ফুটবলের শিল্পীদের একজন তিনি—আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। একসময় বার্সেলোনায় লিওনেল মেসির সতীর্থ। ২০১০ বিশ্বকাপে স্পেনের প্রথম শিরোপা এসেছিল ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তাঁর গোল থেকেই। বার্সেলোনা ছেড়েছেন অনেক আগেই, কিন্তু ফুটবল ছাড়েননি ইনিয়েস্তা। দেশ থেকে বহু দূরে, জাপানে বাস তাঁর। খেলছেন জে–লিগের দল ভিসেল কোবে ক্লাবে। স্প্যানিশ ফুটবলের একসময়ের স্বপ্নের সারথি ইনিয়েস্তা খুব করেই চান তাঁর প্রিয় বন্ধু মেসির হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা দেখতে।
ইনিয়েস্তার মতে, মেসির বিশ্বকাপটা প্রাপ্য, ‘লিও (মেসি) একজন ফুটবল কিংবদন্তি। আমার মতোই চারটি বিশ্বকাপ খেলেছে। কিন্তু একবারও জিততে পারেনি। ২০১৪ সালে খুব কাছে গিয়েও পারেনি। অবশ্যই এবার সে সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবে। তবে বিশ্বকাপ জিততে হলে মাঝেমধ্যে ভাগ্যের সহয়তা চাই। দলের সবার অকুণ্ঠ সমর্থনও দরকার। সবাই ওর হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা দেখতে চাইবে। এটা ওর প্রাপ্য।’
প্রফেশনাল গ্রুপের সৌজন্যে প্রথম আলোতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে স্পেনের বিশ্বজয়ের অন্যতম রূপকার ইনিয়েস্তা কথা বলেছেন তাঁর দেশ স্পেন নিয়েও। কোচ লুইস এনরিকের অধীনে স্পেনের পারফরম্যান্স নিয়ে স্বস্তি মিলেছে তাঁর কণ্ঠে, ‘তিনি খুব ভালো কাজ করছেন। তাঁর অধীনে স্পেন সর্বশেষ ইউরোর সেমিফাইনালে খেলেছে, নেশনস লিগে রানার্সআপ হয়েছে।
এবারও নেশনস লিগের সেরা চার দলের একটি স্পেন। বাছাইপর্বে আমরা দুর্দান্ত খেলে কাতার বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছি। প্রতিপক্ষদের আমরা খুব একটা সুযোগ দিইনি। এসবই প্রমাণ করে, আমরা সঠিক পথে আছি। এনরিকে তাঁর দল দিয়ে নিজস্ব ব্র্যান্ডের ফুটবল খেলিয়ে থাকেন। স্পেনও ব্যতিক্রম নয়।’
২০১০ বিশ্বকাপ স্বাভাবিকভাবে ইনিয়েস্তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়। ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে স্পেনের জয়সূচক গোলের মুহূর্তটি তাঁর কাছে ছিল স্বপ্নের মতোই এক ব্যাপার, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত। একটি বিশেষ অনুভূতি, একটি বিশেষ অর্জন। গোল করার পর মনে হয়েছিল, স্বপ্ন দেখছি না তো! গোলটা আমার কোনো সতীর্থ করলেও একই রকম অনুভূতি হতো। আমরা সত্যিই দুর্দান্ত খেলেছি। পুরো টুর্নামেন্টে আধিপত্য দেখিয়েছি। ফুটবল একটি দলীয় খেলা। এখানে দলের সাফল্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সৃষ্টিকর্তা সেদিন আমার প্রতি এতটাই সদয় ছিলেন যে গোলটা আমাকে দিয়ে করিয়েছেন।’
সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপে স্পেন ভালো করেনি। ইনিয়েস্তা চান, এবার যেন তাঁর দেশ ভালো করে। তিনি আগের দুবারের দুঃস্বপ্ন ভুলে তাঁর দেশের খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে চাঙা থেকে লড়ে যেতে বলেছেন, ‘সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপে আমরা যতটা খারাপ খেলেছি, দল হিসেবে ততটা বাজে ছিলাম না। ব্রাজিলে (২০১৪ সালে) আমাদের ওপর দুর্যোগ নেমে এসেছিল। ২০১৮ সালে স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেও গোল পাইনি (স্পেনের গোলটি ছিল আত্মঘাতী)। পরে তো টাইব্রেকারে হেরে বাদ পড়লাম। এসব নিয়ে এখন হা–হুতাশ করে লাভ নেই। অতীত ভুলে বর্তমান নিয়ে ভাবতে হবে। কাতারে একদম নতুন আঙ্গিকে বিশ্বকাপ হতে চলেছে। আমাদের চাঙা থাকতে হবে ও শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।’
স্পেনের গ্রুপে এবারের বিশ্বকাপে পড়েছে জার্মানি। কঠিন গ্রুপই। কিন্তু ইনিয়েস্তা মনে করেন, বিশ্বকাপে এমন গ্রুপ খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশ্বকাপ জিততে হলে যে সেরা দলগুলোকেই হারাতে হবে, সেটি তিনি স্প্যানিশ দলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘জার্মানি যে গ্রুপে থাকবে, সেই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথ জটিল হবেই। এটাই বিশ্বকাপের মহত্ত্ব। সেরা হতে চাইলে আপনাকে সেরা দলগুলোর সামনে পড়তে হবে এবং তাদের হারানোর সামর্থ্য থাকতে হবে। শুধু থেকেই আপনাকে বিশ্বমানের ফুটবল উপহার দিতে হবে এবং খেলাটা উপভোগ করতে হবে।’