্ডের মতো আরও একজন মিডফিল্ডারকে দলে আনতে, যাঁর মাঝমাঠ থেকে গোল করার সামর্থ্য আছে। সেই লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিডফিল্ডার ক্লিন্ট ডেম্পসির দিকে নজর যায় তাঁর। কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না, টাকাপয়সাও থাকতে হয়। ৭৫ লাখ পাউন্ড, এখনকার বিবেচনায় দলবদল ফি–টা সামান্যই। কিন্তু দলবদলের শেষ দিন পর্যন্ত অতটুকু টাকাও লিভারপুল জোগাড় করতে পারেনি। ফলে ইংলিশ মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসনকে ফুলহ্যামে পাঠিয়ে ডেম্পসিকে দলে টানার পরিকল্পনা করেন রজার্স। হেন্ডারসব ক্লাব না ছাড়তে চাওয়ায় ডেম্পসিকে পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যায় টটেনহাম। পরে হেন্ডারসন লিভারপুলের অধিনায়ক হন, আর এক বছর পরেই টটেনহাম ছাড়েন ডেম্পসি।

ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে মিকেল

জন ওবি মিকেল (লিন অসলো থেকে চেলসি)

ব্যর্থ ক্লাব: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

খেলোয়াড় ক্লাবের জার্সি পরে ফটোসেশন করে ফেলেছেন, ক্লাবের প্রধান নির্বাহী দলবদল নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যও দিয়ে দিয়েছেন, এমন অবস্থাতেও ‘দলবদল-অপহরণ’ হতে পারে! চেলসির কল্যাণে সেই ঘটনাও বিশ্ব দেখেছিল ২০০৬ সালে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে ছবি তোলা শেষ হয়ে গিয়েছিল এই নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডারের। প্রধান নির্বাহী ডেভিড গিল বক্তব্যও দিয়ে দিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে চেলসি এসে ইউনাইটেডের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে নিয়ে যায় ওবি মিকেলকে।

মালকম

মালকম (বোর্দো থেকে বার্সেলোনা)

ব্যর্থ ক্লাব: এএস রোমা

রোমের এয়ারপোর্টে উৎসুক রোমা সমর্থকদের ভিড়। সবাই ক্লাব নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন, স্লোগান দিচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার মালকমের নাম ধরে। ক্লাবের ব্যানার-ফেস্টুন, পতাকা—কী নেই সেখানে! অপেক্ষা শুধু মালকমের। যিনি বোর্দো থেকে রোমে পা রাখবেন এএস রোমার খেলোয়াড় হওয়ার জন্য। এমন অবস্থায় দৃশ্যপটে আগমন বার্সেলোনার। মেসিদের সঙ্গে খেলানোর জন্য এই ব্রাজিলিয়ানকেই যে বেছে নিয়েছেন কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে! মালকমও যখন দেখলেন বার্সার মতো ক্লাব তাঁর প্রতি আগ্রহী, রোমায় খেলার জন্য কি তাঁর মন আর সায় দেয়!

সালাহ খেলতেন চেলসিতে

মোহাম্মদ সালাহ (এফসি বাসেল থেকে চেলসি)

ব্যর্থ ক্লাব: লিভারপুল

২০১৭ নয়, মোহাম্মদ সালাহ চাইলে লিভারপুলে যোগ দিতে পারতেন সেই ২০১৩ সালে। সুইস ক্লাব এফসি বাসেলের হয়ে আলো ছড়ানো এই উইঙ্গারকে দলে টানার জন্য বেশ কয়েক মাস ধরেই কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছিল লিভারপুল। কিন্তু ওই যে, দর–কষাকষি আর শেষ হয় না! টাকা নিয়ে লিভারপুল-বাসেলের এই দড়ি টানাটানি দেখে ‘এগিয়ে’ আসে চেলসি। এক লহমায় সালাহকে দলে টেনে লিভারপুলকে আরেকবার শূন্য হাতে ফেরায় লন্ডনের ক্লাবটা।

রবিনিও

রবিনিও (রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ম্যানচেস্টার সিটি)

ব্যর্থ ক্লাব: চেলসি

সবকিছু ঠিকঠাক। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রবিনিওকে দলে টানার সব প্রস্তুতি শেষ করে ফেলেছে চেলসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়ালে যাওয়ার পর থেকেই যিনি রিয়াল ছাড়ার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভাব ম্যানচেস্টার সিটির, আবুধাবির নতুন মালিকের অধীনে যারা মাত্রই টাকা ওড়ানো শুরু করেছে। রবিনিওকে দলে টানার মাধ্যমেই সিটিতে নতুন যুগ শুরু করার পরিকল্পনা করে আবুধাবি গ্রুপ। দলবদলের শেষ দিন ফুটবলপ্রেমীরা চোখ কচলে আবিষ্কার করেন, চেলসি নয়, সিটিতে পাড়ি জমিয়েছেন রবিনিও। এমনকি সিটির খেলোয়াড় হিসেবে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেও মুখ ফসকে চেলসির নাম উচ্চারণ করে ফেলেছিলেন রবিনিও, অর্থাৎ রবিনিওকে দলে টানার ব্যাপারে চেলসি এতটাই এগিয়ে গিয়েছিল!

পল গ্যাসকোয়েন

পল গ্যাসকোয়েন (নিউক্যাসল ইউনাইটেড থেকে টটেনহাম হটস্পার)

ব্যর্থ ক্লাব: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে মৌখিকভাবে কথাবার্তা হয়ে গিয়েছিল এই ইংলিশ মিডফিল্ডারের। শেষ মুহূর্তে বাদ সাধে টটেনহাম। গ্যাসকোয়েনকে একটা বাড়ি, তাঁর বাবাকে একটা গাড়ি আর গ্যাসকোয়েনের বোনের সূর্যস্নান করার জন্য একটা বিছানা কিনে দিয়ে ইংলিশ মিডফিল্ডারকে রাজি করায় টটেনহাম। পরে গ্যাসকোয়েন নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গান, ‘আমি ইউনাইটেডে গেলে ব্রায়ান রবসন আর নিল ওয়েবের জন্য মূল একাদশে সুযোগ পেতাম না!’

লুইস দিয়াজ (মাঝে)

লুইস দিয়াজ (এফসি পোর্তো থেকে লিভারপুল)

ব্যর্থ ক্লাব: টটেনহাম হটস্পার

কলম্বিয়ার উইঙ্গার লুইস দিয়াজকে লিভারপুল নজরে রেখেছিল গত কোপা আমেরিকা থেকেই। ভেবে রেখেছিল, এই দলবদলের বাজারে পোর্তো থেকে দিয়াজকে কিনে আনবে। কিন্তু গত জানুয়ারিতে দিয়াজের জন্য টটেনহাম প্রস্তাব পাঠালে দিয়াজকে কেনার পরিকল্পনা ছয় মাস এগিয়ে আনতে বাধ্য হয় অল রেডরা। দিয়াজ এখন লিভারপুলের অন্যতম বড় তারকা।

জর্জিনিও ভাইনালডম

জর্জিনিও ভাইনালডম (লিভারপুল থেকে পিএসজি)

ব্যর্থ ক্লাব: বার্সেলোনা

ফ্রি দলবদলে লিভারপুল থেকে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন ভাইনালডম। বার্সার ডাচ কোচ রোনাল্ড কোমান ভাইনালডমকে আনার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলেন। বেতন নিয়ে বোঝাপড়া না হওয়ার কারণে শেষমেশ নেইমার-এমবাপ্পেদের সঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এই ডাচ তারকা। পরে পিএসজিতে গিয়ে দেখেন, বার্সেলোনা থেকে খোদ মেসিই চলে আসছেন পিএসজিতে!

