সোহাগ-কাণ্ডে গঠিত বাফুফের তদন্ত কমিটি তিনজনের বিরুদ্ধে সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। তাঁরা হলেন ম্যানেজার অপারেশন মিজানুর রহমান, সহকারী প্রধান অর্থ কর্মকর্তা অনুপম সরকার ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন।
এর মধ্যে আবু ও মিজান বাফুফের চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন গত ২২ জুলাই। এ ছাড়া বাফুফের গ্রাসরুট ম্যানেজার হাসান মাহমুদ ও ম্যানেজার কম্পিটিশন জাবের বিন তাহের আনসারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছে কমিটি।
বাফুফের সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদের নেতৃত্ব আড়াই মাসের বেশি সময়ে ১০টি সভা শেষে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করে তদন্ত কমিটি। দীর্ঘ ২ মাস ২৩ দিন পর তদন্ত কমিটি বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছিল গত ৩০ জুলাই। অবশেষে ৬৫ দিন পর আজ বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রতিবেদনটি পেশ করেছেন কাজী সালাউদ্দিন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে বাফুফে দীর্ঘসূত্রতার পথেই হাঁটছে। বাফুফের আগামী সভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন।
প্রতিবেদনটি আজ সংবাদমাধ্যমকেও দিয়েছে বাফুফে। ৯ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে মন্তব্য বিভাগে বলা হয়েছে,‘ফিফার রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে টেন্ডার বা কোটেশন প্রক্রিয়ায় যেসব অনিয়ম রয়েছে, এবং তাদের মতে যেসব অবৈধ কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট টেন্ডারের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তার প্রধান মদদদাতা ও নির্দেশনাকারী হিসেবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর মাধ্যমেই চিহ্নিত মালামাল সরবরাহকারীদের কোটেশন আহ্বান, ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া এবং সর্বোপরি বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সেহেতু সব দায়দায়িত্ব তাঁর। এবং সমস্ত প্রক্রিয়ায় সে জড়িত। ফিফার প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরাও একমত।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এর বাইরেও আমাদের মন্তব্য হলো, একটা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন জড়িত থাকেন। যেমন ক্রয় কর্মকর্তা, হিসাব বিভাগ, স্টোর কর্মকর্তাসহ অন্যরা। তাদের দায়িত্বও অপরিসীম। তারা কোনোভাবে দায়িত্বের ব্যর্থতা থেকে রেহাই পেতে পারেন না। ম্যানেজার অপারেশনস মিজানুর রহমান, সহকারী হেড অব ফিন্যান্স অনুপম সরকার ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার আবু হোসেন নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তারা তাদের ভুল স্বীকার করেছে। তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদকের সমুদয় ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং আমাদের দেশে ক্ষুণ্ন হয়েছে। সে কারণে ম্যানেজার অপারেশন মিজানুর রহমান, সহকারী হেড অব ফাইন্যান্স অনুপম সরকার ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেনের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলো।’
মন্তব্য বিভাগের একেবারে শেষে লেখা হয়েছে, ‘...এবং গ্রাসরুট ম্যানেজার হাসান মাহমুদ, ম্যানেজার কম্পিটিশনস জাবের বিন তা বিন আনসারীকে তাদের দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি বিধায় তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’ শেষে বাফুফে ক্রয়–সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বাফুফের তখনকার সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে গত ১৪ এপ্রিল ২ বছর নিষিদ্ধ করে ফিফা। কিন্তু ফিফার দেওয়া ৫১ পাতার প্রতিবেদনে আরও নাম এলেও কারও বিরুদ্ধেই ফিফা ব্যবস্থা নেয়নি। বাফুফের তদন্ত কমিটি মনে করছে, অনিয়ম একা আবু নাঈম করেননি। অন্য ব্যক্তিদেরও দায় আছে। তাই সবাইকে নিজ কাজের দায় নিতে হবে। বিষয়টির ওপর জোর দিয়েই প্রতিবেদন দিয়েছে কমিটি।
আর্থিক বিষয়ে দুর্নীতি নয়, কেনাকাটায় প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কথাই তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ভুল বানান আর গায়েবি প্রতিষ্ঠান থেকে বল, ঘাস কাটার মেশিন কেনার গরমিলও কমিটি পেয়েছে। কমিটি মনে করছে, ফিফার অর্থায়নে যেসব কেনাকাটা হয়েছে, সেসব জিনিস বাফুফে পেয়েছে। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে এগুলো কেনা হয়নি। আর প্রক্রিয়া না মানার অর্থই হলো অনিয়ম-দুর্নীতি।
সোহাগ-কাণ্ডের পর বাফুফে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছিল ১৭ এপ্রিল। অবশ্য দুজন তখনই পদত্যাগ করেন। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত শুরু হতে লেগে যায় অনেক সময়। ২ মে আবার বাফুফের সভায় ঠিক হয়, কমিটি প্রথম সভার পর থেকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। কমিটির প্রথম সভা বসেছিল ৭ মে।