বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট আর্জেন্টিনা মাঠে নামছে আজ। প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব তেমন কোনো বাধাই নয় লিওনেল মেসিদের সামনে। তবে অঘটন ঘটবে না, জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয় কারও পক্ষেই। মধ্যপ্রাচ্যে খেলা, সেখানকার আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা মিলিয়ে অঘটনের সম্ভাবনা বলব ৫-৭ ভাগ, ১২-১৩ ভাগ ড্র। অবশ্য এসব মাথাতেই আনছি না আমি। আমার ধারণা, আজ একপেশে ম্যাচই হবে। আর্জেন্টিনার জয়ের সম্ভাবনা শতকরা ৮০ ভাগ।
নীল-সাদার কোচ লিওনেল স্কালোনি পরিপূর্ণ একটা দল নিয়ে কাতার গেছেন। রক্ষণ জমাট, মাঝমাঠ ভালো, তবে আক্রমণভাগ বেশি ভালো। আর্জেন্টিনা দলটা নির্ভরই করে আক্রমণের ওপর। সেটা এই কারণে যে আক্রমণে তাদের ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে। আনহেল দি মারিয়া ফিট হয়ে গেছেন। মহাতারকা লিওনেল মেসি তো আছেনই। তাঁরা ছোট দলগুলোকে প্লেটে সাজানো খাবার বানাতে সিদ্ধহস্ত।
আর্জেন্টিনার আজ ভিন্ন কোনো ছক বা ভিন্ন পরিকল্পনা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। বিশেষ কিছু করার চিন্তা থাকে যখন প্রতিপক্ষ সমান শক্তির দল বা বেশি শক্তিশালী। কিন্তু সৌদি আরব তেমন দল নয় যে বাড়তি কিছু ভাবতে হবে। আর্জেন্টিনার কোচ তাঁর ছেলেদের হয়তো বলবেন, ‘তোমরা মাঠে যাও, স্বাভাবিক খেলাটা খেলো এবং উপভোগ করো। স্বাভাবিক ফুটবল খেললেই তোমরা জিতবে।’
তাই বলে হালকা মেজাজে থাকবে না আর্জেন্টিনা। এটা বিশ্বকাপের ম্যাচ, যেখানে কিনা আর্জেন্টাইনরা ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ শিরোপাখরা দূর করতে মুখিয়ে আছে। কাজেই খুব গুরুত্ব দিয়েই ম্যাচটা খেলবে আর্জেন্টিনা। তারা চাইবে না পচা শামুকে পা কাটুক। সুতরাং বাড়তি সতর্কতা থাকবেই।
দুবারের বিশ্বসেরাদের সমস্যার মধ্যেও পড়তে হতে পারে। প্রথমত, কাতার বিশ্বকাপে এটি তাদের প্রথম ম্যাচ। সৌদি আরব আর কাতারের আবহাওয়া প্রায় একই। কাতারে খেলতে তাই কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় সৌদি আরবের। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা এমন পরিবেশে খেলে অভ্যস্ত নয়। ইউরোপ এবং নিজ দেশে খেলেন তাঁরা। ফলে কাতারের আবহাওয়া তাঁদের শরীরের ওপর বাড়তি চাপ ফেলতে পারে।
আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ যেমন ক্ষুরধার, উল্টো পিঠে খেলোয়াড়দের বয়সও বেশি। মেসি ৩৫, দি মারিয়া ৩৪। এই বয়সে মধ্যপ্রাচ্যে এসে কীভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেন মেসিরা, সেটা হবে দেখার। একটা ব্যস্ত ও কঠিন মৌসুম খেলে এখন খেলোয়াড়েরা কী ধরনের শারীরিক অবস্থায় আছেন, সেটা এক-দুটি ম্যাচ না দেখলে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। প্রথম ম্যাচে দেখলে বোঝা যাবে আসলে আর্জেন্টিনা দল কতটা প্রস্তুত। বিশেষ করে মেসির অবস্থাও বোঝা যাবে।
তবে বয়স হোক আর যা-ই হোক, মেসি পরিপূর্ণ এক পেশাদার খেলোয়াড়। নিজের সেরাটাই দেবেন বলে আমার বিশ্বাস। সৌদি আরব বলে রয়েসয়ে খেলবেন না। ভাববেন না সামনে বড় না ছোট দল। তিনি জানেন কী করতে হবে। আর মেসি জ্বলে উঠলে কী হতে পারে, বলা বাহুল্য। তাই সৌদি আরবের সামনে আজ বিরাট চ্যালেঞ্জই হাজির হচ্ছে।
প্রবল প্রতিপক্ষের সামনে সৌদি আরবের কোচ কীভাবে তাঁর দলকে খেলাবেন, জানি না। বাইরে থেকে আমার মনে হয়, ‘ম্যান টু ম্যান’ না খেলে সৌদি আরব ‘জোনাল ফুটবল’ খেলার চেষ্টা করে আর্জেন্টিনাকে যতক্ষণ সম্ভব আটকে রাখতে চাইবে। ‘ম্যান টু ম্যান’ রাখতে পারবে না, কারণ মেসিকে আটকালে দি মারিয়া বের হয়ে যাবেন বা অন্য কেউ। আর্জেন্টিনা দলে বিশ্বমানের খেলোয়াড় এত বেশি যে তাঁদের আটকানো কঠিন। এই খেলোয়াড়েরা নিজেদের মেলে ধরলে সৌদি আরবের সাধ্য কী আর্জেন্টিনাকে রোখার!
তবে হ্যাঁ, সৌদি আরব যদি প্রথম ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে যেতে না দেয়, সেটা তাদের উজ্জীবিত করবে। তারা তখন চাপে ফেলতে পারে প্রবল প্রতিপক্ষকেও। সেটা যদি হয়ও, দিন শেষে আমি মনে করি, আর্জেন্টিনা ঠিকই বেরিয়ে যাবে।