ইমানুয়েল পেতিত (বাঁয়ে)

ইমানুয়েল পেতিত (মোনাকো থেকে আর্সেনাল)

ব্যর্থ ক্লাব: টটেনহাম হটস্পার

মোনাকো থেকে এই রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারকে কেনার ব্যাপারে সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলেছিল টটেনহাম। পেতিত লন্ডনে আসার পর এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল, হোটেল থেকে টটেনহামের অফিস ঘোরার জন্য যে ট্যাক্সিতে চড়েছিলেন, সে ট্যাক্সিভাড়াটাও দিয়েছিলেন টটেনহামের সভাপতি অ্যালান শুগার। তখনই আর্সেনালের প্রস্তাব পান পেতিত, টটেনহামের অফিস থেকে হোটেলে যাওয়ার পথে আর্সেনালে একটা ‘ঢুঁ’ মারার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সিদ্ধান্তটাই কাল হয় টটেনহামের জন্য, পেতিত যোগ দেন ওয়েঙ্গারের আর্সেনালে।

মাইকেল লাউড্রপ

মাইকেল লাউড্রপ (ব্রন্ডবি থেকে লাৎসিও)

ব্যর্থ ক্লাব: লিভারপুল

১৯৮৩ সালে ব্রন্ডবির তরুণ ড্যানিশ তারকা মাইকেল লাউড্রপকে পছন্দ হয় লিভারপুলের। লাউড্রপ নিজেও লিভারপুল-ভক্ত ছিলেন, ফলে অল রেডদের খেলার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। তিন বছরের চুক্তিও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ঝামেলা পাকান লিভারপুলের কর্তাব্যক্তিরা। ১৯ বছর বয়সী লাউড্রপকে তিন বছরে এত বেশি টাকা দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না তাঁরা। ফলে লাউড্রপের কাছে দ্বিতীয় প্রস্তাব নিয়ে যান তাঁরা। তিন বছর নয়, বরং লাউড্রপের সঙ্গে আরও এক বছরের চুক্তি করতে চান তাঁরা। কিন্তু একই বেতনে। অর্থাৎ আগের চুক্তিতে লাউড্রপ তিন বছরে যে টাকা পেতেন, একই টাকা নতুন চুক্তি অনুযায়ী চার বছরে পাবেন লাউড্রপ। লিভারপুলের এই সিদ্ধান্তে বিরক্ত হন লাউড্রপ, আর এই সুযোগটাই কাজে লাগায় লাৎসিও।

ডেভিড বেকহাম

ডেভিড বেকহাম (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদ)

ব্যর্থ ক্লাব: বার্সেলোনা

রিয়াল মাদ্রিদের ‘গ্যালাকটিকো’-র অংশ হওয়ার আগে বার্সেলোনার সভাপতি হোয়ান লাপোর্তার সঙ্গে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে কথাবার্তা পাকা করে রেখেছিলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেভিড বেকহাম। কিন্তু ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের কথায় ভুলে রোনালদো-ফিগোদের সঙ্গী হয়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পা রাখেন বেকহাম।

রোনালদিনিও

রোনালদিনিও (পিএসজি থেকে বার্সেলোনা)

ব্যর্থ ক্লাব: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ তখন বেকহামের, ইংলিশ মিডফিল্ডারকে বিক্রি করার জন্য মরিয়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বেকহামের জায়গায় দলে কে আসবেন, সেটাও ঠিক করে রেখেছেন ফার্গুসন। পিএসজির ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রোনালদিনিওকে দলে টানার ব্যাপারে মোটামুটি সবকিছুই ঠিকঠাক দলটার। ঝামেলা পাকান বেকহাম, বার্সেলোনায় না গিয়ে রিয়ালে নাম লেখান। বার্সেলোনাও বেকহামকে না পেয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বাড়া ভাতে ছাই দেয়, দলে নিয়ে আসে রোনালদিনিওকে।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (স্পোর্তিং থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)

ব্যর্থ ক্লাব: আর্সেনাল

ডেভিড বেকহামের রিয়ালে যাওয়া, আর রোনালদিনিওর বার্সেলোনায় যাওয়ায় সবচেয়ে বড় লাভ হয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। রোনালদিনিওকে না পেয়ে পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্তিংয়ের তরুণ উইঙ্গার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দিকে নজর যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্‌-মৌসুমি ম্যাচে স্পোর্তিংয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমে রোনালদোর কাছে নাকানিচুবানি খান ফার্ডিনান্ড, ও’শেয়া, গিগসরা। সে ম্যাচের হাফ টাইমেই ফার্ডিনান্ডরা কোচ ফার্গুসনকে রাজি করান রোনালদোকে কেনার ব্যাপারে। মজার ব্যাপার হলো, তত দিনে রোনালদোকে দলে টানার ব্যাপারে বেশ এগিয়ে গিয়েছিল আর্সেনাল। ফলাফল? খালি হাতে ফিরতে হলো সে আর্সেনালকেই!

