নেইমারের কান্না
নেইমারের কান্না

নেইমারদের কাঁদিয়ে টাইব্রেকার জিতে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

টাইব্রেকারে মার্কিনিওসের নেওয়া চতুর্থ শট পোস্টে লাগতেই মুখ ঢাকলেন নেইমার। মুখে রাজ্যের অন্ধকার কাসেমিরোর। গোটা ব্রাজিল দলই তখন হতাশার অতলে ডুবে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে গেছে ব্রাজিলের দৌড়। ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে গত রাতে দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম ছেড়েছে পাঁচবারের বিশ্বসেরারা। কোটি কোটি ব্রাজিল সমর্থকের কাছে এ যেন কান্নার রাত।

সেমিফাইনালে উঠে ক্রোয়েশিয়ার উল্লাস

১-১ গোলের সমতার ম্যাচ শেষে টাইব্রেকারে ব্রাজিলের প্রথম শটটা নিলেন বদলি নামা তরুণ ফরোয়ার্ড রদ্রিগো। কিন্তু চরম স্নায়ুচাপের কাছে হার মেনে তিনি নিলেন দুর্বল শট, যা আটকে দেন ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার দমিনিক লিভাকোভিচ। রদ্রিগোর পর মার্কিনিওসের মিস সর্বনাশ করে দেয় ব্রাজিলের। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া চারটি শটেই গোল করেছে। শেষ পর্যন্ত ৪-২ ব্যবধানে টাইব্রেকারে জিতে ক্রোয়েশিয়া উঠেছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। নিজেদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো শেষ চারে ক্রোয়াটরা। ব্রাজিলের ১২তম সেমিফাইনাল হলো না।

নেইমারের গোলের উল্লাস

অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ। ৯০ মিনিট শেষে পোস্টে ব্রাজিলের শট ৭টি। ক্রোয়েশিয়ার ছিল না একটিও। উদ্বিগ্ন হলুদ-ঢেউ তখনো শঙ্কায়। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের সব শঙ্কা দূর করে দৃশ্যপটে স্বয়ং নেইমার। ব্রাজিলের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ–যাত্রা তাঁর পায়ের জাদুতেই বেঁচে থাকছে, এমনটাই মনে হচ্ছিল তখন।

কাঁদছেন নেইমার

১০৬তম মিনিটে দুই সতীর্থের সঙ্গে দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে পড়েন ব্রাজিলের ‘নাম্বার টেন’। বাকি কাজটা করতে ভেঙে ফেলেছেন পোস্টের নিচে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা দমিনিক লিভাকোভিচের প্রতিরোধ। ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার শেষ রক্ষা করতে পারেননি। তাঁকে কাটিয়ে নেইমার যখন খুব কাছ থেকে দুরন্ত শটে বল জড়ান জালে, ততক্ষণে ব্রাজিলের আকাশ থেকে অনেকটা কেটে গেছে শঙ্কার মেঘ। এই গোল তাঁকে নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার জবাবও। নেইমার এদিন ছুঁয়ে ফেলেছেন ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা কিংবদন্তি পেলেকে। দেশের হয়ে দুজনেরই গোল এখন ৭৭।

ক্রোয়েশিয়ার উল্লাস

জয় থেকে যখন প্রায় নিশ্বাস দূরত্বে ব্রাজিল, তখনই ১১৭তম মিনিটে ব্রাজিল শিবিরকে স্তব্ধ করে ক্রোয়েশিয়ার গোল। সেটিই ছিল ব্রাজিলের পোস্টে প্রথম শট ক্রোয়েশিয়ার। বক্সের একটু ভেতর থেকে দিনামো জাগবেরের ফরোয়ার্ড ব্রুনো পেতকোভিচের শট ব্রাজিল ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার পায়ে লেগে কিছুটা দিক বদলে জালে। মাথায় হাত ব্রাজিলের! তারপর তো টাইব্রেকার–দুঃখ। ২০০২ বিশ্বকাপের পর টানা পাঁচবার বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ইউরোপিয়ান দলকে হারাতে ব্যর্থ ব্রাজিল।

ব্রাজিলের হতাশা, ক্রোয়েশিয়ার উল্লাস

কিন্তু এই রাতে সেমিফাইনালের টিকিট পেতে ব্রাজিল ঘাম ঝরিয়েছিল বিস্তর। ব্রাজিল যেমন ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়তে পছন্দ করে, কিন্তু এদিন ক্রোয়েশিয়া সেই সুযোগ দেয়নি। বল পায়ে রেখে বরং নিজেরাই উঠছিল। ১২ মিনিটে গোল তো প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল ক্রোয়েশিয়া। ইভান পেরিসিচ বলে পা লাগাতে পারেনি বলে রক্ষা। পরপরই মদরিচের ক্রস আতঙ্ক হলুদ-রক্ষণে।

বারিসিচদের রক্ষণ ফাঁকফোকর ভরাট করে রেখেছিল। যে কারণে ব্রাজিল অন্য দিনের মতো চূড়ান্ত পাসটা রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিল না। উল্টো ক্রোয়েশিয়া চোখ রাঙায় ব্রাজিলের রক্ষণে। কিছুটা স্নায়ুচাপেই কি না, ২৪ মিনিটে বিপজ্জনক ফাউল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ডটা দেখেন ব্রাজিল ডিফেন্ডার দানিলো। এরপর কখনো কখনো প্রান্ত বদল করে ব্রাজিলকে ভয় ধরিয়ে দেন মারিও পাসালিচরা।

প্রথমার্ধ শেষে পরিসংখ্যান দাঁড়ায় এ রকম—বল পজেশনে ব্রাজিল ৫১, ক্রোয়েশিয়া ৪৯। পোস্টে ব্রাজিলের শট পাঁচটি, যার মধ্য লক্ষ্যে তিনটি। গোলের জন্য তিতে তাঁর ভান্ডারের সব অস্ত্রই ব্যবহার করেন। দ্বিতীয়ার্ধে রাফিনিয়াকে তুলে আন্তনিকে, ভিনিসিয়ুসকে তুলে রদ্রিগোকে নামান কোচ। শেষ দিকে রিচার্লিসনকেও তোলা হলো। ৯০ মিনিট শেষে ক্রোয়েশিয়া গোলকিপারের সেভের সংখ্যা ৮। তারপর টাইব্রেকারে একটি সেভ। নেইমারদের কাঁদিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে শেষ চারে তোলার নায়কও তো তিনিই।