আর্জেন্টাইন ফুটবলের ভবিষ্যৎ আলভারেজ
আর্জেন্টাইন ফুটবলের ভবিষ্যৎ আলভারেজ

আর্জেন্টিনার আগামীর তারকা

মেসির সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন ছিল তাঁর

শৈশবে দেখা সেই কঠিন স্বপ্নটাই এখন বাস্তব। আলভারেজ এখন মেসির সতীর্থ। ‘এলএম টেন’–এর বিশ্বকাপ স্বপ্নপূরণের সারথিদের একজন।

আকাশপথে করদোবা থেকে রোজারিওর দূরত্ব ৩৭৬ কিলোমিটার। বিমানে এটুকু পথ পাড়ি দিতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। একই দেশের মধ্যকার দুটি শহর বলে কথা। তবে হুলিয়ান আলভারেজের স্বপ্নটা ছিল আরও দীর্ঘ পথের যাত্রা।

তিনি যে চেয়েছিলেন লিওনেল মেসির সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলতে! মেসি যখন নিজের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপটি খেলতে যাবেন, তখন আলভারেজের বয়স হবে ২২—অসম্ভব না হলেও কঠিন তো ছিলই। তবে শৈশবে দেখা সেই কঠিন স্বপ্নটাই এখন বাস্তব। আলভারেজ এখন মেসির সতীর্থ। ‘এলএম টেন’–এর বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণের সারথিদের একজন। পাশাপাশি এই আলভারেজই ভাবা হচ্ছে আর্জেন্টিনা ফুটবলের ভবিষ্যৎ।

বাবা ট্রাকচালক, মা কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক। তবে জীবনটাকে এমন নৈমিত্তিক ঘটনায় আটকে ফেলতে চাননি আলভারেজ। আর্জেন্টাইনদের পায়ের কাছে ধুলার মতো লুটোপুটি খেতে থাকা ফুটবলটাকেই বেছে নিয়েছিলেন ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার ছেলেটি। উচ্চতাটা পরিচিত কারও মনে হচ্ছে। ঠিকই ধরেছেন, একেবারে মেসির মাপে মাপ।

মেসির সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন আলভারেজ

মাঠে নামার সুযোগ পেলে খেলতেও হবে মেসির সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে। মেসিকে নিয়ে বলতে গিয়েও মুগ্ধতা লুকাতে পারেননি, ‘আমার জন্য, মেসি সব সময় সেরা। সে যা করতে পারে, সে জন্য সে সব সময় সেরা। এটা অসাধারণ ব্যাপার। সে দলকে দারুণভাবে নেতৃত্ব দেয়। এটা কোপা আমেরিকা ফাইনালের আগেও দেখা গিয়েছিল। সে দারুণ কিছু কথা বলেছিল। সে একজন অসাধারণ মানুষ এবং অধিনায়ক।’

তবে বিশ্বকাপে সুযোগের অপেক্ষাতেই হয়তো থাকতে হবে আলভারেজকে। আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি খুব বেশি চমক না দেখালে আলভারেজের একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা একটু কমই। লাওতারো মার্টিনেজ কিংবা ফরোয়ার্ড লাইনের অন্য কারও বদলি হিসেবে মাঠে নামার অপেক্ষাতেই থাকতে হবে তাঁকে।

আর্জেন্টিনা দলের অনুশীলনে সতীর্থদের সঙ্গে আলভারেজ

তবে আলভারেজ যে সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেন না, সে প্রমাণ তো ম্যানচেস্টার সিটিতেই দিয়ে এসেছেন। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে করেছেন ৭ গোল, সহায়তা করেছেন দুটিতে। ম্যান সিটির মতো তারকায় ভরপুর দলে সুযোগ পেয়েই নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করা সহজ ব্যাপার ছিল না। এই পারফরম্যান্সে আলভারেজ যেন পরোক্ষভাবে জানিয়ে দিয়েছেন—থাকতে এসেছি।

১০ বছর বয়সেই শীর্ষে ওঠার বার্তাটা দিয়ে রেখেছিলেন আলভারেজ। ১১ বছর বয়সে পাস করে যান আর্জেন্টিনার দুই শীর্ষ ক্লাব বোকা জুনিয়র্স ও রিভার প্লেটের ট্রায়াল। তবে সিঁড়িটা একেবারে তরতরিয়ে ওপরেও উঠে যায়নি। বোকার ট্রায়াল থেকে রিয়াল মাদ্রিদের স্কাউটের চোখে পড়েন আলভারেজ।

মাঠেও জমছে মেসি–আলভারেজ জুটি

পরে মাদ্রিদে গিয়ে রিয়ালে যোগ দেওয়ার কাছাকাছিও চলে গিয়েছিলেন। রিয়ালের যুব দলের হয়ে খেললেও শেষ পর্যন্ত ‘লস ব্লাঙ্কোসে’ আনুষ্ঠানিকভাবে নাম লেখাতে পারেননি। ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে। দোষটা অবশ্য তাঁর ছিল না। ১৩ বছরের কম বয়সীদের দলবদলের নীতির কারণেই ফিরতে হয়েছিল আলভারেজকে।

হতাশ হয়েছিলেন ঠিকই, তবে ভেঙে পড়েননি। দেশে ফিরে এসে রিভার প্লেটে নিজেকে আরও ক্ষুরধার করে তুলেন এই ফরোয়ার্ড। পরের গল্পটা উত্থান–পতনের ভেতর দিয়ে শুধুই এগিয়ে যাওয়ার।

শুরুতে একাদশে জায়গা পেতে কষ্ট হলেও পরে ঠিকই নিজের জাত চেনান এই ফুটবলার। তাঁকে নিয়ে রিভারপ্লেট কোচ মার্সেলো গায়ার্দো বলেছিলেন, ‘সে এমন একজন খেলোয়াড়, যাকে তার মানের জন্য কোচরা পছন্দ করবে। যেকোনো কোচিং স্টাফ তার মতো খেলোয়াড়কে দলে পেতে চাইবে। সে এখনো বেশ তরুণ। তাকে অনেক দূর যেতে হবে।’

আলভারেজের অনেক দূর যাওয়ার পর্বটা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এ মৌসুমে ম্যান সিটিতে যোগ দিয়ে চমকে দেন সবাইকে। সিটিতে যে শুধু বেঞ্চ গরম করতে আসেননি, সেই বার্তাও দিয়ে রেখেছেন। পাশাপাশি বিশ্বের তৃতীয় খেলোয়াড় রপ্তানিকারক দেশটির আরেকটি উদীয়মান রত্নের উত্থানের বার্তাও যেন এর মধ্য দিয়ে পাওয়া গেল।

তবে আলভারেজকে বড় পরীক্ষাটা দিতে হবে বিশ্বকাপের মঞ্চে। গত বছর আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয়ী দলের সঙ্গে থাকলেও নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ হয়নি তাঁর। তবে বিশ্বকাপে সে সুযোগ আসতে পারে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে একাদশে রেখে দেওয়া হয়েছে সেই ইঙ্গিতও। আর সুযোগ কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, তা তো আলভারেজের ভালোই জানা।