দিমিতার বারবেতভ

দিমিতার বারবেতভ (টটেনহাম হটস্পার থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)

ব্যর্থ ক্লাব: ম্যানচেস্টার সিটি

লন্ডন থেকে ম্যানচেস্টারে যাচ্ছেন বুলগেরিয়ার স্ট্রাইকার দিমিতার বারবেতভ, লক্ষ্য—নব্য ধনকুবের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে নাম লেখানো। এয়ারপোর্টে নামার পর দেখেন সিটির কোনো কর্মকর্তা নয়, বরং তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন সিটির নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন!

বারবেতভকে দলে টানার ব্যাপারে তখনই বুঝিয়েসুজিয়ে রাজি করান এই স্কটিশ ম্যানেজার। বারবেতভ আগে থেকেই ইউনাইটেডের প্রতি দুর্বল ছিলেন, ফার্গুসনের এই কাণ্ড দেখে আরও ‘পটে’ যান। ওদিকে ম্যানচেস্টার সিটিকে ফিরতে হয় খালি হাতে।

রয় কিন

রয় কিন (নটিংহ্যাম ফরেস্ট থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)

ব্যর্থ ক্লাব: ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স

রয় কিনের ক্লাব নটিংহ্যাম ফরেস্ট তত দিনে অবনমিত। কিন্তু তাতে কী? কিনের প্রতিভার কথা লিগের সব ক্লাবই জানত। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো লিগের বড় বড় ক্লাবগুলো তখন তাঁকে পাওয়ার দৌড়ে। ইউনাইটেডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্ল্যাকবার্ন তখন টাকা ওড়াচ্ছে। নটিংহ্যামের অবনমন নিশ্চিত হওয়ার পরপরই ব্ল্যাকবার্নের ম্যানেজার কেনি ডালগ্লিশ ৪০ লাখ পাউন্ডের বিনিময়ে কিনকে দলে নেওয়ার ব্যাপারটা মোটামুটি নিশ্চিত করে ফেলেন। কিনও ডালগ্লিশকে কথা দিয়ে আসেন, ফরেস্ট থেকে ব্ল্যাকবার্নেই আসছেন। তবে পাকাপাকিভাবে কোনো চুক্তিতে সই না করেই নিজের দেশে ছুটি কাটাতে চলে যান। তখনই কিনকে ফোন করেন ফার্গুসন।

‘রয়, তুমি কি কোনো কাগজপত্রে সই করে ফেলেছ? সই না করলে আমার কথাটা শোনো...’ কিনের সঙ্গে এভাবে কথাবার্তা শুরু করেন ফার্গুসন। ইউনাইটেডের প্রতি কিনের আগ্রহ থাকলেও, ডালগ্লিশকে দেওয়া কথার বরখেলাপ করতে চাননি এই আইরিশ মিডফিল্ডার। ফার্গুসনকে সে কথা বলার পর ফার্গুসন বলেন, ‘অন্তত আমার সঙ্গে একবার দেখা করে যাও। আমি জানি, তুমি আমার দলে না এলেও আমি লিগ জিতব। কিন্তু তোমার মতো একজন মিডফিল্ডার থাকলে আমি চ্যাম্পিয়নস লিগটাও জিততে পারব, আর তোমাকে আমার সেখানেই দরকার।’

ফার্গুসনের এই কথা শুনেই গলে যান কিন। ডালগ্লিশকে জানিয়ে দেন, ইউনাইটেডে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছেন তিনি। ফার্গুসনও কিনকে নিয়েই ১৯৯৯ সালে জেতেন চ্যাম্পিয়নস লিগ।