কখনো প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়ার পর গুবলেট পাকিয়েছেন, কখনো নিয়েছেন লক্ষ্যভ্রষ্ট শট। আবার কখনো কখনো পড়েছেন অফসাইডের ফাঁদে, ফ্রি হেডারগুলো উড়ে গেছে বারের ওপর দিয়ে।
এভাবে গোলের সুযোগ নষ্ট করায় বছরখানেক আগেও ট্রলের শিকার হতেন মার্কাস রাশফোর্ড। সেই রাশফোর্ডই গত মৌসুমে কী করে যেন বদলে গেলেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই ইংলিশ উইঙ্গার ২০২২–২৩ মৌসুমে সব ধরনের ক্লাব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করেছেন ৩০ গোল; যা মূল দলের হয়ে তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯–২০ মৌসুমে করা ২২ গোল ছিল সর্বোচ্চ। শুধু তা–ই নয়, গত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে উইঙ্গারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা রাশফোর্ড। লিগে তিনি করেছিলেন ১৭ গোল। ১৯ গোল নিয়ে তাঁর ওপরে ছিলেন শুধু লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ।
সম্প্রতি ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছেন রাশফোর্ড। সাপ্তাহিক ৩ লাখ পাউন্ড (৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা) পারিশ্রমিকে ম্যানচেস্টারের ক্লাবটির সঙ্গে ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এবার তাঁর লক্ষ্যটা আরও বড়।
নতুন মৌসুম সামনে রেখে কাল ইউনাইটেডের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার গ্যারি নেভিলের ইউটিউব চ্যানেল ‘দ্য ওভারল্যাপ’কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রাশফোর্ড। সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ২০২৩–২৪ মৌসুমে ফিট থাকলে ৪০ গোল করতে চান, ‘গত মৌসুমের আগেও আমি বারবার বলেছি, মৌসুমে ২০ গোল একজন উইঙ্গারের পারফরম্যান্সের মাপকাঠি হিসেবে ভালো। তবে সর্বশেষ মৌসুমে ৩০ গোল করেছি। এবার আমাদের আরও বড় কিছু করতে হবে। গত মৌসুমের শেষ দিকে চোট আমাকে বেশ ভুগিয়েছে। আমি সে সময় সেরাটা দিতে পারিনি। তখন কিছুটা গোলখরাও শুরু হয়েছিল। আমার মনে হয়, এবার চোটমুক্ত থাকতে পারলে ৩৫, এমনকি ৪০ গোলও পেয়ে যেতে পারি।’
ইউনাইটেডের মূল দলের হয়ে এখন পর্যন্ত ১২৩ গোল করেছেন রাশফোর্ড। ২৫৩ গোল নিয়ে ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা ওয়েইন রুনি। রুনিকে ছাড়িয়ে যেতে চাইলে আগামী ৫ মৌসুমে রাশফোর্ডকে আরও ১৩১ গোল করতে হবে, মানে মৌসুমপ্রতি ২৬–২৭টি।
রাশফোর্ড কি পারবেন রুনির রেকর্ডটা নিজের করে নিতে? এই প্রশ্নের জবাবে ২৫ বছর বয়সী উইঙ্গার বলেছেন, ‘সামনে কী ঘটতে চলেছে, আপনি এখনই বলে দিতে পারবেন না। আমার কাজ হলো যত বেশি সম্ভব গোল ও অ্যাসিস্ট করে যাওয়া। ধারাবাহিকভাবে গোল করতে পারলে (রুনিকে ছাড়িয়ে যাওয়া) অবশ্যই সম্ভব।’
রুনির সঙ্গে নাকি এ ব্যাপারে তাঁর কথাও হয়েছে, ‘আসলে এ ব্যাপারে (রুনির রেকর্ড ভাঙা) রুনির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি চান আমি তাঁকে ছাড়িয়ে যাই। তিনি বলেছিলেন, “তুমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেই বেড়ে উঠেছ। তুমি এই ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারলে আমার ভালোই লাগবে।” সুযোগ পেলে আমি এটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল ও দ্য সান তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, রাশফোর্ডের বদলে যাওয়ার রহস্য নাকি ‘বরফ থেরাপি’। এই চিকিৎসা নিতে ম্যানচেস্টারের মোববার্লে নামের একটি গ্রামের হেলথ ক্লাবে যান। সেই হেলথ ক্লাবটি যুক্তরাজ্যের সেরা ব্যায়ামাগারের স্বীকৃতি পেয়েছে। এর খুব কাছেই নতুন বাড়ি বানিয়েছেন রাশফোর্ড। রুনির বাড়িও একই এলাকায়।
যদিও রুনি এখন মোরবার্লের বাড়িতে কেন, যুক্তরাজ্যেই থাকেন না। ২০২১ সালে খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলা ইংলিশ তারকা এখন পুরোদস্তুর কোচ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ডিসি ইউনাইটেডের দায়িত্বে আছেন রুনি।