ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র
ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র

ব্রাজিলের হারের পর ক্ষমা চাইলেন ভিনিসিয়ুস

তিনি যতটা না ব্রাজিলের, এর চেয়ে বেশি রিয়াল মাদ্রিদের—ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে নিয়ে ব্রাজিল সমর্থকদের এমন অভিযোগ অনেক দিনের। এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় একটিই—ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের মতো জাতীয় দল ব্রাজিলের হয়েও সমানতালে পারফর্ম করে যাওয়া।

কিন্তু ব্রাজিল ভক্তদের প্রত্যাশার ধারেকাছেও যেতে পারছেন না ভিনিসিয়ুস। ব্রাজিলের দুঃসময়ও তাই কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। চোটের কারণে প্রায় এক বছর ধরে নেইমার না থাকায় আক্রমণভাগে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব ভিনিসিয়ুসের ওপরই বর্তেছিল; কিন্তু দেশের জার্সিতে একের পর এক ম্যাচে ছন্নছাড়া পারফর্ম করে যাচ্ছেন এই উইঙ্গার। ব্রাজিলের বাজে সময় চলতে থাকার অন্যতম কারণও মনে করা হচ্ছে তাঁর নিষ্প্রভতা।  

২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এখন পর্যন্ত খেলা ৮ ম্যাচের ৪টিতেই হেরেছে ব্রাজিল, যার সর্বশেষটি আজ প্যারাগুয়ের বিপক্ষে (১–০)। অথচ দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের (কনমেবল) আগের পাঁচ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৭১ ম্যাচ খেলে মাত্র ৫টিতে হেরেছিল ব্রাজিল। এতেই স্পষ্ট, রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা কতটা খারাপ সময় পার করছে। আজকের হারে বাছাইয়ের পয়েন্ট তালিকার পাঁচে নেমে গেছে দরিভাল জুনিয়রের দল।

ব্রাজিল সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র

প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় ভিনিসিয়ুসকে আরও কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। কোপা আমেরিকার পর বিশ্বকাপ বাছাইয়েও ব্যর্থ এই তারকার ওপর রীতিমতো বিরক্ত ব্রাজিল সমর্থকেরা। তাই আজ প্যারাগুয়ের কাছে হারের পর ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

ব্রাজিলের ক্রীড়া বিষয়ক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক স্পোরটিভিকে ২৪ বছর বয়সী উইঙ্গার বলেছেন, ‘আমি সমর্থকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, তারা সবসময় আমাদের পাশে থাকেন; কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা কঠিন সময় পার করছি। আমাদের চাওয়া একটাই—খেলায় উন্নতি করা।’

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আছে বলেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না বলে মনে করেন ভিনিসিয়ুস, ‘আমি আমার সামর্থ্যের ব্যাপারে জানি। এটাও জানি জাতীয় দলের হয়ে আমি কী করতে পারি। কিন্তু যখন আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস থাকে না, যখন আপনি গোল পান না, গোলে সহায়তা করতে পারেন না এবং ভালো পারফর্ম করতে পারেন না, তখন প্রক্রিয়াগুলো খুব কঠিন হয়ে ওঠে।’

যদিও ভুলগুলো শুধরে দ্রুত ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী ভিনিসিয়ুস, ‘জানি, আমি কোন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করি। যখন আমি ভালো অবস্থায় পৌঁছাব (উন্নতি করব), তখন সবাইকে (আমার খেলার দিয়ে) মানসিক প্রশান্তি দেব। আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত। যত দ্রুত সম্ভব, আমি উন্নতি করতে চাই।’

রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে ২০২৩–২৪ মৌসুম দুর্দান্ত কেটেছে ভিনিসিয়ুসের। স্পেন ও ইউরোপের সফলতম ক্লাবটির হয়ে গত মৌসুমে স্প্যানিশ সুপার কাপ, লা লিগা ও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের পথে করেছেন ২৪ গোলে, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১১ গোল। এবারের বালন ডি’অর জয়ের দৌড়েও তাই তাঁর নাম ওপরের সারিতে আছে; কিন্তু রিয়ালের সাদা জার্সি খুলে ব্রাজিলের হলুদ জার্সি পরতেই কী যেন হয় ভিনির।

প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আজ বেশ কয়েকবার বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র

ক্লাবে পারলেও জাতীয় দলে পারছেন না কেন—এমন প্রশ্নের ভিনির উত্তর, ‘এটা সম্পূর্ণ আলাদা। ইউরোপের খেলায় গতি বেশি থাকে। মাঠের এক পাশ থেকে আরেক পাশে বল অনেক দ্রুত আসে। (জাতীয় দলের হয়ে) ম্যাচ জিততে হলে আমাদের দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। আমরা এখন কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তা জানি। যেকোনো মূল্যে আমরা ব্রাজিলকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে চাই। আমাদের এখন বাড়ি ফিরে ভাবতে হবে পরবর্তী সময়ে কীভাবে ভালো খেলতে পারি। আমরা এখানে (প্যারাগুয়েতে) পয়েন্ট হারাতে আসিনি। এখন কঠিন সময় চলছে। সমালোচনা সইতেই হবে।’

ব্রাজিলের পরের ম্যাচ আগামী ১১ অক্টোবর চিলির বিপক্ষে।