২০২৩ সালের প্রথম দিনটা সৌদি ফুটবলকে নিয়ে গেছে নতুন দিগন্তে। ইউরোপীয় ফুটবলের পাট চুকিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এ বছরের ১ জানুয়ারি আল নাসরে নাম লেখান। রোনালদোকে নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে দেশটির ফুটবলে দিন বদলের হাওয়া লাগে। সৌদি প্রো লিগকে নক্ষত্রপুঞ্জ বানাতে আরও অন্তত ৫০ জন তারকা ফুটবলারকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে রেখেছে ক্লাবগুলো।
রোনালদোর পর করিম বেনজেমা, এনগোলো কান্তে, রবার্তো ফিরমিনো, এদুয়ার্দো মেন্দি, মার্সেলো ব্রোজোভিচ, কালিদু কুলিবালি, রুবেন নেভেসদের মতো তারকাদের নিয়ে এসে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে অনেক দূর এগিয়েও গেছে সৌদি আরব। আল ইত্তিফাকের কোচ হয়েছেন লিভারপুল কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি লিওনেল মেসিকেও নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে কেনার কথা ছিল আল নাসরের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আল হিলালের।
রোনালদোকে বছরে ২০ কোটি ১৮ লাখ ইউরো (২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা) বেতন দেবে আল নাসর। আল হিলাল মেসিকে এর প্রায় দ্বিগুণ (৪০ কোটি ইউরো বা ৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা) বেতন দিতে চেয়েছিল। মেসি তাতে সাড়া দিলে একবিংশ শতাব্দীর সেরা দুই ফুটবলারকে আবারও একবিন্দুতে মেলাতে পারত সৌদি আরব। তখন প্রো লিগের ঔজ্জ্বল্য আর জনপ্রিয়তা যে বহুগুণে বেড়ে যেত, বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু আল হিলালের বিপুল অর্থের ছাতছানিতে সাড়া দেননি মেসি। পিএসজির সঙ্গে ২ বছরের চুক্তি শেষে নাম লিখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে। কাল জমকালো আয়োজনে রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকাকে বরণ করেছে মায়ামি। মেসি মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দিকে ফুটবলপ্রেমীদের মনোযোগ তরতরিয়ে বাড়ছে।
তবে রোনালাদো মনে করেন, এমএলএসের চেয়ে সৌদি প্রো লিগ ভালো। দলবদলের বাজারে বিশ্বস্ত নাম ইতালিয়ান সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোনালদোর উদ্বৃতি দিয়ে এই পোস্ট করেছেন। রোনালদো এমন সময় কথাটি বললেন, যখন তাঁর ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি সবে মার্কিন মুলুকে পা রেখেছেন।
শুধু তাই নয়, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ছাড়া ইউরোপের অন্য সব প্রতিযোগিতা মান হারিয়েছে বলেও দাবি করেছেন রোনালদো। ইউরোপীয় ক্লাবে আর কখনো ফিরবেন না, এমন কথাও জোর গলায় বলেছেন।
রোনালদোর চাওয়ায় তাঁর দেশ পর্তুগালে প্রথমবার প্রাক্-প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গেছে আল নাসর। গত রাতে স্প্যানিশ ক্লাব সেল্তা ভিগোর কাছে ৫-০ ব্যবধানে হেরে গেছে তাঁর দল। লম্বা ছুটি কাটিয়ে এ ম্যাচ দিয়েই মাঠে ফিরেছেন রোনালদো।
ম্যাচ শেষে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অকপটে অনেক কথা বলেছেন। পর্তুগিজ ফরেয়ার্ডের কথাগুলো নিয়ে একাধিক টুইট করেছেন সাংবাদিক রোমানো। রোনালদো বলেছেন, ‘এমএলএসের চেয়ে সৌদি লিগ ভালো। আমি ১০০% নিশ্চিত, ইউরোপীয় ক্লাবে আর ফিরব না। সেই দরজা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। আমি সৌদি লিগে আসার পথ খুলে দিয়েছি। এখন সব খেলোয়াড় (আমাকে অনুসরণ করে) এখানে আসছে।’
ইউরোপীয় ফুটবলের মান নিয়ে রোনালদোর মূল্যায়ন, ‘আমার বয়স এখন ৩৮ বছর। আমার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় ফুটবল মান হারিয়ে ফেলেছে। শুধু একটি প্রতিযোগিতাই তার মান ধরে রেখে নিজেদের সবকিছুর উর্ধ্বে নিয়ে গেছে, সেটা প্রিমিয়ার লিগ। স্প্যানিশ লিগের (লা লিগা) মান ভালো নয়। পর্তুগিজ লিগ ভালো, কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ের নয়। আমার মনে হয় জার্মান লিগও (বুন্দেসলিগা) জৌলুশ হারিয়েছে। তাই আমি সৌদি আরবেই খেলতে চাই।’
নতুন মৌসুম শুরুর আগে আরও অনেক তারকা ফুটবলার সৌদি ক্লাবগুলোয় নাম লেখাতে পারেন বলে গুঞ্জন চলছে। কয়েকজন হয়তো কিছুদিনের মধ্যে চুক্তিবদ্ধও হবেন। রোনালদোর দাবি, এক বছরের মধ্যে শীর্ষ সারির আরও অনেক ফুটবলার সৌদি প্রো লিগে খেলবেন, ‘এক বছরের মধ্যে সৌদি লিগ তুর্কি ও ডাচ্ লিগকে ছাড়িয়ে যাবে। উঁচু মাপের আরও অনেক খেলোয়াড় সৌদিতে আসবে।’
উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, সৌদি ক্লাবগুলো বুড়ো ফুটবলারদের ইউরোপ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেফেরিনের ওই মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন রোনালদো, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের (আসলে উয়েফা) সভাপতি যে কথা বলেছেন, তা ঠিক নয়। সৌদিতে নতুন যারা খেলতে এসেছে, তাদের মধ্যে জোতা-নেভেস তরুণ।’