সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা

বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসী, তবে অতি আত্মবিশ্বাসী নয়, বললেন কাবরেরা

গত জুনে বেঙ্গালুরুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যে জয়টি ১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে খেলার পথ দেখিয়েছিল হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যদের, সেই মালদ্বীপের বিপক্ষেই ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে খেলতে নামার আগে কি একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী?

বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা এ ব্যাপারে সতর্কই করে দিয়েছেন খেলোয়াড়দের। তিনি মনে করেন, মালদ্বীপের সঙ্গে যখন তাদেরই মাঠে তাঁর দল খেলতে নামবে, তখন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভোগার কোনো সুযোগ নেই, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দল হিসেবে যেভাবে খেলেছি, আমার দলেরই কিছু খেলোয়াড় এশিয়ান গেমসে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, তাতে আমরা আত্মবিশ্বাসী ঠিকই, কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মালদ্বীপ দলটাকে জানি, চিনি। আমরা জানি, তারা কতটা কী করতে পারে। আমাদের সাবধান হতে হবে, নয়তো মাঠে ভুগতে হবে।’

বেঙ্গালুরুর সাফে মালদ্বীপকে হারানোর সঙ্গে সঙ্গে লেবানন ও কুয়েতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে দারুণ লড়াই খেলোয়াড়দের অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচেও প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে খেলার প্রবণতা ছিল। দেশ ছাড়ার আগে কাবরেরা সে ব্যাপারে বলেছেন। নিজের সন্তুষ্টিও জানিয়েছেন সেটি নিয়ে।

বাংলাদেশ ফুটবল দল যে এখন শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষেও সমানতালে লড়তে পারে, কাবরেরার আত্মতুষ্টির জায়গাটা সেটিই। হাংজু এশিয়াডে তিনটি ম্যাচেই অনূর্ধ্ব-২৩ দল লড়াই করেছে। গেমসে চীনের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ে স্বাভাবিকভাবেই খেলোয়াড়দের মধ্যে মালদ্বীপ নিয়ে কিছুটা গা ছাড়া ভাব আসতে পারে। কাবরেরা আজ মালেতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তাই খেলোয়াড়দের সাবধানই করে দিয়েছেন।

মালদ্বীপে পৌঁছেই অনুশীলনে নেমে পড়েছে বাংলাদেশ দল

মালদ্বীপের বিপক্ষে মালেতে বাংলাদেশের কোনো জয় নেই। মালদ্বীপের বিপক্ষে যদিও ৮-০ গোলের এক বিশাল জয় আছে। কিন্তু সেটি তো ৩৮ বছর আগের কথা। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সাফ গেমসে সেই জয়টি আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এখন পর্যন্ত। ১৯৮৪ সালেও মালদ্বীপের বিপক্ষে আছে ৫-০ গোলের বড় জয়।

কিন্তু এরপর তো ভারত মহাসাগরের জল অনেক গড়িয়েছে। মালদ্বীপ ফুটবল উঠে গেছে অনেক ওপরে। এরপর মালদ্বীপ ক্রমে বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠেছে প্রবল প্রতিপক্ষ। ১৯৯৯ সাফ গেমসে মালদ্বীপের কাছে প্রথম হার, এর আগে-পরে আছে ড্রয়ের ইতিহাস। ২০০৩ সালে ঢাকার সাফ ফুটবলে গ্রুপ পর্বে ১-০ গোলে জয়ের পর ১৮ বছর এই দলটার সঙ্গে জিততেই পারেনি বাংলাদেশ। যদিও সেই সাফেরই ফাইনালে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে একমাত্র শিরোপাটি জিতেছিল বাংলাদেশ। টাইব্রেকারের জয় তো ‘অমীমাংসিত ম্যাচ’ হিসেবে ধরা হয়।

২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার চার জাতি ফুটবলে মালদ্বীপকে হারিয়ে ১৮ বছরের খরা কাটিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তার কিছুদিন আগেই মালেতে সাফের লড়াইয়ে দেখেছিল আরও একটি হার। মালেতে কাবরেরার অধীনেও ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। তাই কালকের ম্যাচ জামাল-রাকিব-তারিক কাজীদের জন্য কঠিনই।

ইতিবাচক ফলের অপেক্ষায় কাবরেরা

মালের সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য কাল ‘ইতিবাচক ফলে’র কথাই বলেছেন কাবরেরা, ‘আমাদের খেলোয়াড়েরা জানে, এই ম্যাচ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মালদ্বীপকে হারাতে পারলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী দলের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাব। বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে শক্তিশালী দলের চ্যালেঞ্জটা গুরুত্বপূর্ণ। হেরে গেলে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের আগে আমাদের কোনো ম্যাচ নেই।’

মালদ্বীপের বিপক্ষে ইতিবাচক ফল বলতে জয়ই বোঝাচ্ছেন কাবরেরা। কাজটা কঠিন। তবে কাবরেরা আশাবাদী, ‘আমরা কালকের ম্যাচের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। আমরা সবাই রোমাঞ্চিত। আমাদের সব খেলোয়াড় অনুপ্রাণিত। আমরা চ্যালেঞ্জটা নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত।’