ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ঘরোয়া ক্রীড়া আসর ভাবা হয়। কিন্তু পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি প্রিমিয়ার লিগকে বড্ড একপেশে বানিয়ে ফেলেছে। গার্দিওলার অধীনে সর্বশেষ ছয় মৌসুমে পাঁচবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিটি। এর মধ্যে ২০১৭–১৮ মৌসুমে লিগ ইতিহাসের প্রথম ক্লাব হিসেবে ১০০ পয়েন্ট অর্জনের কীর্তিও গড়েছে।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই যে হয়নি, তা নয়। কিন্তু কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো বারবার উতরে গেছে সিটি। ২০১৮–১৯ ও ২০২১–২২ মৌসুমে একেবারে শেষ দিনে গিয়ে লিভারপুলকে ১ পয়েন্টের ব্যবধানে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল গার্দিওলার দল। সর্বশেষ ২০২২–২৩ মৌসুমে আর্সেনাল ২৪৮ দিন পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকলেও শেষভাগে পাশার দান উল্টে যায়। আর্সেনালের অবিশ্বাস্য ছন্দপতনের বিপরীতে সিটি টানা ৮ ম্যাচ জিতে শিরোপা ধরে রাখে।
ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অপ্টা’ এবারও সিটির জন্য সুসংবাদ নিয়ে এসেছে। অপ্টার সুপার কম্পিউটার বলছে, ২০২৩–২৪ মৌসুমেও ম্যানচেস্টার সিটির প্রিমিয়ার লিগ জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এই কম্পিউটার প্রতিটি রাউন্ড (ম্যাচ ডে) শেষে ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগ জয়ের সম্ভাবনার তথ্য হালনাগাদ করে থাকে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ২৩তম রাউন্ড শেষে কম্পিউটার জানিয়েছে, গার্দিওলার সিটির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ৬৬.২%, যা গত দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
ক্লাবগুলোর ম্যাচ খেলা ও বাকি থাকার সংখ্যা, পয়েন্ট তালিকায় বর্তমান অবস্থান, শক্তিমত্তা বিশ্লেষণের পর ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকে অপ্টার সুপার কম্পিউটার। মূলত পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা লিভারপুলের এক হারই সিটির লিগ শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। গত রোববার লন্ডনের এমিরেটসে আর্সেনালের মুখোমুখি হয় লিভারপুল। ইয়ুর্গেন ক্লপের দল ম্যাচটি ৩–১ ব্যবধানে হেরে যায়।
ওই ম্যাচ শুরুর আগেও সিটির টানা চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখানো হচ্ছিল ৫৪.৫%, লিভারপুলের ৪১.৪% আর আর্সেনালের ৩.৭%।
ম্যাচটি খেলতে নামার সময় এক নম্বরে থাকা লিভারপুলের পয়েন্ট ছিল ৫১, সিটি আর আর্সেনালের সমান ৪৬ করে। গোলের পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় সিটি ছিল দুইয়ে, আর্সেনাল তিনে। তা ছাড়া সিটি এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১ ম্যাচ কমও খেলেছিল।
তবে সেদিন লিভারপুলকে হারিয়ে সিটিকে টপকে দুইয়ে উঠে আসে আর্সেনাল। পরদিনই ব্রেন্টফোর্ডকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থান পুনরুদ্ধার করে সিটি। এতে এক লাফে গার্দিওলার দলের লিগ জয়ের সম্ভাবনা ১১.৭% বেড়ে হয় ৬৬.২%, লিভারপুলের কমে হয়ে যায় ২৬.১%, আর্সেনালের বেড়ে হয় ৭.৪%।
২৩ ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে লিভারপুল এখনো পয়েন্ট তালিকার চূড়ায় অবস্থান করছে। কিন্তু সিটি যে অলরেডদের চেয়ে ১ ম্যাচ কম খেলেছে! আগামী শনিবার দিনের প্রথম ম্যাচেই খেলতে নামবে গার্দিওলার দল। ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ওই দিন এভারটনকে হারালেই ২৩ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে আসবে গত মৌসুমে ট্রেবলজয়ী ক্লাবটি।
অন্য ক্লাবগুলো ২৩টি করে ম্যাচ খেললেও সিটির ১ ম্যাচ কম খেলার কারণ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। গত ডিসেম্বরে ক্লাব বিশ্বকাপ খেলতে সৌদি আরবে গিয়েছিল তারা। সে কারণে ওই সময় প্রিমিয়ার লিগ সূচিতে থাকা তাদের ম্যাচটি পিছিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
আগেই বলা হয়েছে, ক্লাবগুলোর ম্যাচ ও পয়েন্ট তালিকার অবস্থানের পাশাপাশি শক্তিমত্তাও বিশ্লেষণ করে থাকে অপ্টার সুপার কম্পিউটার। সিটির বড় দুই তারকা কেভিন ডি ব্রুইনা ও আর্লিং হলান্ড চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরায় গত কয়েক দিনে দলটির শক্তিমত্তাও বেড়েছে।
বিপরীতে জাতীয় দল মিসরের হয়ে আফ্রিকা কাপ নেশনস খেলতে গিয়ে চোটে পড়া মোহাম্মদ সালাহ এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। আরও কিছুদিন সালাহকে ছাড়াই খেলতে হতে পারে লিভারপুলের।
দলটির মিডফিল্ডার ওয়াতারু এন্দোও জাতীয় দল জাপানের হয়ে এএফসি এশিয়ান কাপ খেলতে গিয়েছিলেন। গত শনিবার কোয়ার্টার ফাইনালে ইরানের কাছে হেরে ছিটকে পড়েছে জাপান। এরপর এন্দো লিভারপুলে ফিরলেও এখনো মাঠে নামেননি। এ ছাড়া নতুন করে চোটের তালিকায় যুক্ত হওয়া দমিনিক সোবোসলাই ও কস্তাস সিমিকাসকেও পাচ্ছে না লিভারপুল।
তারকা খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই ক্লপের দলের শক্তি কমিয়ে দিয়েছে। সেটাই সুপার কম্পিউটারের ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।
এ মুহূর্তে সিটি, লিভারপুল ও আর্সেনালের বাইরে আর দুটি দলের লিগ জয়ের কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা দেখছে সুপার কম্পিউটার। মৌসুমের চমক অ্যাস্টন ভিলার সম্ভাবনা দেখানো হচ্ছে ০.২% আর টটেনহামের ০.১%।
এবারের মৌসুম শেষে শীর্ষ চারে কারা থাকবে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্যই বেশ আগে করে রেখেছে অপ্টার সুপারকম্পিউটার। যেখানে ম্যানচেস্টার সিটির সম্ভাবনা ৯৯.২০%, লিভারপুলের ৯৭.১০%, আর্সেনালের ৯৩.৮০%, অ্যাস্টন ভিলার ৬৫.৮০% আর টটেনহামের ৩০.৫০%।
অপ্টা জানিয়েছে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই ভবিষ্যদ্বাণী হালনাগাদ করা হবে।