ঐতিহাসিক ওয়েম্বলিতে ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা এফএ কাপের ফাইনাল। সব হারানো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য এর চেয়ে বড় প্রেরণা আর কী হতে পারে! এ ছাড়াও ইউনাইটেডের জেগে ওঠার উপলক্ষ ছিল-এ ম্যাচে যে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের ফুটবলের ‘নতুন’ পরাশক্তি এবং নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটি।
এমন একটি ম্যাচের আগেও ইউনাইটেডকে ঘিরে ছিল নেতিবাচক আলোচনা। ইউনাইটেড এফএ কাপের ফাইনাল হারুক বা জিতুক-এ ম্যাচই হয়তো ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটির ডাগআউটে এরিক টেন হাগের শেষ-এমন কথাই হয়েছে ম্যাচ শুরুর আগে। এসবের পরও ঐতিহ্যের টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঐতিহ্যবাহী ইউনাইটেড ঠিকই জেগে উঠেছে। সিটিকে ২-১ গোলে হারিয়ে জিতে নিয়েছে এফএ কাপের শিরোপা।
এই জয়ে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী সিটির বিপক্ষে একটি প্রতিশোধও নেওয়া হলো ইউনাইটেডের। গত বছরও এফএ কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ইউনাইটেড-সিটি। ইউনাইটেডকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল সিটি। এ ছাড়া ইউনাইটেড জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপা লিগেও।
সেই ম্যাচের প্রতিশোধ নিতে নেমে শুরু থেকেই সিটিকে চেপে ধরার চেষ্টা করে ইউনাইটেড। সিটির রক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়ে যান আলেহান্দ্রো গারনাচো-ব্রুনো ফার্নন্দেজ-মার্কাস রাশফোর্ডরা। সেই চাপে শুরুতেই অনেকটা এলোমেলো হয়ে যায় সিটির রক্ষণ, ভুলও করতে শুরু করে তারা। সেরকম একটি ভুলেরই সুযোগ নিয়ে ইউনাইটেডকে এগিয়ে দেন গারনাচো।
ইউনাইটেডের মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা একটি বল বাঁচাতে পোস্ট থেকে বেরিয়ে আসেন সিটির গোলকিপার স্টেফান ওর্তেগা। অন্যদিকে ওর্তেগাকে সাহায্য করতে বলের পেছন পেছন দৌড়ে আসেন ইয়োস্কো গাভার্দিওল। দৌড়ে এসে তিনি হেডে ব্যাক পাস দেওয়ার চেষ্টা করেন ওর্তেগাকে। কিন্তু বল চলে যায় এগিয়ে আসা ওর্তেগার মাথার ওপর দিয়ে। সেই বল ধরে ফাঁকা জালে পাঠিয়ে দেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড গারনাচো।
৩০ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার পর যেন আরও উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে ইউনাইটেড। ৮ মিনিট পর রাশফোর্ড আবার সিটির জালে বল পাঠান। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি গোল দেননি রেফারি। তবে পরের মিনিটেই স্কোরলাইন ২-০ করেন কোবি মাইনু। গোলটি ছিল দলীয় খেলার অসাধারণ এক উদাহরণ।
বক্সের বাইরে বল পেয়ে ডান দিকে থাকা গারনাচোকে দেন রাশফোর্ড। গারনাচো বল পাঠান ফার্নান্দেজের কাছে। প্রথম স্পর্শেই ফার্নান্দেজ বল দেন বক্সের বাঁ দিকে থাকা মাইনুকে। দুর্দান্ত এক গড়ানো শটে মাইনু বল পাঠান জালে।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া সিটি দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ৫৫ মিনিটে জেরেমি ডকু ও ফিল ফোডেন নিজেদের মধ্যে বল নেওয়া-দেওয়া করে ঢুকে পড়েন বক্সে। পরে ডকু পাস দেন ফোডেনকে। কিন্তু ফোডেনের পাশ দিয়ে বল চলে যায় আর্লিং হলান্ডের কাছে। তাঁর জোরালো শট ফিরে আসে বারে লেগে। এরপরও দু-একটি ভালো সুযোগ পায় সিটি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোল কিছুতেই পাচ্ছিল না তারা।
সিটি অবশেষে গোলের দেখা পায় ৮৭ মিনিটে। বক্সের ঠিক ওপরে বল পেয়ে ডকু ডান পায়ের জোরালো শট নেন। সেটি ইউনাইটেড গোলকিপার ওনানার হাতে লেগে ঢুকে যায় জালে। এরপর যোগ করা ৭ মিনিট মিলিয়ে গোল শোধের জন্য ১০ মিনিট সময় পায় সিটি। কিন্তু গোল আর শোধ করা হয়নি তাদের।
এটা রদ্রির জন্যও অন্যরকম এক ম্যাচ হয়ে রইল। রদ্রি খেলেছেন, এমন ম্যাচে সিটি হারল ৭৪ ম্যাচ ও ৪৭৫ দিন পর।