বাফুফে ভবন।
বাফুফে ভবন।

আর্থিক অনিয়ম

কী থাকছে বাফুফের তদন্ত কমিটির সুপারিশে

আড়াই মাসের বেশি সময় পর আগামী রোববার সোহাগ-কাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাফুফেতে জমা দেওয়ার কথা।

তদন্ত কমিটির সামনে তাঁরা হাজির হয়েছেন। বাফুফের কেনাকাটায় কোথায় কী হয়েছে, সেসবের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শেষে তাঁরা নিজেদের দোষও নাকি স্বীকার করে নিয়েছেন। সোহাগ–কাণ্ডে গঠিত বাফুফের তদন্ত কমিটির সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদে ডাক পাওয়া বাফুফের পাঁচ বেতনভুক্ত কর্মীই কমিটির সামনে বলেছেন, তাঁদের কিছু ভুল ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করতে যাচ্ছে তদন্ত কমিটি।

বাফুফের সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি আড়াই মাসে ১০টি সভা শেষে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করেছে বলে জানা গেছে। আজ কমিটির শেষ সভায় চূড়ান্ত হবে প্রতিবেদন। এরপর ৩০ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে। তাতে মূল সুপারিশ থাকবে, বাফুফের ক্রয়প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে করা ও দরপত্রপ্রক্রিয়ায় থাকা ত্রুটিগুলো ভবিষ্যতে যেন আর না হয়, সেদিকে জোর দেওয়া।

গত এপ্রিলে আর্থিক অনিয়মের জন্য আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফিফা

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে গত ১৪ এপ্রিল ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে ফিফা। ফিফার ৫১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আরও নাম এলেও তাঁদের কারও বিরুদ্ধে ফিফা ব্যবস্থা নেয়নি। তবে বাফুফের তদন্ত কমিটি মনে করছে, অনিয়ম একা আবু নাঈম করেননি। অন্যদেরও দায় আছে।

বাফুফের তদন্ত কমিটি মূলত ফিফার প্রতিবেদন ধরেই কাজ করেছে। এর বাইরে তারা কোনো বিষয়ে অনুসন্ধান করেনি। সোহাগ-কাণ্ডের পর বাফুফে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছিল ১৭ এপ্রিল। শুরুতেই কমিটির দুই সদস্য পদত্যাগ করেন। দুজন সদস্য কোনো সভাতেই আসেননি। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত শুরু হতেই লেগে গেছে অনেকটা সময়। ২ মে আবার বাফুফের সভায় ঠিক হয়, কমিটির প্রথম সভার পর থেকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে। কমিটির প্রথম সভা বসে ৭ মে, ১৬ জুন তাদের সময় শেষ হয়। অবশেষে কমিটি ঘোষণার প্রায় সাড়ে তিন মাস পর প্রতিবেদন জমা পড়তে যাচ্ছে।

আবু নাঈমকে ফিফা শাস্তি দিয়ে দেওয়ায় কমিটি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে ডাকেনি। তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বাফুফের অন্য পাঁচ বেতনভুক্ত কর্মকর্তাকে। তাঁরা হলেন বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন, সহকারী অর্থপ্রধান অনুপম হোসেন, অপারেশনস ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, কম্পিটিশনস ম্যানেজার জাবের বিন তাহের আনসারি ও গ্রাসরুট ম্যানেজার হাসান মাহমুদ। আবু ও মিজান ছাড়া বাকি তিনজন আবু নাঈমের সঙ্গী হয়ে তাঁর পক্ষে বিভিন্ন কাগজপত্র উপস্থাপন করতে ফিফার দপ্তরে গিয়েছিলেন।

ফিফা এর আগে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছিল আবু নাঈম, আবু হোসেন, অনুপম হোসেনকে। জাবের ও হাসানকে নোটিশে ফিফা কারণ দর্শাতে না বললেও বাফুফের তদন্ত কমিটি তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেছে। সবার কাজেই কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে সবার দায়িত্ব ও কাজের সীমানা এক ছিল না। ফলে একেকজনের একেক রকম ত্রুটি পেয়েছে কমিটি।

অভিযুক্তদের মধ্যে আবু ও মিজান ২২ জুলাই বাফুফের চাকরি ছেড়েছেন। তবে চাকরি ছাড়লেও প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে বাফুফে, এমনটাই মনে করছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে শাস্তির সুপারিশও করা হবে তাঁদের বিরুদ্ধে। কার বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, সেটি অবশ্য নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করছে না কমিটি। সে সিদ্ধান্ত নেবে বাফুফের নির্বাহী কমিটি।

জানা গেছে, প্রতিবেদনে কারও বিরুদ্ধে সরাসরি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে না। কেনাকাটায় প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কথাই থাকছে তাতে। গায়েবি প্রতিষ্ঠান থেকে বল ও ঘাস কাটার মেশিন কেনার প্রমাণ পেয়েছে কমিটি। তারা মনে করছে, ফিফার অর্থায়নে যেসব জিনিস কিনেছে বাফুফে, তা তারা পেয়েছে। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে কেনা হয়নি এগুলো। আর প্রক্রিয়া না মানার অর্থই হলো অনিয়ম-দুর্নীতি।

ফিফার মূল অভিযোগও ছিল বাফুফের কেনাকাটায় অনিয়ম নিয়ে। যেমন বল কেনা হয়েছে কোনো এক টেইলার্স থেকে। ঘাস কাটার মেশিন কেনা হয়নি প্রক্রিয়া মেনে। বিমানের টিকিট কেনা হয়েছে বেশি দামে। কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই বিষয়গুলো অনুসন্ধান করেছে। তবে এসব কেনাকাটায় বাফুফের অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী বা অন্য কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার দায় পায়নি তারা। বিল–ভাউচারসহ সবকিছুতেই স্বাক্ষর করেছেন সাধারণ সম্পাদক। সুতরাং মূল দায় তাঁরই এবং ফিফাও শুধু তাঁকেই নিষিদ্ধ করেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (আজ) কমিটির শেষ সভা। যত দূর জানি, কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে ৩০ জুলাই।’