গ্যালারিতে বসুন্ধরা কিংসের বিশাল পতাকা। লাল জার্সি পরা দর্শকেরা সারাক্ষণ বাদ্য বাজনার তালে মাতিয়ে রেখেছিলেন গ্যালারি। উৎসবের মঞ্চ প্রস্তত করেই রেখেছিল বসুন্ধরা কিংস। আর সেই মঞ্চে আবারও নারী ফুটবল লিগের শিরোপা উৎসব করলেন সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকাররা।
কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে মেয়েদের ফুটবল লিগে আজ আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-০ গোলে হারায় বসুন্ধরা কিংস। ম্যাচে ১টি করে গোল করেছেন শিউলি আজিম ও শামসুন্নাহার।
লিগে আগের ১০ ম্যাচের সব কটিতেই জিতেছিল বসুন্ধরা কিংস ও আতাউর রহমান ভূঁইয়া স্পোর্টিং ক্লাব। সমান ৩০ পয়েন্ট নিয়ে আজ লিগের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুই দল। ম্যাচটি তাই এক অর্থে রূপ নেয় অলিখিত ফাইনালে। শেষ পর্যন্ত ‘ফাইনাল’ জিতেই ট্রফি উৎসব করল বসুন্ধরা কিংস। ১১ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগে অপরাজিত রইল দলটি। সব মিলিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস।
বসুন্ধরা কিংস মানেই যেন জাতীয় দলের মোড়কে একদল সেরা ফুটবলারের মেলা। যে ফুটবলাররা গত সেপ্টেম্বরে জিতেছে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। বসুন্ধরা কিংসের রক্ষণে খেলেছেন আঁখি খাতুন, মাসুরা পারভীন, শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার।
মাঝমাঠে মারিয়া মান্দা, সানজিদা আক্তার, মণিকা চাকমা। আর আক্রমণভাগের সেরা অস্ত্র সাবিনা খাতুন, সিরাত জাহান, কৃষ্ণা রানী তো ছিলই। কিন্তু সেই দলটাকেও দারুণভাবে চ্যালেঞ্জ জানান আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাবের মেয়েরা।
অবশ্য জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের পরীক্ষিত ফুটবলার উন্নতি খাতুন, আকলিমা খাতুন, সোহাগী কিসকু, আফঈদা খন্দকার, শাহেদা আক্তারদের নিয়ে গড়া আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ দল বেশ চ্যাঞ্জেলের মুখে ফেলে দেয় বসুন্ধরা কিংসকে।
৮০ মিনিট পর্যন্ত নিজেদের রক্ষণ দারুণভাবে জমাট রাখেন আতাউর রহমানের মেয়েরা। মূলত দলটির কোচ গোলাম রায়হানের কৌশলই ছিল রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠা।
সত্যিকার অর্থে বসুন্ধরা কিংসের সৈয়দ গোলাম জিলানীর আসল পরীক্ষা ছিল আজ। অবশ্য ডাগআউটে দেখা গেছে বসুন্ধরা কিংসের পুরুষ দলের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনকেও। মাঝেমধ্যে তিনিও পরামর্শ দিয়েছেন জিলানীকে। অথচ তুলনামূলক দুর্বল দলগুলোর বিপক্ষে হেসেখেলে জেতার পর আজ গোলমুখ খুলতে বেশ কষ্ট হয়েছে সাবিনাদের।
লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা (২৫টি) আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাবের আকলিমা খাতুন অবশ্য মাঝেমধ্যে বসুন্ধরা কিংসের বক্সে ঢুকে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য গোল পাননি। ম্যাচের ২৪ মিনিটে আকলিমা দুর্দান্তভাবে তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের ভেতরে ঢোকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংসের গোলকিপার রুপনা চাকমা ধরে ফেলেন।
ম্যাচের ৩৯ মিনিটে অবশ্য এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ এসেছিল বসুন্ধরা কিংসের। ডি–বক্সের বাইরে থেকে কৃষ্ণার দূরপাল্লার জোরালো শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে কৃষ্ণার বদলি হিসেবে কোচ গোলাম জিলানী মাঠে নামান ঋতুপর্ণা চাকমাকে।
এরপর ৭৪ মিনিটে সানজিদার বদলি হিসেবে নামেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। শামসুন্নাহার মাঠে নামার পর অবশ্য খেলায় আরও গতি বেড়েছে। বসুন্ধরা কিংসের গোলটি এই আক্রমণেরই ফল। ম্যাচের ৮২ মিনিটে প্রথমে গোল করে এগিয়ে নেন শিউলি আজিম।
সাবিনার ক্রস থেকে আতাউর রহমানের ডিফেন্ডার কোহাতি কিসকুর মাথায় লেগে গোলমুখে যায় বলটি। ওই বলই আলতো টোকায় জালে পাঠান শিউলি আজিম। আর ৮৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে শামসুন্নাহার সিনিয়র করেছেন ২-০। আর ম্যাচ শুরুর আগে পেলের মৃত্যুতে দুই দল এক মিনিট নীরবতা পালন করে।