আর্জেন্টিনায় ফিফা অ–২০ বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে ২০ মে
আর্জেন্টিনায় ফিফা অ–২০ বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে ২০ মে

আর্জেন্টিনায় আগামীর তারকাদের বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ

কাতারে ফিফা বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। এবার আর্জেন্টিনায় শুরু হচ্ছে আগামীর তারকা খোঁজার বিশ্বকাপ, যার অফিশিয়াল নাম ‘ফিফা অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপ।’

সিনিয়র মেনস ও সিনিয়র উইমেন্স ফুটবলের পর এটিই ফিফা আয়োজিত সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ও দর্শকপ্রিয় প্রতিযোগিতা। ১৯৭৭ সালে চালু হওয়া অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপের এবার ২৩তম আসর। চলবে ২০ মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত।

এই টুর্নামেন্টের যে তথ্যগুলো না জানলেই নয়, সেসবেই চোখ বোলানো যাক।

কবে শুরু, কবে শেষ?

শুরু হচ্ছে ২০ মে, বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়। সান্তিয়াগো দেল এস্তেরোতে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড–গুয়েতেমালা। শিরোপানির্ধারণী ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১১ জুন রাত ৩টায়, লা প্লাতার ডিয়েগো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে।

কতটি দল অংশ নিচ্ছে?

ছয় মহাদেশের ২৪টি দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫টি ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা থেকে। এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর–মধ্য আমেরিকা থেকে চারটি করে। ওশেনিয়ার দল আছে দুটি। স্বাগতিক আর্জেন্টিনা ছাড়া সব কটি দল নিজ মহাদেশের বাছাইপর্ব টপকে এসেছে।

আর্জেন্টিনায় কেন?

এই আসরটি হওয়ার কথা ছিল ইন্দোনেশিয়ায়। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ বছর টুর্নামেন্ট আয়োজনের সব প্রস্তুতিও শেষ করে এনেছিল ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার ভেতরে প্রতিবাদ উঠলে ফিফা দেশটির আয়োজক স্বত্ব বাতিল করে।

লাতিন আমেরিকা থেকে বাছাইপর্ব উতরাতে না–পারা আর্জেন্টিনা সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আয়োজনের প্রস্তাব দেয়। গত মাসে আর্জেন্টিনাকে আয়োজকের মর্যাদা দেয় ফিফা।

টুর্নামেন্টের ফরমেট কী?

২৪টি সমান ভাগে ছয়টি গ্রুপে ভাগ হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে আছে ৪টি দল। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল এবং তৃতীয় হওয়া সেরা চার দল উঠবে রাউন্ড অব সিক্সটিনে। এখান থেকে টুর্নামেন্ট চলবে নকআউট পদ্ধতিতে, শেষ ষোলো থেকে শেষ আট, শেষ আট থেকে শেষ চার হয়ে ফাইনাল।

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা কোন গ্রুপে?

স্বাগতিক আর্জেন্টিনা আছে ‘এ’ গ্রুপে। এখানে তাদের তিন প্রতিপক্ষ হচ্ছে উজবেকিস্তান, গুয়াতেমালা ও নিউজিল্যান্ড। প্রথম ম্যাচ উজবেকিস্তানের বিপক্ষে, আজ রাত তিনটায়। ব্রাজিল আছে ‘ডি’ গ্রুপে। তাদের প্রতিপক্ষ ইতালি, নাইজেরিয়া ও ডমিনিকান রিপাবলিক। ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ ২১ মে দিবাগত রাত তিনটায়।

কোন গ্রুপে কে আছে?

গ্রুপগুলো হচ্ছে যথাক্রমে: এ গ্রুপে আর্জেন্টিনা, উজবেকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও গুয়েতেমালা; বি গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্র, ইকুয়েডর, ফিজি ও স্লোভাকিয়া; সি গ্রুপে সেনেগাল, জাপান, ইসরায়েল ও কলম্বিয়া; ডি গ্রুপে ব্রাজিল, ইতালি, নাইজেরিয়া ও ডমিনিকান রিপাবলিক; ই গ্রুপে উরুগুয়ে, ইরাক, ইংল্যান্ড, তিউনিসিয়া এবং এফ গ্রুপে ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, গাম্বিয়া ও হন্ডুরাস।

কোন স্টেডিয়ামে খেলা হবে?

আর্জেন্টিনার চারটি শহরে অনুষ্ঠিত হবে খেলা। মাঠগুলো হচ্ছে লা প্লাতার ডিয়েগো ম্যারাডোনা স্টেডিয়াম, মেনদোজার মালভিনাস আর্জেন্টিনাস স্টেডিয়াম, সান জুয়ানের সান জুয়ান দেল বাইসেন্তেনারিও স্টেডিয়াম এবং সান্তিয়াগো দেল এসতেরো স্টেডিয়াম।

সম্ভাবনাময়ী তারকা কারা?

ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ আগামীর তারকা খুঁজে পাওয়ার মঞ্চ। ২০২২ বিশ্বকাপ জেতা আর্জেন্টিনা দলের ১৩ জনই যেমন কোনো না কোনো বছর অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপে খেলেছেন। স্পেনের ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন এমন ১০ ফুটবলার। এবারও এমন অনেকেই হয়তো থাকবেন, যারা পরে বিশ্বকাপ মাতাবেন।

সম্ভাবনাময়ী এমন ফুটবলারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন: আন্দ্রে সান্তোস, লুইস গিলের্মে, মার্কোস লিয়ান্দ্রো (ব্রাজিল), লুকা রোমেরো, ম্যাক্সিমো প্যারোন, ক্লদিও এচেভেরি (আর্জেন্টিনা), ম্যাথিস তেল (ফ্রান্স), আলভারো রদ্রিগেজ, ফ্যাব্রিসিও দিয়াজ (উরুগুয়ে), অ্যালেক্স স্কট (ইংল্যান্ড), কেনদ্রি পায়েজ (ইকুয়েডর)।

ফিফা অ–২০ বিশ্বকাপের সফল দল কারা?

এখন পর্যন্ত অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপের ২২টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বোচ্চ ছয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়েছ পাঁচবার। এর মধ্যে ব্রাজিলের সর্বশেষ শিরোপা ২০১১ সালে, আর্জেন্টিনার ২০০৭ সালে। এ ছাড়া পর্তুগাল ও সার্বিয়া দুবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেনর মতো ইউরোপীয় ‘পাওয়ার হাউস’রা জিতেছে একবার করে। ২০১৯ সালে পোল্যান্ডে আয়োজিত সবশেষ আসরে জিতেছে ইউক্রেন।

উঠে আসা তারকা কারা?

বিশ্ব ফুটবলে তারকা হয়ে ওঠা অনেক ফুটবলারেরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জ্বলে ওঠার প্রথম মঞ্চ ছিল ফিফা অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপ। কেউ কেউ জিতেছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় গোল্ডেন বল পুরস্কারও। এর মধ্যে আছেন দুই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা (১৯৭৯) ও লিওনেল মেসি (২০০৫)। ফ্রান্সের পল পগবা ২০১৩ আসরে এবং আর্জেন্টিনার সের্হিও আগুয়েরো ২০০৭ সালে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পান। সর্বশেষ আসরে ৯ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতেন বর্তমানে ক্লাব ফুটবল মাতানো আর্লিং হলান্ড।

খেলা দেখা যাবে কীভাবে?

সব ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে ফিফা‍+ ওয়েবসাইটে।