ভুটানকে হারানোর পর মেয়েদের উদ্‌যাপন। হ্যাটট্রিক করা শামসুন্নাহার আনন্দের মধ্যমণি (২০নম্বর জার্সি)
ভুটানকে হারানোর পর মেয়েদের উদ্‌যাপন। হ্যাটট্রিক করা শামসুন্নাহার আনন্দের মধ্যমণি (২০নম্বর জার্সি)

শামসুন্নাহারের হ্যাটট্রিক, ভুটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

ম্যাচ শেষে জাতীয় পতাকা হাতে গ্যালারিতে দর্শকদের যতটা উন্মাদনা, মাঠে ফুটবলারদের মধ্যে সেটার ছিটেফোঁটাও ছিল না। কে বলবে একটু আগেই ভুটানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছেন শামসুন্নাহাররা!

সাফের টুর্নামেন্ট মানেই যেন ফাইনালে বাংলাদেশ। গত ছয় মাসে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটি আসরেই বাংলাদেশ উঠল ফাইনালে। তিনবারই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাফে সাবিনা খাতুনেরা হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন। এরপর নভেম্বরে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে চ্যাম্পিয়ন হয় নেপাল। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভুটানকে হারিয়েছে বড় ব্যবধানে। এর আগে দিনের প্রথম ম্যাচে ফেবারিট ভারতকে ৩-১ গোলে হারায় নেপাল।

দুর্দান্ত খেলে হ্যাটট্রিক তুলে নেন শামসুন্নাহার

আর এতেই টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ-নেপাল দ্বৈরথ দেখা যাবে সাফের ফাইনালে। টুর্নামেন্টে ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ২ জয় ও ১ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে নেপাল। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল।

পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ অধিনায়ক শামসুন্নাহার আজও ছিলেন দুর্বার। ভুটানের বিপক্ষে করেছেন হ্যাটট্রিক। টুর্নামেন্টে ৪ গোল করে নেপালের আমিশা কারকির সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ের লড়াইয়ে আছেন শামসুন্নাহার। এই ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন আকলিমা খাতুন। এই দুজন ফরোয়ার্ডের গতির কাছেই আসলে হেরে গেছে ভুটান।

আজ একাদশে দুটি পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী। সোহাগী কিসকুর বদলি একাদশে ঢোকেন আইরিন খাতুন। মাহফুজা খাতুনের বদলে উন্নতি খাতুন।

গোলের পর শামসুন্নাহারকে টেনে তুলছেন সতীর্থরা

টুর্নামেন্টে আগের দুই ম্যাচে ১৬ গোল খাওয়া ভুটানকে অনুমিতভাবেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে কত গোল দেয় বাংলাদেশ, সেটাই ছিল দেখার।

প্রথম গোলের জন্য অবশ্য ২১ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের। এর আগে যতবারই বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছেন শামসুন্নাহাররা, ততবারই অফ সাইডের ফাঁদে পড়েছেন।

ভুটানের রক্ষণে বারবার আতঙ্ক ছড়িয়েছেন বাংলাদেশের ত্রিফলা-শামসুন্নাহার, আকলিমা ও শাহেদা। এই ত্রয়ীর আক্রমণে সারাক্ষণ দিশেহারা ছিল ভুটানের ডিফেন্ডাররা।

ম্যাচের ২২ মিনিটে শামসুন্নাহারের ক্রস, দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে আকলিমা খাতুন প্লেসিংয়ে করেন ১-০। পরের মিনিটেই বক্সের মধ্যে ঢোকা শামসুন্নাহারকে ফেলে দেন ভুটানের ডিফেন্ডার তাশি ওয়াঙমো। ভারতের রেফারি কুসুম মানদি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কিন্তু পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি শাহেদা! দুর্বল শটটি গড়িয়ে গড়িয়ে বারের পাশ দিয়ে বাইরে যায়।

ফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতোয়ারা বাংলাদেশের মেয়েরা

ম্যাচের ২৯ মিনিটে শামসুন্নাহার ঝলকের শুরু। উন্নতির কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁয়ে শামসুন্নাহার করেন ২-০। মাঠে শাহেদার সঙ্গে শামসুন্নাহারের রসায়ন ছিল দুর্দান্ত। ৫৩ মিনিটে বাংলাদেশের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় গোল করেন শামসুন্নাহার। শাহেদার লং বল ধরে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শট নেন এই ফরোয়ার্ড। বলটি সাইড পোস্টে লেগে দিক বদলে ঢোকে জালে।

শাহেদার ডিফেন্স চেরা পাস ধরে আকলিমা বক্সে ঢোকেন ৬০ মিনিটে। ভুটানের গোলরক্ষক সোনাম পেলদেন জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এলে আকলিমা করেন ম্যাচের চতুর্থ গোল। পরের মিনিটে একইভাবে জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সোনাম, সুযোগটা কাজে লাগিয়ে হ্যাটট্রিক করেন শামসুন্নাহার (৫-০)। পুরো ম্যাচে গোলপোস্টে বলতে গেলে অলস দাঁড়িয়ে ছিলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। ৬৯ মিনিটে রুপনা চাকমার বদলে কোচ মাঠে নামান সাথী বিশ্বাসকে। বাকি সময়ে অবশ্য আরও গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ফিনিশিংয়ের দুর্বলতায় আর জয়ের ব্যবধান বাড়েনি।

বাংলাদেশ দল: রুপনা চাকমা (সাথী বিশ্বাস), শামসুন্নাহার, নাসরিন আক্তার, সুরমা জান্নাত, আফঈদা খন্দকার, স্বপ্না রানী (রুপা খাতুন), উন্নতি খাতুন, শাহেদা আক্তার, আকলিমা খাতুন আইরিন খাতুন, ইতি খাতুন।