দুটি করে গোল করেন স্বপ্না রানী (৭ নম্বর জার্সি) ও আকলিমা খাতুন (১১ নম্বর জার্সি)
দুটি করে গোল করেন স্বপ্না রানী (৭ নম্বর জার্সি) ও আকলিমা খাতুন (১১ নম্বর জার্সি)

তুর্কমেনিস্তানকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশের মেয়েরা

কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে দর্শকদের বৈকালিক বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে মেয়েদের ফুটবল। এক মাস আগে এই স্টেডিয়ামে নেপালকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ভেন্যুতেই আজ আবারও জয়োল্লাসে মেতে উঠলেন রুপনা চাকমা, স্বপ্না রানীরা।

এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের প্রথম রাউন্ডে তুর্কমেনিস্তানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। দুটি করে গোল করেছেন আকলিমা খাতুন স্বপ্না রানী
এএফসি এশিয়ান কাপের বয়সভিত্তিক (অনূর্ধ্ব-১৯) পর্যায়ে বাংলাদেশের এটা টানা দ্বিতীয় জয়। এর আগে ২০১৯ সালে তাজিকিস্তানে বাংলাদেশ তাজিকিস্তানকে হারিয়েছিল ৫-১ গোলে। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন মনিকা চাকমা।

বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় আগে কখনোই তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে খেলেনি বাংলাদেশ। অচেনা প্রতিপক্ষ যে খুব বেশি শক্তিশালী, সেটাও নয়। যদিও জাতীয় দলের র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়েই তুর্কমেনিস্তান। যেখানে বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ১৪০, তুর্কমেনিস্তানের ১৩৭। কিন্তু মাঠের খেলায় মোটেও ফুটে ওঠেনি তুর্কমেনিস্তানের জুনিয়র মেয়েদের আধিপত্য। পুরো ৯০ মিনিটই বল পজিশনে দুর্দান্তভাবে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। গোলের ব্যবধান চাইলে আরও বাড়িয়ে নিতেই পারত। বাংলাদেশ গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে মোটেও আজ বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি।

৮ মার্চ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে এই তুর্কমেনিস্তানকেই ৭-১ গোলে উড়িয়ে দেয় ইরান। বাংলাদেশের মেয়েদেরও স্বপ্ন ছিল তুর্কমেনিস্তানের জালে গোল উৎসব করা। কিন্তু তা আর হয়নি। তাই টুর্নামেন্টে পরের রাউন্ডে যাওয়ার ক্ষেত্রে গোল গড়ের প্রভাবটা হয়তো ভালোভাবেই পড়তে পারে বাংলাদেশের। পরের রাউন্ডে যেতে ১২ মার্চ ইরানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশের।

স্বপ্নার বল দখলের একটি মুহূর্ত

উচ্চতা ও শারীরিক গড়নে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে তুর্কমেনিস্তানের মেয়েরা। কিন্তু টেকনিক ও স্কিলে বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট ভালো। যদিও দলের নিয়মিত অধিনায়ক ও ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহারের অনুপস্থিতি দ্রুত গোল পেতে ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। লিগামেন্টের চোটের কারণে অনূর্ধ্ব-২০ সাফের সেরা ফুটবলার আজ মাঠেই নামতে পারেননি। যে কারণে বাংলাদেশকে প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। বিশেষ করে অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে বেশ তাড়াহুড়া করেছেন আকলিমা, শাহেদা আক্তাররা।  

বাংলাদেশের প্রথম গোলটি হয়েছে প্রথমার্ধের যোগ হওয়া সময়ে। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে জটলা থেকে সাইড ভলিতে গোল করেন আকলিমা। যদিও তুর্কমেনিস্তানের ফুটবলারদের দাবি, বলটি হাতে লাগে আকলিমার। কিন্তু রেফারি সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।  

ম্যাচের ২০ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। বক্সের মধ্যে দারুণ একটা সুযোগ পেয়েও তা নষ্ট করেন আকলিমা। সুরমা জান্নাতের বাড়িয়ে দেওয়া বলটিতে ভালোভাবে শট নিলেই চলত। কিন্তু তুর্কমেনিস্তানের গোলরক্ষক আমানবারদিয়েভা আয়েশার হাতে বল তুলে দেন আকলিমা!
 
৭১ মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়েছেন সর্বশেষ নারী ফুটবল লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা আকলিমা। ডান প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের আক্রমণ, ইতি খাতুনের ক্রসে দুর্দান্ত ভলিতে বল জালে জড়ান আকলিমা।

ভলিতে গোল পেয়েছেন আকলিমা

ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটে তেড়েফুড়ে আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। আর সেটার ফলও পেয়েছে পরপর দুই মিনিটে দুটি গোল করে। ৮০ মিনিটে ইতি খাতুনের ক্রসে স্বপ্নার হেডে স্কোর হয়েছে ৩-০। ৮১ মিনিটে বাংলাদেশের চতুর্থ গোলে মিডফিল্ডার স্বপ্নার কৃতিত্বের চেয়ে অবদান বেশি তুর্কমেনিস্তানের ডিফেন্ডার কুরবানোভা পারভানার। বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন স্বপ্না, সেটা ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়েছেন কুরবানোভা। যদিও রেফারি স্বপ্নাকেই গোলটি দিয়েছেন।
৮৭ মিনিটে অবশ্য আকলিমাকে তুলে নেন কোচ গোলাম রব্বানী। তাঁর বদলি হিসেবে আনিকা তানজুম নামলেও স্কোরে আর বদল হয়নি বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ দল: রুপনা চাকমা, নাসরিন আক্তার (উন্নতি), সুরমা জান্নাত, আফঈদা খন্দকার, সোহাগী কিসকু, স্বপ্না রানী, মাহফুজা খাতুন (হালিমা আক্তার), শাহেদা আক্তার, আকলিমা খাতুন (আনিকা তানজুম), আইরিন খাতুন, ইতি খাতুন।