চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের উচ্ছ্বাস। কাল রাতে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে
চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের উচ্ছ্বাস। কাল রাতে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে

শুধু ভোরবেলায় ঘাম ঝরিয়েই দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব

গত জুনে চীনা তাইপের বিপক্ষে ঢাকায় দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রতিপক্ষ হিসেবে চীনা তাইপে শক্তিশালী, দুটি ম্যাচের একটিতেও পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে হার ৪–০ গোলে, পরেরটিতে ১–০ ব্যবধানে।

অধিনায়ক সাবিনা খাতুন তখন বলেছিলেন, সাফের আগে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অন্তত দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে চান। কিন্তু জুলাইয়ে ভুটানের বিপক্ষে থিম্পুতে দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছাড়া আর কোনো প্রস্তুতিমূলক ম্যাচই খেলা হয়নি বাংলাদেশ দলের।

ব্যাপারটি নিয়ে আক্ষেপ ছিল। দেশ ছাড়ার আগে সাবিনা বারবার উচ্চারণ করেছিলেন সেটা। সে কারণেই হয়তো জোর গলায় শিরোপা ধরে রাখার কথা বলতে পারছিলেন না। দিনের পর দিন বাফুফে ভবনের চারতলায় ক্যাম্পে থেকে অনুশীলন করে দিন যায় মেয়েদের।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের শিরোপা ধরে রাখতে পারার আনন্দ

এই সাফের মধ্যেই প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবিনা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘শুধু ক্যাম্পে থেকে অনুশীলন করে যদি ফুটবল খেলা যায়, তাহলে বাংলাদেশ নারী দল বিশ্বের সেরা দল।’

সারা বছর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ নেই, আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ তো দূরের কথা। সাফের আগেই প্রতিদিন অন্ধকার থাকতে ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে গিয়ে অনুশীলন করেছেন মেয়েরা। কাকডাকা ভোরে সেই অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েই নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গেছেন তাঁরা।

অনুশীলন থেকে মতিঝিলের বাফুফে ভবনে ফিরে নাশতাটাশতা খেয়ে আবার পরের দিনের অনুশীলনের জন্য অপেক্ষা। এমন বন্দিজীবনে থেকেও কী প্রাণোচ্ছল, কী দুর্দান্ত তাঁরা। একবার ভেবে দেখুন তো, এই সাবিনা, ঋতুপর্ণা, সানজিদা, মারিয়া, মনিকা, রুপনা, শামসুন্নাহার, তহুরাদের যদি নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলানো যেত, আরও কতটা ধারালো হতেন তাঁরা।

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি নিতে কাকডাকা ভোরে অনুশীলন করেছেন রুপনা–শামসুন্নাহাররা

আন্তর্জাতিক ম্যাচের পাশাপাশি বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ ওই প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ না খেলাই। যতই ক্যাম্পে থাকা হোক, সেখানে থেকে অনুশীলন হোক, ফুটবলারদের জন্য যদি লিগ বা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের আয়োজন না করা যায়, উন্নতির গতি ধীরই থাকবে।

যে মেয়েরা দেশকে পরপর দুটি সাফ উপহার দিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব উপহার দিলেন, তাঁদের নিয়েই দল গড়ে লিগ খেলতে রাজ্যের অনীহা বাংলাদেশের শীর্ষ ক্লাবগুলোর। একজন নারী ফুটবলার একবার খুব কষ্ট নিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের একজন পুরুষ ফুটবলারের সারা বছরের বেতন দিয়েই যেকোনো ক্লাব মেয়েদের একটি দল গড়তে পারে।’

এ বছরের শুরুতে নামকাওয়াস্তে একটা লিগ হয়েছিল মেয়েদের। সেখানে আবাহনী, মোহামেডান, বসুন্ধরা কিংসের মতো শীর্ষ কোনো ক্লাবই অংশ নেয়নি। বাফুফেকে অন্তত ধন্যবাদ দিতে হয়, তারা যেভাবেই হোক, মেয়েদের একটা লিগ অন্তত করতে পেরেছিল। তবে সেটি কোনোভাবেই প্রচলিত মানের ধারেকাছেও নেই।

দেশে ফেরার পর আবারও ছাদখোলা বাসে সাবিনা–শামসুন্নাহারদের আনন্দযাত্রা দেখা যাবে

টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ জিতে মেয়েরা ফিরবেন। প্রতিশ্রুতির পুরস্কার তাঁরা অনেক পাবেন। কিন্তু যেটি তাঁদের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হবে, তা হচ্ছে নিয়মিত খেলা। সেটি লিগ হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ফুটবলই হোক।

মেয়েদের ফুটবল দলকে অন্য স্তরে যদি আমরা দেখতে চাই, তাহলে এসবের বিকল্প নেই।