এটা কি সত্যিই ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল! গতকাল রাতে ব্রাইটনের বিপক্ষে ‘অল রেড’দের খেলা দেখার সময় যে কারও মনেই এ প্রশ্ন জেগে থাকতে পারে! কোনো জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় লিভারপুলকে জাগিয়ে তুলেছিলেন যে মানুষটি, গতকাল দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর সেই ক্লপ কিনা হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন। এমন দিনও লিভারপুল সমর্থকদের দেখতে হলো! হেভিমেটাল ফুটবলের যে উন্মাদনা নিয়ে গত কয়েক মৌসুম মাতিয়ে রেখেছিল লিভারপুল, সেটার কি তাহলে শেষের শুরু হয়ে গেল? চূড়ান্ত উত্তর পেতে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে কোন কারণে লিভারপুলের এমন দুরবস্থা, উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক—
মিডফিল্ডারের অভাব
মিডফিল্ডারের অনুপস্থিতি। গ্রীষ্মের দলবদল থেকেই লিভারপুলের মাঝমাঠের সমস্যা আলোচনায় ছিল। মানসম্পন্ন মিডফিল্ডার দলে না থাকায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছিল সমর্থকদেরও। এর মধ্যে একাধিক মিডফিল্ডারের চোট ও বিকল্প খেলোয়াড় না থাকা লিভারপুলের এ সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করে।
বিপর্যয় এড়াতে মাঝমাঠে মৌসুমের শুরু থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান ক্লপ। কিন্তু কোনো কিছুতেই মোচন হয়নি এই ঘাটতি। ন্যূনতম দৃঢ়তাও দেখাতে পারছে না লিভারপুলের মাঝমাঠ। আর মিডফিল্ডের এই লেজেগোবরে অবস্থার চাপ সামলাতে পারছে না রক্ষণও। সামান্য আক্রমণেই ভেঙে পড়ছে হুড়মুড় করে, যা লিভারপুলকে রীতিমতো কোণঠাসা করে দিয়েছে।
একের পর এক চোট সমস্যা
লিভারপুলকে মৌসুমের শুরু থেকে ভোগাচ্ছে একের পর এক চোট। লুইস দিয়াজ, দিয়োগো জোতার মতো কার্যকর খেলোয়াড়েরা লম্বা সময় ধরে দলের বাইরে। এর আগে চোটে পড়ে বাইরে ছিলেন ইব্রাহিমা কোনাটে, থিয়াগো আলকানতারা ও অ্যালেক্স অক্সালেড-চেম্বারলেইনের মতো তারকা।
সাম্প্রতিক সময়ে দলের রক্ষণ-কান্ডারি ভার্জিল ফন ডাইক ও ফরোয়ার্ড রবার্তো ফিরমিনোকেও চোটের কারণে হারিয়েছে লিভারপুল। চোটের মিছিলে ব্রাইটন ম্যাচের আগে যোগ দিয়েছেন দারউইন নুনিয়েজও। কখনো কখনো তো একাদশ সাজাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্লপকে। এমনকি নামাতে হচ্ছে ছন্দহীন খেলোয়াড়দের, যা লিভারপুলের এমন দুরবস্থার অন্যতম কারণ।
ফরোয়ার্ডদের ছন্দহীনতা
জোতা ও দিয়াজ লম্বা সময় ধরে না থাকায় লিভারপুলের ফরোয়ার্ড লাইন এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর আগে মৌসুম শুরুর আগে দল ছাড়েন সাদিও মানে। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দলে থাকা ফরোয়ার্ডদের ছন্দহীনতাও। মৌসুমের শুরুতে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করে লিভারপুল নিয়ে এসেছিল উরুগুইয়ান তরুণ নুনিয়েজকে। তবে এখন পর্যন্ত নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি এই স্ট্রাইকার।
গোলমুখে তাঁর ব্যর্থতাও চোখে পড়ার মতো। সহজ সব সুযোগ হাতছাড়া করে হয়েছেন ট্রলের শিকারও। মাঝে ফিরমিনো কিছুটা আশা জাগালেও চোটে পড়ে তিনিও এখন দলের বাইরে। নিয়মিত বিরতিতে গোল পেলেও মোহাম্মদ সালাহকে নিজের সেরা ছন্দে দেখা যাচ্ছে না লম্বা সময় ধরে। সালাহর একক নৈপুণ্যের ঝলকগুলোও যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। সম্প্রতি দলবদলে ডাচ তরুণ কোডি গাকপোকে নিয়ে এসেছে লিভারপুল। তবে এখনো দলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াতেই আছেন বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো এই উঠতি তারকা।
অপরিকল্পিত দলবদল
দলবদলে লিভারপুলের পরিকল্পনাহীনতার ছাপ ছিল স্পষ্ট। এ মৌসুমে লিভারপুল বড় অঙ্কের যে দলবদল করেছে, সেটি ছিল ফরোয়ার্ড-লাইনে। অথচ তাদের প্রয়োজন ছিল একজন নিখুঁত মিডফিল্ডারের। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যেমন সর্বশেষ দলবদলে মাঝমাঠে কাসেমিরোকে নিয়ে আসার ফল পাচ্ছে। এমন কাউকে প্রয়োজন ছিল লিভারপুলেরও।
শুরু থেকে সমর্থকদের চাওয়াও ছিল তেমনই। কিন্তু গ্রীষ্মের দলবদলে এ জায়গাকে উপেক্ষা করে গেছে লিভারপুল কর্তৃপক্ষ। শুধু মিডফিল্ডেই নয়, রক্ষণেও লিভারপুলের ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। ফন ডাইক ছাড়া লিভারপুল এতটুকু প্রতিরোধ গড়তে পারছে না। শীতকালীন দলবদলেও এসব ঘাটতি পূরণের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না, যা মৌসুমের বাকি সময়েও লিভারপুলের দুরবস্থার কারণ হতে পারে।