২০০৯ থেকে ২০২৩– রিয়াল মাদ্রিদে ১৪ বছরের পথচলায় ইতি টেনেছেন করিম বেনজেমা
২০০৯ থেকে ২০২৩– রিয়াল মাদ্রিদে ১৪ বছরের পথচলায় ইতি টেনেছেন করিম বেনজেমা

বেনজেমার পর রিয়ালের ‘নাম্বার নাইন’ কে

১৪ বছরের ৯ বছরই ছিলেন ছায়ায়। এ ছায়ায় সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল ভাগাভাগির ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’। রিয়াল মাদ্রিদের ‘পোস্টার বয়’ তখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। একসঙ্গে তিনটি ছবির জায়গা বরাদ্দ থাকলে তবেই দেখা মিলত তাঁর, সঙ্গে গ্যারেথ বেল। প্রায় এক দশক ছায়ায় পার করে দেওয়া সেই করিম বেনজেমাই গত পাঁচ বছর ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ‘প্রধান মুখ’। এ মুখ প্রায় একাই এনে দিয়েছে একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ আর দুটি লা লিগা। দ্বিতীয় সারির একজন থেকে হয়ে উঠেছেন রিয়ালের ‘রিয়েল কমান্ডার’।

১৪ বছর, ২৫ ট্রফি আর ব্যালন ডি’অরের মালিক থাকাবস্থায় ‘কমান্ডার’ হিসেবে পথচলায় ইতি টানছেন বেনজেমা। পারস্পরিক সমঝোতায় রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ছেন ৩৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। কিন্তু এই বেনজেমায় ভর করে এতগুলো মৌসুম পার করেছে যে দল, তাঁর বিকল্প কি পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ? রোনালদো যাওয়ার পর গোল করার দায়িত্ব বেনজেমা নিয়েছেন। বেনজেমার পরের দায়িত্বটা কে নিচ্ছেন? কে হচ্ছেন ইউরোপের সবচেয়ে সফল ক্লাবটির পরবর্তী ‘নাম্বার নাইন’?

বেনজেমার দায়িত্ব প্রথম থেকে মূল স্ট্রাইকার বা নাম্বার নাইনেরই ছিল। তবে ২০১৮ সালে রোনালদো চলে যাওয়ার আগপর্যন্ত ভূমিকাটা সেভাবে রাখার সুযোগ ছিল কমই। রোনালদো থাকাবস্থায় বেনজেমার মৌসুমপ্রতি গোল গড় ছিল ২১.৩, গত পাঁচ বছরে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মৌসুমপ্রতি ৩২.২ গোলে। এই পরিসংখ্যানের অঙ্কটা বেনজেমার গোল করার সক্ষমতার কথা যেমন বলছে, তেমনি দলগত অর্জনমুখী হয়ে দীর্ঘ সময় লেগে থাকার সাক্ষ্যও দিচ্ছে।

২০০৯ সালের ৯ জুলাই বেনজেমাকে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় হিসেবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে উপস্থাপন করা হয়

বেনজেমা ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলকে প্রাধান্য দেওয়ার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন গত কয়েক মৌসুমেও। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আর রদ্রিগোর পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসায় বড় ভূমিকা তাঁরই। সব মিলিয়ে ৩৫৪ গোলের পাশাপাশি ১৬৫টি গোলে সহায়তার রেকর্ড আছে বেনজেমার নামের পাশে, যা একজন স্ট্রাইকারের পাশাপাশি প্লে-মেকার সত্তারও পরিচায়ক। এ কারণে বেনজেমাকে রিয়াল শুধু ‘গোলস্কোরার’ হিসেবেই মনে রাখবে না, পূর্ণাঙ্গ নাম্বার নাইন হিসেবেই মনে রাখবে, যিনি মাঝমাঠের সঙ্গে সংযোগ রেখে অন্যদের গোল বানিয়ে দিতে পারেন, নিজে তো করেনই।

এমন একজন খেলোয়াড় চলে গেলে তাঁর উত্তরসূরিও হতে হয় তেমন কেউ। সাধারণত বড় দলগুলো বিকল্প খেলোয়াড় তৈরির কাজটি করে দলের তরুণদের মধ্য থেকেই। রিয়ালও তা–ই করে। তবে এ যাত্রায় বেনজেমার উত্তরসূরি হওয়ার মতো উপযুক্ত খেলোয়াড় কি রিয়ালে আছে?

