২১ শতকে গোলে সহায়তায় শীর্ষ তিনে আছেন মেসি, ডি ব্রুইনা ও দি মারিয়া
২১ শতকে গোলে সহায়তায় শীর্ষ তিনে আছেন মেসি, ডি ব্রুইনা ও দি মারিয়া

এই শতাব্দীতে গোলে সহায়তায় এগিয়ে কারা

গোল যিনি করেন, তাঁকে ঘিরেই হয় সব উদ্‌যাপন। কিন্তু গোলটা যাঁর পা থেকে তৈরি হয়, তাঁকে খুব কম সময়ই মনে রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে গোলদাতার চেয়ে একটি গোলের পেছনে যিনি গোলটিতে অ্যাসিস্ট বা সহায়তা করেছেন, তাঁর অবদানই থাকে সবচেয়ে বেশি। একটা সময় ছিল, যখন প্লে–মেকার ও স্ট্রাইকারকে দাগ টেনে আলাদা করে দেওয়া যেত। কিন্তু আধুনিক ফুটবলে সে সীমারেখা অনেকটাই মুছে গেছে। যে কারণে ধ্রুপদি ‘নাম্বার নাইন’ বা স্ট্রাইকারের ধারণাও অনেকটা ধূসর হয়ে পড়েছে।

এর পেছনে অবশ্য দুজন ফুটবলারের অবদান সবচেয়ে বেশি। লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-প্রায় দেড় দশক ধরে এই দুজন সমানে গোল ও অ্যাসিস্ট করে গেছেন। ২১ শতকে সেরা ১০ গোলে সহায়তকারীর তালিকায়ও আছেন দুজন, যেখানে মেসির অবস্থান আবার সবার ওপরে। এই শতকে সবচেয়ে বেশি গোলে সহায়তাকারীর তালিকাটি ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক সাইট পপফুট। দেখে নেওয়া যাক, এ তালিকায় মেসির সঙ্গে আরও কারা আছেন।

স্প্যানিশ তারকা সেস ফ্যাব্রেগাস

সেস ফ্যাব্রেগাস
২৩০ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.২৮

মিডফিল্ডে নিজের সময়ের সেরাদের একজন ছিলেন সেস ফেব্রেগাস। বিশ্বকাপজয়ী স্প্যানিশ এই ফুটবলার খেলেছেন আর্সেনাল ও বার্সেলোনার মতো শীর্ষ ক্লাবে। বার্সার হয়ে লা লিগা ও কোপা দেল রের শিরোপাও আছে ফেব্রেগাসের নামের পাশে। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে অ্যাসিস্টে বিশেষ দক্ষতা দেখালেও, গোলও করেছেন অনেক। ২১ শতকে গোলে সহায়তাকারীদের তালিকায় ১০ নম্বরে আছে ফেব্রেগাসের নাম। ৮৩০ ম্যাচে ০.২৮ গড়ে করেছেন ২৩০ অ্যাসিস্ট।

দুসান তাদিচ
২৩৪ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.৩২

সার্বিয়ান তারকা দুসান তাদিচের নাম এ তালিকায় একটু চমক জাগানোর মতোই। ক্যারিয়ারে খুব একটা বড় ক্লাবে খেলেননি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব সাউদাম্পটন ও ডাচ পরাশক্তি আয়াক্সেই নিজের সময়টা পার করেছেন তাদিচ। সার্বিয়ার হয়েও খেলেছেন ৯৮ ম্যাচ। সেভাবে শীর্ষ সারির ক্লাবে না খেলেও দারুণ সব অ্যাসিস্ট করেছেন ৩৪ বছর বয়সী তাদিচ। ৭২২ ম্যাচে ০.৩২ গড়ে করেছেন ২৩৪ অ্যাসিস্ট।

পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
২৩৬ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.২০

সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এই শতকে গোলের পাশাপাশি অ্যাসিস্টেও দাপট দেখিয়েছেন। তবে গোলে সহায়তায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মেসির চেয়ে অনেকটা পিছিয়েই আছেন রোনালদো। ম্যাচপ্রতি অ্যাসিস্টের হারেও অনেকটা পিছিয়ে আছেন ‘সিআর সেভেন’। তবে অ্যাসিস্টে যেটুকু পিছিয়ে আছেন, সেটা অবশ্য গোল করে ভালোভাবেই পুষিয়ে দিয়েছেন রোনালদো। ক্যারিয়ারে ১১৬৮ ম্যাচে ০.২০ গড়ে রোনালদোর অ্যাসিস্ট ২৩৬টি।

