ক্লাব ফুটবলে ‘সিটি’ নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার সিটি। এর মালিকানায় আছে সিটি ফুটবল গ্রুপ (সিএফজি) নামের একটি হোল্ডিং কোম্পানি, যারা বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি ফুটবল ক্লাব পরিচালনা করে থাকে।
ম্যানচেস্টার সিটি নামের সঙ্গে মিল রেখে অধিকাংশ ক্লাবের নামের শেষে সিটি যুক্ত করা আছে। ক্লাবগুলো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে—ইউরোপে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, বেলজিয়াম ও ইতালি; এশিয়া মহাদেশে চীন, জাপান ও ভারত; উত্তর আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্র; ওশেনিয়ায় অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ব্রাজিল ও উরুগুয়েতে।
সিটি ফুটবল গ্রুপের ক্লাবগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার সিটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দল। ২০২৩ সালে ইউরোপের ট্রেবল জেতা এই ক্লাব সর্বশেষ দুই বছরে ব্যালন ডি’অরে বর্ষসেরা ক্লাবের স্বীকৃতি পেয়েছে।
পেপ গার্দিওলার অধীন ম্যানচেস্টার সিটি চলতি মৌসুমেও চেনা ছন্দে এগিয়ে চলছে। নিজ লিগে ভালো অবস্থানে আছে স্পেনের জিরোনাসহ আরও কয়েকটি ক্লাবও। সিটি ফুটবল গ্রুপের ছায়াতলে থাকা ক্লাবগুলো এই মুহূর্তে কে কোথায়, সেটিই দেখে নেওয়া যাক এবার।
প্রিমিয়ার লিগে তৃতীয়
২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার সিটিকে ২১ কোটি পাউন্ডে (প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা) কিনে নেয় আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ। পরে এই সিটিকে কেন্দ্র করেই ২০১৩ সালে তৈরি করা হয় সিটি ফুটবল গ্রুপ নামের কোম্পানি। যেখানে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি ইকুইটি কোম্পানি সিলভার লেক হোল্ডিং এবং চাইনিজ ফার্ম চায়না মিডিয়া ক্যাপিটাল ও সিআইটিআইসি ক্যাপিটাল।
আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপের মালিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজপরিবারের সদস্য ও দেশটির ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী শেখ মনসুর। সিটি ফুটবল গ্রুপে তাঁর একারই ৮১ শতাংশ মালিকানা। বাকি অংশের মধ্যে ১৮.১৬ শতাংশ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির, চীনা প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা মাত্র ১ শতাংশ।
শেখ মনসুর কিনে নেওয়ার পর গত ১৫ বছরে ক্লাবটি ৭টি প্রিমিয়ার লিগ, ৩টি এফএ কাপ, ৬টি লিগ কাপ এবং ১টি করে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও উয়েফা সুপার কাপ জিতেছে। চলতি ২০২৩–২৪ মৌসুমেও সিটি ভালো ছন্দে আছে। এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় স্থানে ছিল গার্দিওলার দল। এরই মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোও নিশ্চিত করেছে তারা। আর এ মাসেই দলটি খেলবে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপেও।
এমএলএস ইস্টার্ন কনফারেন্সে ১১তম
সিএফজি গঠনের পর প্রথম কেনা ক্লাব নিউইয়র্ক সিটি এফসি। ২০১৩ সালের মে মাসে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে কেনা হয় মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাবটি। এর ৮০ শতাংশ মালিকানা সিএফজির, বাকি ২০ শতাংশ ইয়াংকি গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজের। এমএলএসের ইস্টার্ন কনফারেন্সে প্রথম বছর ১৭তম হয় নিউইয়র্ক সিটি এফসি। এরপরে ক্লাবটির অবস্থান ছিল যথাক্রমে দ্বিতীয়, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং প্রথম। ২০২১ সালে এমএলএসে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ক্লাবটি এ বছর মৌসুম শেষ করেছে ১১তম হয়ে।
এ–লিগে সপ্তম
অস্ট্রেলিয়ার এ–লিগে খেলা মেলবোর্ন সিটির শতভাগ মালিকানা সিএফজির। ২০২১ সালে এ–লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় মেলবোর্ন সিটি, ২০১৬ সালে জেতে অস্ট্রেলিয়ান কাপ। এবারের এ–লিগে ৬ ম্যাচ শেষে মেলবোর্ন সিটির অবস্থান সপ্তম। ১২ দলের লিগে ম্যাচ হবে ২৬টি করে।
জে–ওয়ান লিগে দ্বিতীয়
