গতকাল রাতে ৩৪ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল জেসুস গোল করার পরই নির্ভার হওয়ার কথা আর্সেনাল সমর্থকদের! চেলসির বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচটা অন্তত তারা আর হারছে না।
কিন্তু কেন? ম্যাচের যে তখনো অর্ধেকের বেশি বাকি! আর্সেনাল সমর্থকদের নির্ভার করার জন্য ছিল মূলত একটি পরিসংখ্যান।
যে পরিসংখ্যান বলছে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে জেসুস গোল করেছেন এমন ম্যাচে তাঁর দল কখনো হারেনি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। জেসুস গোল করার পর ৩–১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে আর্সেনাল। তবে এই তালিকায় শুধু জেসুস একাই নন, তাঁর সঙ্গে আছেন জেমস মিলনার এবং দিয়েগো জোতাসহ আরও কয়েকজন।
গ্যাব্রিয়েল জেসুস
৫৫ ম্যাচে গোল— জয় ৫০, ড্র ৫
চারটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার জয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। পেপ গার্দিওলার অধীনে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ছুঁয়েছেন সাফল্যের শিখর। এখন আর্সেনালের হয়ে আরেকটি লিগ শিরোপা জয়ের জন্য লড়ছেন জেসুস। প্রিমিয়ার লিগ ক্যারিয়ারে করেছেন ৬৮ গোল। যেগুলো এসেছে তাঁর খেলা ৫৫ ম্যাচে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেসব ম্যাচে জেসুস গোল করেছেন, সেসব ম্যাচে হারেনি তাঁর দল। জেসুসের গোল করা ম্যাচের ৫০টিতেই জিতেছে তাঁর দল, ড্র হয়েছে ৫ ম্যাচে। এর আগে এ তালিকায় জেমস মিলনারের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে ছিলেন জেসুস। চেলসি ম্যাচ দিয়ে লিভারপুল তারকাকেও টপকে গেলেন জেসুস।
২০১৬–১৭ সালে ম্যান সিটিতে যোগ দেন জেসুস। সিটির হয়ে ১৫৯ ম্যাচ খেলেছেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, করেছেন ৫৮ গোল। তাঁর গোল করা কোনো ম্যাচে হারেনি সিটি। এরপর গত মৌসুমের দলবদলে সিটি ছেড়ে আর্সেনাল গেছেন জেসুস। গানারদের হয়ে এখন পর্যন্ত জেসুস গোল করেছেন ১০টি।
এখানেও সাফল্যের ধারা একই। যেসব ম্যাচে তিনি লক্ষ্যভেদ করেছেন, সেসব ম্যাচে হারেনি এমিরেটসের ক্লাবটি। এখন পর্যন্ত যেসব ম্যাচে জেসুস গোল করেছেন, সেসব ম্যাচে তাঁর দলের জয়ের হার ৯০.৯ শতাংশ। কোনো ম্যাচ না হেরে ২০–এর অধিক ম্যাচ যাঁরা খেলেছেন, তাঁদের মধ্যে জেসুসের চেয়ে ভালো জয়ের হার পেদ্রোর ৯৬.৩ শতাংশ এবং আন্তোনিও ভ্যালেন্সিয়ার ৯৫.৭ শতাংশ।
জেমস মিলনার
৫৪ ম্যাচে গোল—জয় ৪৩, ড্র ১১
বয়স ৩৭ পেরোলেও এখনো মাঠে নামলে ঠিকই নিজের ছাপ রাখতে পারেন জেমস মিলনার। লম্বা ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা এবং সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে গোল করা খেলোয়াড়দের তালিকাতেও আছে মিলনারের নাম। পাশাপাশি যেসব খেলোয়াড় প্রিমিয়ার লিগে গোল করলে দল হারে না, সে তালিকাতেও আছে মিলনারের নাম। লিডস ইউনাইটেড, নিউক্যাসল, অ্যাস্টন ভিলা, ম্যানচেস্টার সিটি এবং লিভারপুলের হয়ে মিলনার এখন পর্যন্ত গোল করেছেন ৫৪ ম্যাচে। এসব ম্যাচে কখনো হারেনি তাঁর দল। জেসুসের কাছে শীর্ষ স্থান হারানোর আগ পর্যন্ত এ তালিকার শীর্ষে ছিলেন মিলনারই।
দারিয়ুস ভাসেল
৪৬ ম্যাচে গোল—জয় ৩৬, ড্র ১০
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজের ২৬৫ ম্যাচে দারিয়ুস ভাসেল গোল করেছেন ৫২টি। তাঁর এই গোলগুলো এসেছে ৪৬ ম্যাচে। এর একটিও হারেনি তাঁর দল। ২০১১ সালের নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে লেস্টার সিটির হয়ে গোল করে হেরেছিলেন ভাসেল। সেটি ছিল চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ। প্রিমিয়ার লিগে তাঁর রেকর্ডটি অক্ষতই থেকে যায়। ক্যারিয়ারে অ্যাস্টন ভিলা, ম্যানচেস্টার সিটি এবং লেস্টার সিটির হয়ে খেলেছেন ভাসেল।
দিয়েগো জোতা
৩৬ ম্যাচে গোল—জয় ৩০, ড্র ৬
চোটে পড়ে লিভারপুলের হয়ে ২০২২–২৩ মৌসুমের বেশির ভাগ সময় মাঠের বাইরে কেটেছে দিয়েগো জোতার। মৌসুমের শেষ ভাগে অবশ্য চোট কাটিয়ে দলে ফিরেছেন এই পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। সবশেষ ৪ ম্যাচে করেছেন ৬ গোল। তবে এই গোলগুলোর মধ্য দিয়ে নিজের একটি রেকর্ডও অক্ষুণ্ন রেখেছেন জোতা। তাঁর গোল করা ম্যাচে হারেনি লিভারপুল। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচে গোল করেছেন জোতা; যার কোনোটিতেই হারেনি তাঁর দল। এ জন্য আফসোস করতেই পারে লিভারপুল। মৌসুমে আরও বেশি ম্যাচে খেললে হয়তো লিভারপুলের না হারা ম্যাচের সংখ্যাও আরও বেশি হতে পারত।
সলোমন কালু
৩২ ম্যাচে গোল—জয় ২৯, ড্র ৩
ইংলিশ ফুটবলে চেলসির হয়ে দারুণ সাফল্য আছে সলোমন কালুর। প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি জিতেছেন এফএ কাপ এবং লিগ কাপও। দখলে আছে ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা চ্যাম্পিয়নস লিগও। কালুকে আরও একটি কারণে মনে রেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। তাঁর গোল করা ম্যাচে কখনোই হারেনি দল। ৩২ ম্যাচে গোল করে ২৯টিতে পেয়েছেন জয়, আর ড্র ৩ ম্যাচে।
এই ৫ জন ছাড়াও তালিকায় আছেন অয়ভিদ লিওনহার্ডসন (২৮ ম্যাচে—২১ জয়, ড্র ৭), পেদ্রো (২৭ ম্যাচে—২৬ জয়, ১ ড্র), গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি (২৪ ম্যাচে—২০ জয়, ৪ ড্র), আন্তোনিও ভ্যালেন্সিয়া (২৩ ম্যাচে—২২ জয়, ১ ড্র), গিনি ভিনালদাম (২৩ ম্যাচে—১৯ জয়, ৪ ড্র), মার্কোস আলনসো (২৩ ম্যাচে—১৭ জয়, ৬ ড্র) এবং সিমাস কোলম্যান (২২ ম্যাচে—১৭ জয়, ৫ ড্র)।