সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? এ নিয়ে তো অন্তহীন এক বিতর্ক আছেই। সেই বিতর্কে অবধারিতভাবে যে দুজন আর্জেন্টাইনের নাম আসে, তাঁদের নিয়েও একটা বিতর্ক আছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও লিওনেল মেসি, এ দুজনের মধ্যে আসলে কে সেরা? ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত ম্যারাডোনার পক্ষে যাঁদের ভোট ছিল, তাঁদের সবচেয়ে বড় যুক্তিই ছিল, মেসি তো আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি। কাতার বিশ্বকাপ জিতে মেসি সেই বাক্সেও টিক দিয়েছেন। এখন তাহলে কে সেরা?
প্রশ্নটার উত্তর যদি লিভারপুল কিংবদন্তি ইয়ান রাশের কাছ থেকে নেন, তাহলে এখনো ম্যারাডোনার নামটাই শুনবেন। প্রথম আলোর সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাশ আজ মেসি না ম্যারাডোনা—এই প্রশ্নে সরাসরিই বলেছেন, ‘আমার কাছে, ম্যারাডোনা।’
রাশ নিজেও ম্যারাডোনার সময়ের খেলোয়াড়। ম্যারাডোনা যখন নাপোলির হয়ে ইতালি কাঁপাচ্ছেন, রাশও তখন লিভারপুলের হয়ে ইংলিশ ফুটবল মাতাচ্ছেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ টানা ছয় বছর লিভারপুলের হয়ে প্রতি মৌসুমে ২০-এর বেশি গোলের রেকর্ড তাঁর। ১৯৯৬ সালে যখন লিভারপুল ছাড়েন, তখন তাঁর নামের পাশে ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৩৪৬ গোল। যে রেকর্ড আজও অক্ষত। আসলে শুধু অক্ষত নয়, এর ধারেকাছেও কেউ যেতে পারেননি আজ পর্যন্ত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রজার হান্টের ২৮৫ গোল। দুই দফায় লিভারপুলে ১৬ বছরের ক্যারিয়ারের মাঝে এক বছর খেলেছেন জুভেন্টাসে। এবং তখন বেশ কাছ থেকে দেখেছেন ম্যারাডোনাকে। সেটা অবশ্য প্রতিপক্ষ হিসেবে।
তবে রাশের সুযোগ এসেছিল ম্যারাডোনার সতীর্থ হওয়ার। সাক্ষাৎকারে সেই গল্পটাও শুনিয়েছেন লিভারপুল কিংবদন্তি, ‘১৯৮৪ সালে সে (ম্যারাডোনা) নাপোলিতে গেল। আমি তখন লিভারপুলে। নাপোলি আমাকেও নিতে চেয়েছিল। আমারও ম্যারাডোনার সঙ্গে নাপোলিতে খেলতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু লিভারপুল না বলে দিল। ফলে ওরা ব্রাজিল থেকে কারেকাকে নিয়ে এল। নাপোলি লিগ জিতল।’
নাপোলির সেই লিগ জেতার গল্প করতে গিয়েই রাশ টেনে এনেছেন ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্বের প্রসঙ্গ, ‘আসলে ম্যারাডোনাই নাপোলিকে লিগ জিতিয়েছিল। তারপর ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ। আমি মনে করি, নাপোলিকে ওই লিগ, তারপর আর্জেন্টিনা ওই বিশ্বকাপ, এটা খুব বেশি মানুষের পক্ষে জেতানো সম্ভব না।’
খুব স্বাভাবিকভাবেই এরপর প্রশ্ন আসে, তাহলে মেসি না ম্যারাডোনা, তাঁর চোখে সেরা কে? সেখানে ম্যারাডোনার নামটা বলে রাশ কারণও ব্যাখ্যা করেছেন, ‘দেখুন, মেসি মহাতারকা। কিন্তু ম্যারাডোনাকে সব সময় লাথি খেয়ে খেয়ে খেলতে হয়েছে। আমি তারপরেও তাকে অবিশ্বাস্য সব জিনিস করতে দেখেছি মাঠে। হ্যাঁ, মেসিও এটা করতে পারে। কিন্তু ম্যারাডোনাকে তো ইচ্ছেমতো লাথি মারা হয়েছে। মেসিকে তো কেউ লাথি মারে না। আমার মনে হয়, আসলে, এটা যুগের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তারা দুজনেই অসাধারণ। মেসিও এখন আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে। তবে ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় সে স্পেনে খেলেছে। ওকে প্রিমিয়ার লিগের কোনো দলের হয়ে খেলতে দেখলে ভালো লাগত।’
এখন লিভারপুলের দূত হিসেবে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো ইয়ান রাশ এক দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন লিভারপুলের স্পনসর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উদ্যোগে।
* পুরো সাক্ষাৎকার আগামীকাল প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকা ও অনলাইনে