বিশ্বকাপজয়ী জার্মান তারকা মেসুত ওজিল

মেসুত ওজিল
২৪০ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.৩৫

নিজের সময়ের অন্যতম সেরা প্লে মেকার মেসুত ওজিলকে নিয়ে আক্ষেপই যেন বেশি। বিশ্বকাপজয়ী এই তারকার কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। কিন্তু চোট ও বিতর্কে জড়িয়ে নিজের সেরাটা আর উপহার দিতে পারেননি ওজিল। এরপরও এই শতকের শীর্ষ অ্যাসিস্ট করা খেলোয়াড়দের তালিকায় আলো ছড়াচ্ছেন এই জার্মান ফুটবলার। ৬৯২ ম্যাচে তাঁর অ্যাসিস্টি ২৪০টি।

টমাস মুলার
২৪৪ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.৩১

নিজের ক্লাব ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই কাটিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখে। জাতীয় দল জার্মানির হয়েও জিতেছেন বিশ্বকাপ। জার্মান ফুটবলারদের ভেতর সবচেয়ে বেশি ৩৩টি শিরোপাও আছে মুলারের। ৭৮৭ ম্যাচে তাঁর অ্যাসিস্ট ২৪৪টি।

লুইস সুয়ারেজ
২৪৬ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.২৭
ক্যারিয়ারে লিভারপুল, বার্সেলোনা এবং আতলেতিকো মাদ্রিদের মতো ক্লাবে আলো ছড়িয়েছেন লুইস সুয়ারেজ। গোল করা তাঁর মূল কাজ হলেও অ্যাসিস্টেও জাদু দেখিয়েছেন এই উরুগুইয়ান তারকা। ৯১১ ম্যাচে ০.২৭ গড়ে তাঁর অ্যাসিস্ট ২৪৬টি।

ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার

নেইমার
২৪৮ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.৩৫

আক্ষেপ আছে নেইমারকে নিয়েও। ক্যারিয়ার যেভাবে শুরু করেছিলেন, সে গতি পরে ধরে রাখতে পারেননি। ভুল সিদ্ধান্ত ও চোটের কারণে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে তাঁর অগ্রগতি। এরপরও নেইমার বর্তমান সময়ের শীর্ষ তারকাদের একজন। গোলে সহায়তাও কথা বলছে তাঁর পক্ষে। ০.৩৫ গড়ে ৭০৭ ম্যাচে তাঁর অ্যাসিস্ট ২৪৮টি।

আনহেল দি মারিয়া
২৬০ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.৩১

ক্যারিয়ারে একাধিক শীর্ষ ক্লাবে খেলেছেন দি মারিয়া। অবদান রেখেছেন আর্জেন্টিনার ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জেতার পথেও। বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা দি মারিয়া জায়গা করে নিয়েছেন গত শতাব্দীর শীর্ষ তিন গোলে সহায়তাকারীর তালিকায়। তাঁর অ্যাসিস্ট ০.৩১ গড়ে ২৬০টি।

গোল করেছেন কেভিন ডি ব্রুইনা

কেভিন ডি ব্রুইনা
২৮১ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.৪১

সংখ্যায় লিওনেল মেসির কাছে শীর্ষ স্থান হারালেও ম্যাচপ্রতি অ্যাসিস্টের সংখ্যা বলছে কেভিন ডি ব্রুইনা এই শতকে বিশ্বের সেরা প্লেমেকারদের অন্যতম। গেঙ্কের হয়ে ২০০৮ সালে সিনিয়র দলে অভিষেক হয় ডি ব্রুইনার। চার বছর এই ক্লাবে খেলে ২০১২ সালে চলে যান চেলসিতে। যদিও এই ইংলিশ ক্লাবের হয়ে ৩ ম্যাচের বেশি খেলা হয়নি তাঁর। ২০১৫ সালে ম্যানচেস্টার সিটিতে এসে থিতু হন ডি ব্রুইনা। সিটির হয়ে নিজেকে সময়ের তো বটেই, সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এই বেলজিয়ান তারকা। জাতীয় দলের হয়েও একই সঙ্গে আলো ছড়ান ডি ব্রুইনা। চলতি মৌসুমে জিতেছেন ঐতিহাসিক ট্রেবলে। সব মিলিয়ে ম্যাচপ্রতি ০.৪১ অ্যাসিস্টে তাঁর গোলে মোট সহায়তার সংখ্যা ২৮১।

অ্যাসিস্টেও দাপট লিওনেল মেসির

লিওনেল মেসি
৩৫৭ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.৩৫

ম্যাচপ্রতি অ্যাসিস্টে ডি ব্রুইনার চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও মোট অ্যাসিস্টে রাজত্ব মেসির দখলে। বার্সেলোনার হয়ে ম্যাচের পর ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট করে গেছেন রেকর্ডের বরপুত্র মেসি। জাতীয় দলের হয়েও নিজে গোল করার পাশাপাশি গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন সম্ভাব্য সব শিরোপাও। অ্যাসিস্টের চূড়ায়ও তাই তাঁর থাকাটা অনুমেয় ছিল। ১০২৮ ম্যাচে ০.৩৫ গড়ে আর্জেন্টাইন মহাতারকার মোট অ্যাসিস্ট ৩৫৭টি।