গোলের পর আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন
গোলের পর আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন

মেসিবিহীন আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছে পারেদেস–রোমেরোর গোল

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ লিওনেল মেসিকে ছাড়া খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। সেদিনের পর গত প্রায় ১৬ মাসে জাতীয় দলের আর কোনো ম্যাচে বাইরে থাকেননি আর্জেন্টাইন মহাতারকা। মাঝের সময়টাতে আর্জেন্টিনা দলের হয়ে নতুন ইতিহাস লিখেছেন মেসি। ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে তাঁর নেতৃত্বেই

তাই মেসিকে ছাড়া আর্জেন্টিনাকে খেলতে দেখাটা সমর্থকদের জন্য একটু অন্য রকম অভিজ্ঞতাই ছিল। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ—র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দলের সঙ্গে ১৪৯তম দলের খেলা। মেসি না খেললেও ‘পুচকে’ ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আর্জেন্টিনায় জয় নিয়ে হয়তো কারও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু একটা বিষয় তো দেখার ছিলই—মেসিবিহীন আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক কে হবেন!

মেসিবিহীন আর্জেন্টিনাকে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ২–০ ব্যবধানে জেতাতে গোল করেছেন লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও ক্রিস্টিয়ান রোমেরো। জাকার্তায় আজ প্রথমার্ধে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন পারেদেস। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোমেরো।

মেসি না থাকলেও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই খেলেছে আগ্রাসী ফুটবল। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রথম থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে পাসিং ফুটবলেই স্বাগতিকদের চাপে রেখে গোল আদায়ের চেষ্টা করে তারা। কিন্তু অতিথিদের আক্রমণ ঠেকানোর প্রস্তুতিটা বেশ ভালোভাবেই নিয়ে রেখেছিল ইন্দোনেশিয়া। রক্ষণে দারুণ এক দেয়াল গড়ে তোলে তারা।

আর্জেন্টিনা–ইন্দোনেশিয়া ম্যাচের একটি মুহূর্ত

প্রেসিং করে দ্রুত বল কেড়ে নিয়ে আর্জেন্টিনাকে থিতু হতে দিচ্ছিল না ইন্দোনেশিয়া। স্বাগতিকদের কার্যকর রক্ষণ কৌশলের কারণে আক্রমণে গিয়েও গোল পাওয়া হচ্ছিল না আর্জেন্টিনার। কয়েকবার অবশ্য বেশ কাছাকাছি গিয়েও গোলবঞ্চিত থাকতে হয়েছে লিওনেল স্কালোনির দলকে। ২৫ মিনিটে নিজেদের ডি–কক্সে ইন্দোনেশিয়ার এক খেলোয়াড়ের হাতে বল লাগায় পেনাল্টির দাবি জানায় আর্জেন্টিনা। সেই আবেদনে অবশ্য সাড়া দেননি রেফারি।

২৯ মিনিট পর্যন্ত গোলহীন থাকতে হয় আর্জেন্টিনাকে! গোলরক্ষককে কাটিয়ে ফাকুন্দো বুয়োনানোত্তে শট নিলেও ইন্দোনেশিয়ার রক্ষণ আটকে দেয় আটকে দেয় সেই প্রচেষ্টা। ফিরতি শটে ফের নিরাশ হতে হয় হুলিয়ান আলভারজেকেও। কর্নারের বিনিময়ে সে যাত্রায় রক্ষা পায় ইন্দোনেশিয়া।

৩৮ মিনিটে আর ভুল হয়নি পারেদেসের। ডি–বক্সের বেশ বাইরে থেকে তাঁর বুলেট গতির শট ইন্দোনেশিয়ার গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল ইন্দোনেশিয়া। ইভার জেনেরের শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দলকে সে যাত্রায় রক্ষা করেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার দখলে বল ছিল ৭৮ শতাংশ। আর সব মিলিয়ে তারা শট নেয় ১০টি, যার ৪টি ছিল লক্ষ্যে।

রোমেরোর গোল উদ্‌যাপন

বিরতির পরও যথারীতি আর্জেন্টিনার দাপট ছিল স্পষ্ট। এ সময়ও বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে বারবার আক্রমণে যেতে চাচ্ছিল তারা। তবে ৫২ মিনিটে গোল প্রায় হজম করেই ফেলেছিল ইন্দোনেশিয়া। ফ্রি–কিক থেকে স্বাগতিকদের সমতায় ফেরার চেষ্টা ফের রুখে দেন মার্তিনেজ। ৫৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোমেরো। কর্নার থেকে আসা বলকে হেডে জালের ঠিকানা দেখান এই ডিফেন্ডার।

হেরে গেলেও ম্যাচজুড়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রচেষ্টা ছিল দেখার মতো। রক্ষণ ও আক্রমণ—দুই জায়গাতেই নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। তবে শক্তি, সামর্থ্য আর অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পেরে উঠেনি তারা। মাঠ ছাড়তে হয়েছে হারের স্বাদ নিয়েই। এর আগে এশিয়া সফরের অন্য প্রীতি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২–০ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা।