এবারের লা লিগা মৌসুমে পাঁচবার বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হয়েছেন ভিনিসিয়ুস
এবারের লা লিগা মৌসুমে পাঁচবার বর্ণবাদী   আক্রমণের শিকার হয়েছেন ভিনিসিয়ুস

বর্ণবাদী আচরণ নিয়ে উল্টো ভিনিসিয়ুসকেই কাঠগড়ায় তুললেন লা লিগা সভাপতি

মায়োর্কা, রিয়াল ভায়াদোলিদ, আতলেতিকো মাদ্রিদ, বার্সেলোনার পর ভ্যালেন্সিয়া—লা লিগার এবারের মৌসুমে এ নিয়ে পাঁচবার প্রতিপক্ষের মাঠে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। গতকাল ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে বর্ণবাদের শিকার হওয়ার পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভিনি। একের পর এক বর্ণবাদের ঘটনায় দায়ী করেন লা লিগা কর্তৃপক্ষকে।

অভিযোগের তির যাঁর দিকে, এবার সেই লা লিগা প্রধান হাভিয়ের তেবাসই উল্টো ভিনিসিয়ুসকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। লা লিগা সভাপতি অভিযোগ করেছেন, বর্ণবাদ বিষয়ে ভিনিসিয়ুস তাঁদের যথাযথ সহযোগিতা করছেন না। যার জবাবে পাল্টা টুইট করেছেন ভিনিসিয়ুসও।

কাল মেস্তায়া স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদের হারের ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়ার এক সমর্থক ভিনিকে উদ্দেশ করে কিছু একটা বলেন। জবাবে সেই দর্শকের দিকে তেড়ে যান রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। ম্যাচের শেষ দিকে ভ্যালেন্সিয়া খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে লাল কার্ড দেখানো হয় তাঁকে।

মেজাজ হারিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন ভিনিসিয়ুস

ম্যাচ শেষে বর্ণবাদ নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভূমিকার সমালোচনা করেন ভিনিসিয়ুস। ২২ বছর বয়সী তারকা টুইটারে লেখেন, ‘এটা প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার নয়। লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ কর্তৃপক্ষ ও স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন এটা মনে করে এবং সমর্থকদের দলগুলো সাহস জোগায়।’ সঙ্গে এ–ও বলেন, ‘বলতে বাধ্য হচ্ছি, স্পেন আজ ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।’

ভিনিসিয়ুসের বক্তব্যের পর লা লিগার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন করতে ম্যাচের সব ছবি ও ভিডিও নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে ঘৃণিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে লা লিগা সভাপতি তেবাসের টুইটে ছিল ভিন্ন সুর। তিনি ভিনিসিয়ুসের টুইটের জবাবে লেখেন, ‘বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লা লিগা কী করে এবং করতে পারে, এ বিষয়ে যেহেতু ব্যাখ্যা করা হয়নি, আমরা আপনাকে সেটা ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিজেরই অনুরোধ করা নির্ধারিত দুটি তারিখে আপনি উপস্থিত হননি। লা লিগার সমালোচনা ও অপমান করার আগে নিজের সম্পর্কে সঠিকটা জানা উচিত। নিজেকে অন্যের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার হতে দেবেন না। নিশ্চিত করুন যে উভয় পক্ষের কর্মদক্ষতা এবং আমরা একত্রে যা করছি, সে সম্পর্কে আপনার সম্পূর্ণ জানাশোনা আছে।’

লা লিগা সভাপতির এমন মন্তব্য ভালো লাগার কথা নয় ভিনিসিয়ুসের। তেবাসের টুইটের দুই ঘণ্টা পর পাল্টা জবাবও দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, ‘বর্ণবাদের সমালোচনা করার বদলে আবারও লা লিগা প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাকে আক্রমণ করলেন। আপনি যত কথাই বলুন, কিছু না পড়ার ভান করুন, আপনার চ্যাম্পিয়নশিপের সুনামে ধাক্কা লেগেছে। আপনার পোস্টের নিচের মন্তব্য দেখুন, অবাক হবেন...। (এ বিষয় থেকে) আপনার নিজেকে সরিয়ে নেওয়া বর্ণবাদেরই সমান্তরাল। আপনি আমার বন্ধু নন যে বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলব। আমি চাই ব্যবস্থা গ্রহণ ও শাস্তি। হ্যাশট্যাগে আমার কিছু যায় আসে না।’

এ দিকে ভিনিসিয়ুসের সমর্থনে কথা বলেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, লুলা দা সিলভা বলেছেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়ের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও সে জীবনে সফল হয়েছে। ওর বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অবশ্যই সে রিয়াল মাদ্রিদের সেরা। অথচ সে যে স্টেডিয়ামেই খেলতে যাচ্ছে, আক্রমণ করা হচ্ছে।’

ভিনিসিয়ুসকে রক্ষা করতে ও বর্ণবাদী আক্রমণ বন্ধ করতে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, ‘আমার মনে হয়, ফিফা, স্প্যানিশ লিগ ও অন্য দেশগুলোর লিগ কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ফুটবল স্টেডিয়ামে ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদকে আমরা আধিপত্য বিস্তার করতে দিতে পারি না।’