লিওনেল মেসি ও পিএসজির সম্পর্কের সুতা ছিঁড়ে গেছে। বছরের শুরু থেকে মেসির পিএসজি ছাড়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে মেসির সৌদিযাত্রাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া জটিলতার পর তাঁর ক্লাব ছাড়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। সর্বশেষ মেসি অনুমতি ছাড়া সৌদিযাত্রা নিয়ে ক্ষমা চাইলেও বিষয়টা সম্ভবত এটুকুতেই শেষ হচ্ছে না।
ইউরোপ ও আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমগুলো এরই মধ্যে মেসির পিএসজি ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে মেসির বিদায়ের পর পিএসজিকে কোন কোন খাতে ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে, তা নিয়েও হিসাব কষা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, মৌসুম শেষে চুক্তি নবায়ন না করে মেসি অন্য ক্লাবে গেলে টিভিস্বত্ব, জার্সি বিক্রিসহ বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের আয় হারাবে পিএসজি।
২০২১ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে মেসি পিএসজিতে আসার পরই আকর্ষণের কেন্দ্রে আসে ফরাসি লিগ ‘আঁ’। বিশ্বব্যাপী এই লিগের অনুসারীসংখ্যাও বেশ বেড়ে যায়। এখন মেসি যদি ক্লাব ছাড়েন, তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে টিভিস্বত্বের আয়ে, যা পিএসজি এবং প্রথম সারির অন্য ক্লাবগুলোকেও আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে ফেলবে। বর্তমানে এই লিগের সম্প্রচারস্বত্ব আছে কাতারি প্রতিষ্ঠান বেইন স্পোর্টসের, যাদের সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে ২০২৪ সালে। লিগ ওয়ান বর্তমানে ফ্রান্সের বাইরে থেকে আয় করে ৮ কোটি ইউরো।
মেসি ক্লাব ছেড়ে গেলে টিভিস্বত্বে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা উল্লেখ করে ফ্রান্সের প্রখ্যাত স্পোর্টস মার্কেটিং নির্বাহী ভিরগিলে চাইলেট বলেছেন, ‘২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক স্বত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুনভাবে দর–কষাকষিতে এর প্রভাব পড়তে পারে।’ চাইলেটের সঙ্গে একমত পোষণ করে আরেক বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট চাউদেল বলেছেন, ‘এশিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকায় দর–কষাকষির সময় বিষয়টা আর একই রকম থাকবে না।’
মেসির পিএসজিতে আসা অন্তত নতুন আটটি পৃষ্ঠপোষককে ক্লাবটিকে নিয়ে আগ্রহী করতে পেরেছিল। পাশাপাশি রকেটগতিতে বেড়েছিল ক্লাবটির জার্সি বিক্রিও। এমনকি জার্সি বিক্রিতে নতুন রেকর্ডও হয়েছিল। ২০২২ সালে জার্সি বিক্রির পরিমাণ খুব সহজেই ১০ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
তবে মেসির বিদায়ের পর পরিস্থিতি আর আগের মতো থাকবে না বলে মনে করেন চাইলেট, ‘সম্ভবত ১০ শতাংশের মতো বিক্রি হ্রাস পেতে পারে।’ চাইলেটের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন চাউদেলও। জার্সি বিক্রি হ্রাসে পিএসজিকে অবশ্য খুব বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না। কারণ, এর বেশির ভাগ অর্থ যায় প্রস্তুতকারক এবং বিপণনকারীদের কাছে। তবে এর ফলে পিএসজির ব্র্যান্ড ভ্যালুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মেসি পিএসজি ছাড়লে অনেক ফুটবলপ্রেমী পিএসজির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, যার প্রভাব পড়তে পারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারীর সংখ্যার ক্ষেত্রেও। ২০২২ সালে পিএসজির মোট অনুসারীসংখ্যা ১৫ কোটিতে গিয়ে ঠেকেছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ছিল। তবে মেসি না থাকলে পরিস্থিতে যে এ রকম থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য। এ ছাড়া মেসিকে ছাড়া ম্যাচের টিকিট বিক্রিতেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে পিএসজিকে।