সিএফজি ইয়োকোহামা এফ মারিনোসের মালিকানায় যুক্ত হয় ২০১৪ সালে, যেখানে সিংহভাগ মালিকানা নিশান মোটরসের। ২০১৯ সালে মারিনোস জাপানের শীর্ষ প্রতিযোগিতা জে–ওয়ান লিগ জেতে, যা ২০০৪ সালের পর দলটির প্রথম কোনো শিরোপা। গত বছর আবারও লিগ জেতে ক্লাবটি। যদিও ২০২৩ সালে ভিসেন্তে কোবের পেছনে থেকে মৌসুম শেষ করতে হয়েছে তাদের।
প্রিমেরা ডিভিশনে নবম
তোর্ক নামে পরিচিত ক্লাবটির সঙ্গে সিএফজি যুক্ত হয় ২০১৭ সালে। তিন বছর পরে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা মন্টেভিডিও সিটি তোর্ক। সিএফজি আসার পর প্রথম মৌসুমে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রিমেরা ডিভিশনে উঠে আসে মন্টেভিডিও সিটি। তবে পরের মৌসুমেই লিগ থেকে আবার অবনমন ঘটে। আবারও লিগে ফিরে আসা মন্টেভিডিও সিটি এখন ১৬ দলের লিগে ১৪ ম্যাচ শেষে ৭ নম্বরে। মন্টেভিডিও সিটি মূলত লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড় খোঁজাখুঁজির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
লা লিগায় দ্বিতীয়
লা লিগায় চলতি মৌসুমের চমকের নাম জিরোনা। ২০১৭ সালে এই ক্লাবটির ৪৪.৩ শতাংশ মালিকানা কেনে সিএফজি। এর মালিকানায় আছে জিরোনা ফুটবল গ্রুপ, যার প্রধান ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার ভাই পেরে। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো লা লিগায় উঠে আসা ক্লাবটি এ বছর রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনাকে লিগের লড়াইয়ে চাপে ফেলেছে। ১৫ ম্যাচ শেষে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগে দুইয়ে আছে জিরোনা।
দ্বিতীয় স্তরে চ্যাম্পিয়ন
সিএফজি সিচুয়ান জিউনিউর ২৮ শতাংশ মালিকানা কেনে ২০১৯ সালে। বর্তমানে ক্লাবটির অন্তর্বর্তীকালী কোচের দায়িত্বে আছেন হেসুস তাতো, যিনি সিএফজি মালিকানার মুম্বাই সিটির সহকারী কোচ ছিলেন। চলতি বছর চীনের পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর লিগ ওয়ানে চ্যাম্পিয়ন হয় সিচুয়ান জিউনিউ। আগামী বছর দলটি প্রথমবারের মতো চাইনিজ সুপার লিগে অংশ নেবে। অবশ্য এই ক্লাবের নামের সঙ্গে এখনো ‘সিটি’ যোগ করা হয়নি।
আইএসএলে পঞ্চম
ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) দল মুম্বাই সিটিতে সিএফজির বিনিয়োগ শুরু ২০১৯ সালে। এর ৬৫ শতাংশ মালিকানা তাদের। মুম্বাই সিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন খালদুন আল–মুবারক, যিনি ম্যানচেস্টার সিটি এবং মেলবোর্ন সিটিতেও একই দায়িত্বে আছেন। ২০২০–২১ মৌসুমের পর ২০২২–২৩ মৌসুমে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বাই সিটি। এ মৌসুমে প্রথম পাঁচ ম্যাচ খেলে ৫ নম্বরে আছে তারা।
চ্যালেঞ্জার প্রো লিগে পঞ্চম
বেলজিয়ামের ক্লাবটি খেলে দ্বিতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা চ্যালেঞ্জার প্রো লিগ। সিএফজি এই ক্লাবটির মালিকানায় আসে ২০২০ সালের মে মাসে। সাবেক আর্সেনাল ডিফেন্ডার স্টিভ বোল্ডের অধীনে খেলা লোমেল এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জার প্রো লিগের ৫ নম্বরে আছে। ৩২ ম্যাচের লিগে এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচ খেলেছে দলটি।
লিগ টুতে ১৭তম
বেলজিয়ামের লোমেল কেনার চার মাস পর ফরাসি ক্লাব ত্রয়াকে কিনে নেয় সিএফজি। ২০২০–২১ মৌসুমে লিগ আঁতে উঠে আসা দলটি শীর্ষ স্তরে খেলে দুই মৌসুম। এখন অবনমিত হয়ে লিগ টু–তে। যেখানে ১৬ ম্যাচ শেষে দলটির অবস্থান ১৭ নম্বরে।
সিরি বি–তে পঞ্চম
২০২২ সাল থেকে পালেরমোর ৯৪.৫ শতাংশ মালিকানা সিএফজির। ক্লাবটি এখন ইতালির দ্বিতীয় স্তর সিরি বি–তে খেলে। ২০২৩–২৪ মৌসুমের ১৫ ম্যাচ শেষে পালেরমোর অবস্থান সেখানে ৮ নম্বরে।
সিরি আ–তে ১৭তম
ব্রাজিলের শীর্ষ প্রতিযোগিতা সিরি আ–তে খেলা বাহিয়া এখন অবনমন অঞ্চলে অবস্থান করছে। ২০ দলের লিগের শেষ চারটি পরের স্তরে নেমে যায়, বাহিয়া সেখানে ১৭ নম্বরে। সিরি আ-তে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে এখনো অবশ্য দুটি ম্যাচ আছে তাদের। ব্রাজিলের উত্তর–পূর্ব অঞ্চলের ক্লাবটির ৯০ শতাংশ মালিকানা সিএফজির, যেটি তারা কেনে এ বছরের মে মাসে।
প্রিমেরা ডিভিশনে দ্বিতীয়
২০২১ সালে বলিভিয়ার এই দলটিকে সিএফজির প্রথম পার্টনার ক্লাব হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। দেশটির প্রিমেরা ডিভিশনে ক্লাব বলিভার এখন দুইয়ে অবস্থান করছে।