ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ফুটমব তাঁর নামের পাশের তারকাখচিত চিহ্ন দিয়ে ১০–এ সর্বোচ্চ ৮.৮ রেটিং পয়েন্ট দিয়ে রেখেছে। তাঁকে এভাবে মূল্যায়ন না করেও তো উপায় নেই!
পুরো ৯০ মিনিট মাঠে চষে বেড়িয়েছেন, বলে স্পর্শ করেছেন ৭৫ বার। মানে, গড়ে প্রতি ১ মিনিট ১২ সেকেন্ড পর পর তাঁর কাছে বল এসেছে। অ্যাটাকিং থার্ডে বল পাঠিয়েছেন ৬ বার, প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়েছেন ৯ বার, সফল ড্রিবল করেছেন ৩ বার, ট্যাকল করেছেন ৬ বার, ফ্রি কিক আদায় করেছেন ৬ বার আর ডুয়েলে জিতেছেন ১৩ বার।
তবে জুড বেলিংহাম সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছেন তাঁর দুর্দান্ত এক গোলে; যেটা আবার রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে অভিষেক ম্যাচেই। বেলিংহামের আগে রিয়ালকে এগিয়ে দেন রদ্রিগো। তাতে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে তাদের মাঠে ২–০ ব্যবধানে হারিয়ে লা লিগায় শুভ সূচনা হয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দলের।
৩৬ মিনিটে ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবার নেওয়া কর্নার কিক থেকে বল পান ডি বক্সে অরক্ষিত থাকা বেলিংহাম। তাঁর ডান পায়ের অসাধারণ শটে বল টার্ফে ড্রপ খেয়ে লাফিয়ে উঠে বাঁ পাশের কোণ দিয়ে আশ্রয় নেয় জালে। বিলবাও গোলরক্ষক উনাই সিমোনের কিছু করার ছিল না। ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় বলেই পড়েছিলেন। বেলিংহামের গোলটা মনে করিয়ে দিয়েছে জিনেদিন জিদানকে। রিয়ালের ফরাসি কিংবদন্তি জিদানও একবার ঠিক এভাবেই গোল করেছিলেন।
তাঁর এই গোলের পর তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে দাবি করছেন, জিদানের যোগ্য উত্তরাধিকারী পেয়ে গেছে রিয়াল। পেয়েছেই বটে। নয়তো কি আর জিদানের মতো বেলিংহামও ৫ নম্বর জার্সিটাই বেছে নেন! অভিষেকে নজরকাড়া পারফরম্যান্সে ইংলিশ মিডফিল্ডারও যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন তাঁকে কিনতে ১ হাজার ২১৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছে রিয়াল।
বিলবাওয়ের মাঠে বেলিংহামের সেই গোলটার আগেই আনন্দের উপলক্ষ্য ধরা দিয়েছে রিয়ালকে। ২৮ মিনিটে আরেক ডিফেন্ডার দানি কারভাহালের পাস থেকে রিয়ালকে এগিয়ে দিয়েছেন রদ্রিগো।
করিম বেনজেমা চলে যাওয়ার পর ‘নাম্বার নাইন’–এর অভাব পূরণ করতে বড় কোনো তারকাকে কিনেনি রিয়াল। এসপানিওল থেকে ধারে নিয়ে এসেছে হোসেলুকে। তবে তাঁকে শুরুর একাদশে রাখেননি আনচেলত্তি। বিরতির আগে মাঠে নামাননি অভিজ্ঞ দুই মিডফিল্ডার টনি ক্রুস ও লুকা মদরিচকেও।
৪–১–২–১–২! রিয়ালের আজকের ফরমেশনটাই ছিল চমকে দেওয়ার মতো। এই ছকে আনচেলত্তি দলকে শেষ কবে খেলিয়েছেন, সেটা মনে করাও এই মুহূর্তে দুঃসাধ্য ব্যাপার। আক্রমণভাগে ছিলেন দুই ব্রাজিলিয়ান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আর রদ্রিগো। তাঁদের ঠিক পেছনে মাঝ বরাবর অভিষিক্ত বেলিংহাম। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে অরিলিয়েঁ চুয়ামেনিকে রেখে তাঁর দুই পাশে খেলিয়েছেন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা ও ফেদেরিকো ভালভের্দেকে। আর রক্ষণ সামলেছেন কারভাহাল, আলাবা, এদের মিলিতাও এবং আরেক অভিষিক্ত ফান্সিসকো গার্সিয়া।
মুহুর্মুহু আক্রমণে প্রথমার্ধটা নিজেদের করেও নিলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ধাক্কা খায় রিয়াল। চোটে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন মিলিতাও। তাঁর জায়গায় মাঠে নামেন আন্তোনিও রুডিগার। এরপর রিয়াল কিছুটা গা বাঁচিয়ে খেলতে থাকে। সেই সুযোগে লস ব্লাঙ্কোদের রক্ষণভাগকে বেশ কয়েকবার পরীক্ষায় ফেলে বিলবাও। তবে গোল পাওয়া হয়নি।
মিলিতাওয়ের কান্না দেখে মনে হয়েছে বড়সড় চোটে পড়েছেন। সেটা হলে হয়তো লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যাবেন। এর আগে অনুশীলন করতে গিয়ে বাঁ পায়ের হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় রিয়ালের প্রধান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার। স্কোয়াডে অবশিষ্ট থাকা একমাত্র গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিনকে দিয়েই আপাতত কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন আনচেলত্তি। দল জিতলেও চোটের তালিকা লম্বা হতে থাকায় আনচেলত্তির কপালে যে চিন্তার ভাঁজ পড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।