রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে স্মরণীয় অভিষেক হয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পের। উয়েফা সুপার কাপে গতকাল রাতে আতালান্তার বিপক্ষে নিজে গোল পেয়েছেন, ম্যাচ শেষে ট্রফিও উঁচিয়ে ধরেছেন।
রিয়ালের হয়ে এমবাপ্পে নিজের প্রথম ম্যাচটি খেলার মধ্য দিয়ে দলটির আক্রমণভাগে ‘ত্রিফলা’ জুটিও ফিরিয়ে আনলেন। বেলিংহাম–এমবাপ্পে–ভিনিসিয়ুসকে নিয়ে এই ত্রয়ীকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘বিএমভি’। তবে ‘বিএমভি’ জুটিকে বিখ্যাত ‘বিবিসি’ ত্রয়ীর সঙ্গে তুলনায় আনতে চান না রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস রিয়ালে যোগ দেন ২০১৮ সালে। ইংল্যান্ডের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জুড বেলিংহামের স্প্যানিশ ক্লাবটিতে এটি দ্বিতীয় মৌসুম চলছে। এমবাপ্পে একেবারে নতুন হলেও দলীয় কৌশল ও খেলার ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি। কাল তিনজনের বোঝাপড়া ছিল দুর্দান্ত।
যদিও এমবাপ্পে কোন পজিশনে খেলবেন, তা নিয়ে এর আগে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে স্বীকৃত রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি আগেই সমাধান বের করে রেখেছিলেন। ডান উইংয়ে রদ্রিগো ও বাঁ উইংয়ে ভিনিসিয়ুসকে রেখে ৯ নম্বর জার্সির এমবাপ্পেকে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলান আনচেলত্তি। তাতে একটু পেছনে খেলতে হয়েছে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জুড বেলিংহামকে। ভিনিসিয়ুস প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়লে কখনো কখনো বাঁ উইংয়ে চলে এসেছেন এমবাপ্পে।
নতুন গড়ে ওঠা ‘বিএমভি’ ত্রয়ী তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘বিবিসি’ ত্রিফলাকে। রিয়ালে আনচেলত্তির প্রথম অধ্যায়ে (২০১৩ থেকে ২০১৫) করিম বেনজেমা, গ্যারেথ বেল ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো মিলে গড়ে তুলেছিলেন ভয়ংকর আক্রমণভাগ। রিয়ালের হয়ে তিনজন একসঙ্গে করেন ৪০০–এর বেশি গোল। জেতেন সম্ভাব্য সব শিরোপা। এর মধ্যে ২০১৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে রিয়াল এক যুগের আক্ষেপ ঘোচায় আনচেলত্তিরই অধীনে।
‘বিবিসি’ ত্রয়ীকে নিজ দলের একাদশে পাওয়া কতটা সৌভাগ্যের ব্যাপার—এ নিয়ে আনচেলত্তি একবার বলেছিলেন, ‘যত দিন ওরা ফিট থাকবে, একাদশে ওদের উপস্থিতি অবিনিময়যোগ্য। কারণ, ওরা দলকে অনেক কিছু দিয়েছে।’ কাল আতালান্তাকে ২–০ গোলে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপ জেতার পর বর্তমান দলকেও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন আনচেলত্তি। তবে ‘বিবিসি’ ত্রিফলার সঙ্গে ‘বিএমভি’ ত্রয়ীকে তুলনায় আনতে চান না তিনি।
ম্যাচ শেষে মুভিস্টারকে ৬৫ বছর বয়সী এই ইতালিয়ান কোচ বলেছেন, ‘আমার সহকারীদের (কোচিং স্টাফ) সঙ্গে গতকাল (পরশু) এ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই দলকে ২০১৪ সালের দলের সঙ্গে তুলনা করা খুব কঠিন। এটা খুব জটিল কাজ। বেল, বেনজেমা ও রোনালদোদের দলটা চমৎকার ছিল এবং ওই দলটা ছিল অন্য দলগুলোর চেয়ে আলাদা। ওই ফরোয়ার্ড লাইন আমার চোখে একেবারেই ব্যতিক্রমী। ১০ বছর পরেও এই ক্লাবের দলে গুণগত মানের কোনো পরিবর্তন আসেনি।’
আনচেলত্তি মনে করেন, দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অভিষেক ম্যাচে ভালো খেলেছেন এমবাপ্পে, ‘এমবাপ্পের অনেক গোল করার সামর্থ্য আছে। আমাদের দেখতে হবে সে এই ভারসাম্য (ধারাবাহিকতা) ধরে রাখতে পারে কি না।’
উয়েফা সুপার কাপ জয়ের মধ্য দিয়ে বিশাল এক কীর্তি গড়েছেন আনচেলত্তি। রিয়ালের হয়ে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতা কোচ মিগুয়েল মুনোজকে ছুঁয়ে ফেলেছেন ‘ডন কার্লো’। লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে মুনোজ–আনচেলত্তি দুজনেরই শিরোপা এখন ১৪টি করে। তবে প্রয়াত কিংবদন্তি মুনোজের ১৪ ট্রফি জিততে সময় লেগেছিল ১২ মৌসুম, আনচেলত্তির লাগল মাত্র ৬ মৌসুম।
নিজের অর্জন নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অনেক কষ্টের পর এই ম্যাচগুলো জেতা, বিশেষ রাতগুলোর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকা আমার জন্য গর্বের ও সম্মানের।’