মারিয়ানো দিয়াজ চলে যাচ্ছেন বলে রিয়াল স্কোয়াডে এখন আর কোনো সেন্টার ফরোয়ার্ড নেই। চোটপ্রবণ এডেন হ্যাজার্ডের সঙ্গে তো বিচ্ছেদই হয়ে গেছে ক্লাবের। আনচেলত্তি মাঝেমাধ্যে রদ্রিগোকে ফলস নাইন হিসেবে খেলানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্রাজিলের এই ফরোয়ার্ড ডান উইংয়েই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

এর অর্থ, রিয়ালকে নাম্বার নাইন খুঁজতে হচ্ছে বাইরে থেকেই। এ ক্ষেত্রে আলোচিত হচ্ছে কয়েকটি নাম—চেলসির কাই হাভার্টজ, নাপোলির ভিক্টর ওসিমেন এবং টটেনহামের হ্যারি কেইন।

এর মধ্যে কেইন ও ওসিমেনকে নিয়ে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে বেশি। ইংল্যান্ড অধিনায়ক কেইন ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে গেলেও ট্রফির দেখা পাচ্ছেন না টটেনহামে। এ বছর প্রিমিয়ার লিগে অষ্টম হওয়ায় সামনের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপা লিগেও খেলতে পারবে না ক্লাবটি। এ কারণে কেইন নিজেই এখন ভালো প্রস্তাব পেলে চলে যাওয়ার পক্ষপাতি। অপর দিকে টটেনহামও নাকি তাঁকে ছাড়তে রাজি, যদি সেটা ইংল্যান্ডের বাইরের ক্লাব হয়। দুয়ে দুয়ে চার মিলে কেইনের রিয়ালে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবলই মনে হচ্ছে।

হ্যারি কেইন কি এবার টটেনহাম ছাড়বেন?

ভালো সম্ভাবনা আছে ওসিমেনেরও। সিরি ‘আ’ চ্যাম্পিয়ন নাপোলির হয়ে ২৫ গোল করা এই নাইজেরিয়ান আছেন রিয়াল-রাডারে। যদিও ওসিমেনকে নিয়ে আগ্রহ আছে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসি আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরও। চেলসি ওসিমেনকে নিয়ে ভাবার অন্যতম কারণ কাই হাভার্টজ। ২৩ বছর বয়সী এই জার্মান স্ট্রাইকার রিয়ালে যেতে খুবই আগ্রহী। দলবদল–বিষয়ক নির্ভরযোগ্য সূত্র ফ্যাব্রিজিও রোমানো বলেছেন, রিয়াল নাকি হাভার্টজকে তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় রেখেছে।

কেইন, ওসিমেন ও হাভার্টজ—এই তিনজনের পাশাপাশি ত্রিশোর্ধ্ব রবার্তো ফিরমিনো আর জোসেলুও আছেন রিয়ালের ভাবনায়। ৩৩ বছর বয়সী জোসেলু একসময় (২০১১-১২) রিয়ালেই ছিলেন, যদিও সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ১ ম্যাচ। হফেনহাইম, স্টোক সিটি ঘুরে আসা এই স্ট্রাইকার এখন এসপানিওলে। এ মৌসুমে লা লিগা থেকে অবনমিত হয়ে যাওয়া ক্লাবটির হয়ে ৩৩ ম্যাচ ১৬ গোল করেছেন জোসেলু।

কাই হাভার্টজ রিয়ালে যেতে আগ্রহী

৩১ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ফিরমিনো লিভারপুল ছেড়ে দিয়ে এখন ‘ফ্রি এজেন্ট’। তবে ফিরমিনো বা জোসেলুদের কেউই এখন আর নিয়মিত একাদশে খেলানোর মতো নন। রিয়ালে নেওয়া হলে তাঁদের ভূমিকা হবে বিকল্প স্ট্রাইকারের।
তাহলে আসল স্ট্রাইকার কে হবেন, কে হবেন নাম্বার নাইন?

আপাতত সেটা কেইন, ওসিমেন বা হাভার্টজদের কেউ একজন হতে পারেন। আর দীর্ঘ মেয়াদে রিয়ালের চোখ এখনো এক জায়গাতেই— কিলিয়ান এমবাপ্পে!