ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের আলিঙ্গনে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা
ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের আলিঙ্গনে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা

‘সুখী’ কাবরেরা আপাতত উদ্‌যাপন করবেন এই জয়

‘হাভিয়ের কাবরেরা সেই কথাটিই আবারও বললেন। মালদ্বীপকে পেরিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নিতে না পারলে বড় ক্ষতিই হয়ে যেত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের। সে কারণেই প্রাথমিক রাউন্ডের এ দুটি ম্যাচকে বাঁচামরার লড়াই–ই মনে করছিলেন তিনি। মালদ্বীপকে হারাতে না পারলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকেই অনেকটা সময়ের জন্য নির্বাসনে চলে যেত বাংলাদেশ দল

আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের বাইরে কোনো ফিফা বা এএফসির ম্যাচ থেকে দূরেই থাকতে হতো। ২০১৬ সালে যেমনটা হয়েছিল। সেবার বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভুটানের কাছে হেরে ৩২ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরেই থাকতে হয়েছিল জামাল ভূঁইয়াদের। কাবরেরা সেই ভয়টাই পাচ্ছিলেন।

কাবরেরার কথায়, ‘এটা হলে জাতীয় দলের উন্নতি থেমে যাওয়ার শঙ্কা ছিল।’ সেই শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপ–মিশনে সফল তিনি। আনন্দিত জাতীয় দলকে নিয়ে তিনি এখন ‘আরও বড় চ্যালেঞ্জ’ তাড়া করবেন বলে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে (মূল গ্রপপর্ব) যে বাংলাদেশের অপেক্ষায় আছে অস্ট্রেলিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিনের মতো শক্তিশালী দল।

বাংলাদেশের জয়সূচক গোল করা ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের উচ্ছ্বাস

প্রথম লেগে মালেতে হারতে হারতে বেঁচেছিল বাংলাদেশ। গোল মিসের মহড়ার মধ্যেই ৮৬ মিনিটের গোলে পিছিয়ে গিয়েছিলেন জামাল ভূঁইয়ারা। কিন্তু ৮৯ মিনিটে মাঠে নেমে যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সমতা ফিরিয়ে এনে সাদউদ্দিন হয়ে যান নায়ক। ১–১ গোলে সেই ড্রয়ের ম্যাচের পর ঘরের মাঠে কাবরেরা ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন জয়কে। মালেতেই বলে এসেছিলেন সেটি।

কিংস অ্যারেনার ম্যাচটা মালের ম্যাচের মতোই কঠিন ছিল। কুশলী খেলোয়াড়ে ঠাসা মালদ্বীপ দলটা আজ চ্যালেঞ্জও ছুড়েছিল। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ উতরে ম্যাচ জিতে কাবরেরা বলেছেন, তিনি আগামী কয়েক দিন ভালো করে জয়টা উদ্‌যাপন  করবেন, ‘মাঝমাঠ ও আক্রমণে ওদের অনেক মানসম্মত ফুটবলার ছিল। তবে আমরা তাদের আটকেছি। অনেক কঠিন ম্যাচ ছিল আমাদের জন্য। আমরা খুব ভালো শুরু করেছি। এরপর ওরা গোল করে আমাদের শাস্তি দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত খেলোয়াড়দের পরিশ্রম, প্রতিশ্রুতির কল্যাণে জিতেছি। এখন কয়েক দিন আমরা উদ্‌যাপন করব। আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়া যাব।’ আগামী ১৬ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের অ্যাওয়ে ম্যাচটি মেলবোর্নে।

ঘরের মাঠে স্নায়ুক্ষয়ী লড়াই–ই করেছে বাংলাদেশ। কাবরেরা সেটিও জানালেন। তবে তাঁর সবচেয়ে আনন্দ খেলোয়াড়েরা স্নায়ু ঠিক রেখে লড়েছে বলে, ‘মালদ্বীপের ম্যাচের পর আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছি ঘরের মাঠে আরও ভালো করব। সেটা আমরা পেরেছি। নার্ভাস হওয়া চলবে না। ম্যাচে বেশ কিছু কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মাঠের পরিবেশ আমাদের সহায়তা করেছে। দিন শেষে আমাদের জন্য স্বস্তির। ৬ থেকে ৮ মাস মাস একটা প্রক্রিয়ার মধ্য ছিলাম। আজকের জয়টা আমাদের জন্য সুখের, আনন্দের।’

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলের জয় উদ্‌যাপন

গোল মিস আজকের ম্যাচেও হয়েছে। সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে আজকে অন্তত তিন গোলে জেতার কথা বাংলাদেশ দলের। তবে কাবরেরা গোল মিসে কোনো সমস্যা দেখছেন না, ‘রাকিব দারুণ খেলেছে। ফাহিম দারুণ খেলেছে। সবাই ভালো খেলেছে। আমরা ৭-৮টা সুযোগ পেয়েছি। স্ট্রাইকার ছাড়া খেললাম, নাকি স্ট্রাইকার নিয়ে খেললাম, সেটা কি কোনো পার্থক্য তৈরি করেছে? করেনি।’

আজকের ম্যাচে প্রথমে গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন রাকিব হোসেন। মালের অ্যাওয়ে ম্যাচেও দুর্দান্ত খেলেছেন তিনি। সাদউদ্দিনের যোগ করা সময়ের গোলটিও রাকিবের অ্যাসিস্ট থেকেই। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ১১ জন মিলে লড়েছি দুই ম্যাচেই। আমাদের দলে দুর্দান্ত প্রতিভাবান কোনো খেলোয়াড় নেই। কিন্তু আমরা দল হিসেবে খেলেছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল, আমরা দেশের মানুষকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেব। আমরা সেটি পেরেছি।’