গোলের পর রাসপাদোরির উদ্‌যাপন
গোলের পর রাসপাদোরির উদ্‌যাপন

চ্যাম্পিয়নস লিগ

নকআউটে অপ্রতিরোধ্য নাপোলি, ব্রুগার ইতিহাস

এ যেন অন্য এক নাপোলি। আক্রমণ, ফিনিশিং কিংবা ডিফেন্ডিং- সব জায়গাতেই দারুণ ছন্দে আছে ইতালিয়ান ক্লাবটি। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ না হারা নাপোলি চ্যাম্পিয়নস লিগে ৪ ম্যাচের প্রতিটিতে জিতে নিশ্চিত করেছে নকআউট পর্বের টিকিট।

লুসিয়ানো স্পালেত্তির জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া ক্লাবটি চ্যাম্পিয়নস লিগের চার ম্যাচে গোল করেছে ১৭টি। লিভারপুলের বিপক্ষে ৪-১ গোলে জিতে শুরু করা নাপোলি পরের ম্যাচে রেঞ্জার্সের বিপক্ষে জিতে ৩-০ গোলে। এরপর আয়াক্সকে তাদের মাঠেই নাপোলি উড়িয়ে দেয় ৬-১ গোলে। আজ নিজেদের মাঠ স্তাদিও ডিয়েগো আরামান্দো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে আয়াক্সের বিপক্ষে ফিরতি লেগে নাপোলি জিতেছে ৪-২ গোলে।

ঘরের মাঠে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা নাপোলির এগিয়ে যেতে সময় লাগে মাত্র ৪ মিনিট। আগের ম্যাচে আয়াক্সকে গোলবন্যায় ভাসানো ক্লাবটিকে এগিয়ে দেন হিরভিং লোজানো। সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে পিতর ইয়েলনস্কির অ্যাসিস্টে দারুণ এক হেডে দলকে এগিয়ে দেন লোজানো।

নাপোলির প্রথম দুই গোলদাতা লোজানো ও রাসপাদোরি

শুরুতেই গোল খেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আয়াক্স। দুই-একবার আক্রমণেও যায় তারা। তবে সেসব নাপোলি রক্ষণ ভাঙার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ৯ মিনিটে আয়াক্সের একটি আক্রমণে স্টিভেন বার্গউইনের শট ঝাঁপিয়ে পড়েন ঠেকান নাপোলি গোলরক্ষক অ্যালেক্স মেরেট।

একটু পর স্টিভেন বেরগুইসের দূরপাল্লার শট পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলে বেঁচে যায় ইতালিয়ান ক্লাবটি।

১৩ মিনিটে নাপোলি গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন মোহাম্মদ কুদুস। পাল্টা আক্রমণে দ্বিতীয় গোলে কাছাকাছি গিয়েও অল্পের জন্য হতাশ হতে হয় নাপোলিকে।

বারবার সুযোগ পেয়ে আয়াক্স ব্যর্থ হলেও ভুল করেনি নাপোলি। ১৬ মিনিটে খিচা কাভারস্কেইয়ার পাস থেকে গিয়াকোমো রাসপাদোরি দুর্দান্ত এক শটে লক্ষ্যভেদ নাপোলিকে দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে দেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি রাসপাদোরির চতুর্থ গোল।

নাপোলির গোল উদ্‌যাপন

ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট একেবারেই খারাপ খেলেনি আয়াক্স। তবে ফিনিশিংয়ে নিজেদের ব্যর্থতা এবং নাপোলির কার্যকারীতার কারণেই পিছিয়ে পড়তে হয় ডাচ ক্লাবটিকে।

পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে ফেরার অবশ্য চেষ্টা চালিয়ে যায় আয়াক্স। তবে ডি-বক্সের ভেতরে ভুলের পুনরাবৃত্তি ম্যাচে ফিরতে দেয়নি ডাচ ক্লাবটিকে।  নাপোলিও গতি না কমিয়ে চাপ ধরে রাখে প্রতিপক্ষের ওপর। তবে প্রথমার্ধে আর কোনো গোল পায়নি কোনো দল।

প্রথমার্ধের ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতার কারণে গোল পাওয়া না হলেও, দ্বিতীয় শুরুতেই সেই ভুল সংশোধন করে নেয় আয়াক্স। ডেভি ক্লাসেন দুর্দান্ত এক হেডে মেরেটকে পরাস্ত করে ব্যবধান ২-১ করেন ম্যাচের ৪৯ মিনিটে।

আয়াক্স ব্যবধান কমানোর পর ম্যাচ আরও উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। দুই দলই এ সময় গোলের খোঁজে আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয়। তবে আয়াক্সের চেয়ে নাপোলির আক্রমণগুলো ছিল বেশি বিপজ্জনক। তেমনই এক আক্রমণ থেকে ৫৯ মিনিটে পেনাল্টি আদায় করে স্বাগতিকেরা। তানগুই এনডম্বেলের ভলি ঠেকাতে গিয়ে ডি-বক্সের ভেতর বলে হাত লাগিয়ে বসেন জুরিয়েন টিম্বার। পেনাল্টি থেকে গোল করে নাপোলিকে এগিয়ে দেন দারুণ ছন্দে থাকা কাভারস্কেইয়া।

দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে আয়াক্স হাল ছাড়েনি। একইভাবে নাপোলিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ব্যবধান বাড়ানোর। কাছাকাছি গিয়ে দুই দলই সুযোগ নষ্ট করেছে। তবে ৮৩ মিনিটে পেনাল্টি গোলে রোমাঞ্চ জমানোর ইঙ্গিত দেয় বারগুইন। শেষ দিকে দুই দলের সামনেই এসেছিল গোলের হাতছানি। যার একটি কাজে লাগান নাপোলির ভিক্টির ওশিমেন। ৮৯ মিনিটে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে গোল করেন ওশিমেন। তাঁর এ গোলেই নিশ্চিত হয় নাপোলির ৪-২ গোলের জয়।

ইতিহাস গড়ে ব্রুগার উদ্‌যাপন

ক্লাব ব্রুগার ইতিহাস

স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুসের ছয়বার পরাজিত হয়ে সপ্তমবারের সফল হওয়ার গল্পটা আমরা সবাই জানি। তবে বেলজিয়ামের ক্লাব ব্রুগার লড়াইটা আরও একটু দীর্ঘ। আগের ৯ বারের চেষ্টায় চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বের দেয়াল টপকাতে ব্যর্থ হলেও, এবার ইতিহাস গড়েছে ক্লাবটি। দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে ব্রুগা।

ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে এবারের আসরে কোনো ম্যাচ হারেনি ব্রুগা। প্রথম তিন ম্যাচের তিনটিতে জেতা দলটি আজ গোলশূন্য ড্র করেছে আতলেতিকো মাদ্রিদের সঙ্গে। শেষ দিকে ১০ জনের দলে পরিণত হলেও অবশ্য হাল ছাড়েনি বেলজিয়ান ক্লাবটি। আতলেতিকোকে জয় বঞ্চিত করে ঠিকই পরের পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে তারা।