তাদের বলা হয় ‘আটলাসের সিংহ’। বিশ্বকাপে মরক্কো খেলছেও সিংহের মতো হুংকার ছেড়ে। তাদের থাবায় কুপোকাত হয়েছে বিশ্ব ফুটবলের পরাক্রমশালী দুই দল।
গ্রুপপর্বে বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের শিবিরে নামিয়েছিল কবরের নিস্তব্ধতা। আর শেষ ষোলোয় বাড়ির পথ দেখিয়েছে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে।
মরক্কো যদি সিংহ হয়, তবে তাদের গোলপোস্টের নিচে কাল দাঁড়িয়ে ছিলেন খোদ আটলাস পর্বত—বলছি বুনু ইয়াসিনের কথা। ১০০০ পেনাল্টি শট অনুশীলন করে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে নামা স্পেন বুনু নামের সেই পর্বতকে ভাঙা দূরে থাক গায়ে একটি আঁচড়ও ফেলতে পারেনি। যা মরক্কোকে ২০১০ সালে ঘানার পর দ্বিতীয় দেশ শেষ ষোলোর গণ্ডি পার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
মরক্কোর ইতিহাস গড়ার নায়ক বুনুর জন্ম কানাডায়। চাইলে খেলতেও পারতেন কানাডার হয়েও। কানাডা নয়, বুনু বেছে নিয়েছেন মরক্কোকে। ২০১৩ সাল থেকে খেলছেন মরক্কোর জাতীয় দলের হয়ে। দেশটিকে প্রায় একক কৃতিত্বেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে গেছেন বুনু।
স্পেনের খেলোয়াড়েরা যখনই পেনাল্টি নিতে গিয়েছে, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে পোস্ট আগলে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই গোলরক্ষক। পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে আড়াল করে রেখেছিলেন পোস্ট। তবে পাহাড়ের মতো একেবারে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন না। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়েরা যখনই পেনাল্টি নিতে এসেছেন, পোস্টের সামনে এপাশ-ওপাশ কোমর দুলিয়ে তাঁদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন এই গোলরক্ষক। ফলে স্পেনের তিনজন শট নিতে এসে একজনও গোল করতে পারেননি। কার্লোস সোলের ও সের্হিও বুসকেটসের পেনাল্টি শটও বুনু ঠেকিয়েছেন দারুণ নৈপুণ্যে।
শুধু পেনাল্টি শুটআউটেই নয়, পুরো ম্যাচেই বুনু অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। অন্তত দুটি নিশ্চিত গোলের হাত থেকে দলকে বাঁচিয়েছেন। অবশ্য স্পেনের এই দলটিকে বুনুর হাড়ে হাড়ে চেনার কথা। তিনি নিজেই যে স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার হয়ে খেলেন। শুধু এটুকুই নয়, তাঁর ক্লাব ক্যারিয়ারে প্রায় পুরোটা সময়ই কেটেছে স্পেনে।
২০১২ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে স্পেনের ফুটবলে যাত্রা শুরু করেন বুনু। এরপর আর কখনো স্পেনের বাইরে খেলতে যাননি ৩১ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক। বিভিন্ন সময়ে আতলেতিকো ও সেভিয়া ছাড়া খেলেছেন রিয়াল জারাগোজা ও জিরোনার হয়েও। আর এ কারণেই হয়তো লুইস এনরিকের দলটির বেশির ভাগ খেলোয়াড়কে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। পেনাল্টিতেও হয়তো সেটিকে কাজে লাগিয়েছেন বুনু।
বুনুর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের এটিই একমাত্র উদাহরণ নয়। ২০২০ ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে সেভিয়ার ২-১ গোলে জয়ের পথে ৬টি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
সেবার ফাইনালে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে সেভিয়ার ৩-২ গোলে জয়ের পথেও বুনু বাঁচিয়েছিলেন দুটি নিশ্চিত গোল। সেই পারফরম্যান্সই কাল বুনু ফিরিয়েছেন স্পেনের বিপক্ষে। চমক ধরে রাখতে পর্তুগালের বিপক্ষে শেষ আটের ম্যাচেও বুনুর জাদুর প্রয়োজন হবে মরক্কোর।