কোয়ার্টার ফাইনাল আগেই নিশ্চিত হয়েছে দুই দলের। কিন্তু মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং ঢাকা আবাহনী লিমিটেড যখন মুখোমুখি হয়, তখন মর্যাদার ব্যাপারটাও থাকে। গুরুত্বহীন ম্যাচেও কেউ কারও কাছে হারতে চায় না। গোপালগঞ্জে শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে আজ ফেডারেশন কাপে গ্রুপ ‘বি’–এর শেষ ম্যাচটাও ছিল তেমনই। এই লড়াইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়েই শেষ আটে উঠল মোহামেডান।
গত বছর মে মাসে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে কুমিল্লায় মুখোমুখি হয়েছিল আবাহনী-মোহামেডান। সে ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ৪-৪ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে জিতে ১৪ বছর পর কাপ জিতে নিয়েছিল মোহামেডান। তারপর দুই দর্শকপ্রিয় ক্লাবের এটিই ছিল প্রথম লড়াই। তবে সেই ম্যাচের মতো আজও প্রথমে গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল আবাহনী।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দুই গোল করে মোহামেডান। ২০১৯ প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীকে ৪-০ গোলে হারানোর পর এই প্রথম চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে জয় পেল মোহামেডান। একটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভালো, ২০১৯ সালে মোহামেডান আবাহনীকে হারিয়েছিল ১৪৯৬ দিন পর। তার আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২১ মে আবাহনীকে হারিয়েছিল মোহামেডান।
আবাহনী ৩৯ মিনিটে ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। গোলটি হয়েছে মোহামেডান ডিফেন্ডার হাসান মুরাদের ভুলে। তাঁর পা থেকে বল কেড়ে আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ওয়াশিংটন ক্রস ফেলেন বক্সে। বলটি ধরে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট। প্রথমার্ধে একেবারে শেষ দিকে আবাহনীর আরেক ব্রাজিলিয়ান জোনাথন ফার্নান্দেজের ভুলে বল পেয়ে বক্সের একটু বাইরে থেকে দারুণ একটি শট নিয়েছিলেন মোহামেডানের উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মোজাফফরভ। কিন্তু তাঁর শটটি ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন গোলকিপার পাপ্পু হোসেন।
দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা তেড়েফুঁড়েই আবাহনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মোহামেডান। ফলও পেয়ে যায় দ্রুতই। ৫১ মিনিটে মোজাফফরভ দারুণ এক থ্রু বাড়ান আবাহনীর বক্সে। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল পায়ে নিয়ে এক টোকাতেই জালে জড়ান মোহামেডানের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ইমানুয়েল সানডে।
চার মিনিটের ব্যবধানে আবাহনী সমর্থকদের হতবাক করে মোহামেডান এগিয়ে যায় ২-১ গোলে। এই গোলটিও ইমানুয়েল সানডের। তবে কৃতিত্ব দিতে হবে হাসান মুরাদকেও। ডান প্রান্ত থেকে তাঁর লম্বা থ্রো আবাহনীর গোলমুখে এসে পড়লে তা থেকে আইভরি কোস্টের ফরোয়ার্ড দোসো সিদিকের ব্যাকহেড আবাহনীর প্রায় গোলেই ঢুকে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সেখানে গোলের আনুষ্ঠানিকতাটুকু সেরেছেন ইমানুয়েল সানডে।
স্কোরলাইন ২-১ হয়ে যাওয়ার পর বাকিটা সময় মোহামেডানই ভালো খেলেছে। মোজাফফরভ, আলমগীর কবির রানা, আরিফ হোসেন, মাহাবুব আলমরা পাত্তাই দিতে চাননি আবাহনীকে। তাদের বল প্লেতে মধ্যমাঠে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজ। এই সুযোগে আবাহনীর সীমানায় বেশ কয়েকবারই আক্রমণে উঠেছে মোহামেডান। ৬৯ মিনিটে আবাহনীর গোলকিপার পাপ্পু হোসেনের ভুলে গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন শাহরিয়ার ইমন।
আবাহনী গোলের সুযোগ পেয়েছে ৭৮ মিনিটে। ওয়াশিংটনের ক্রস গোলে ঢোকার মুখে দারুণভাবে তা ফিরিয়ে দেন মোহামেডানের গোলকিপার সাকিব আল হাসান।
পিছিয়ে পড়ার পর আবাহনীর হতোদ্যম অবস্থাটা কাটেনি ম্যাচের শেষ পর্যন্ত। সেভাবে মোহামেডানের রক্ষণকে বেকায়দাতেও ফেলতে পারেনি তারা। তবে মোহামেডানের রক্ষণভাগে ইমানুয়েল টনির নেতৃত্বে জাহিদ হোসেন ও হাসান মুরাদরা আবাহনীর ফরোয়ার্ডদের কাছ থেকে বল কেড়েছেন নিয়মিতই।
শেষ দিকে আবাহনীর আর্জেন্টাইন কোচ ডিয়েগো ক্রুসিয়ানি জোনাথন ফার্নান্দেজের জায়গায় রবিউল হাসান আর পাপন সিংয়ের জায়গায় নাবীব নেওয়াজকে নামিয়েও মোহামেডানকে বিচলিত করতে পারেননি। কৌশলের লড়াইয়ে তিনি বড় ব্যবধানে হেরেছেন আলফাজ আহমেদের কাছে।