দুর্দান্ত এক ম্যাচ দেখলাম। স্পেন বনাম জার্মানি। সাবেক দুই বিশ্বসেরার লড়াইটা মনে রাখার মতো। এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে টেকটিক্যালি সবচেয়ে সমৃদ্ধ ম্যাচ আমার চোখে।
দুই দলই সতর্ক শুরু করেছে। হারতে চায়নি কেউই। কোনোভাবে হারা চলবে না এমন একটা অনমনীয় মনোভাব ছিল দুই দলের মধ্যে। দুই দলই খুব ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। দুই শিবিরের তরুণ ব্রিগেডের কাছ থেকেই দৃষ্টিনন্দন ফুটবল দেখা গেছে। ম্যাচে সৌন্দর্যও ছিল। এমন নয় যে খুব বাজে ট্যাকলিং হয়েছে।
আসলে অঙ্ক কষে ফুটবল খেলেছে দুই পরাশক্তি। হঠাৎ হঠাৎ পাসের গতিগথ বদল করেছে দুই দলই। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচটা অসাধারণ হয়ে উঠে। ম্যাচটা কখনোই একঘেঁয়ে বা বিরক্তিকর লাগেনি। প্রশংসা করব দুই গোলকিপারের। তাঁদের বিপক্ষে একটি করে গোল হয়েছে। কিছু ভুলও করেছেন দুজন। আবার দুজনই নিজ নিজ দলকে জীবন দিয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ এক লড়াই।
কোস্টারিকাকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার সুখস্মৃতি নিয়েই স্পেন মাঠে নেমেছিল। তবু স্পেন কখনো আত্মতৃপ্তিতেই ছিল না যে জার্মানির কাছে হারলেও সমস্যা নেই। বরং জয়ের খিদে ছিল ভেতরে। নিজেদের বল দখলে রাখার ক্ষমতার সঙ্গে পাসিং দক্ষতাও তারা এদিন দেখিয়েছে।
স্পেনের বল পজেশন বেশি ছিল সন্দেহ নেই। তারা বল হারাতে চায়নি, অলক্ষ্য ভয় ছিল দ্রুত প্রতিআক্রমণে উঠে এসে জার্মানি গোল করে ফেলে। ফলে কোনো উচ্চাভিলাসী পাস খেলতে চাননি বুসকেতসরা। প্রতিপক্ষ রক্ষণ ভাঙতে কখনো ডানে কখনো বাঁয়ে যেভাবেই হোক ফাঁকফোকর খোঁজার চেষ্টা করেছে স্পেন। রক্ষণে ঢুকতে না পারলে দেখা গেছে আবার পেছনে এসেছে। স্পেন এগিয়ে ছিল ম্যাচে। স্প্যানিশ খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নেপুণ্যও বেশ ভালো। সব মিলেয়ে স্পেনের খেলার প্রশংসা করতেই হয়।
প্রশংসা পাবে জার্মানিও। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তাদের আগেই। জাপানের কাছে প্রথম ম্যাচে ১-২ গোলে হার খাদের কিনারে দাঁড় করায় টমাস মুলারদের। কিন্তু প্রথম ম্যাচের হারের ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে স্পেনের সঙ্গে এমন একটা ম্যাচ খেলেছে জার্মানি। প্রতি আক্রমণে বেশ ভয় ধরিয়েছিল তারা স্পেনশিবিরে। করতে পারত একাধিক গোল।
অন্যদিকে জার্মান রক্ষণ এদিন খুব ভালো করেছে। স্পেনের ফরোয়ার্ডদের কোনো জায়গাই দিতে চায়নি।
তারপরও জার্মানির বিপক্ষে একটা গোল হয়েছে, সেই গোল ব্যক্তিগত ঝলকের দারুণ এক উদাহরণ। মোরাতা যেভাবে চলন্ত বলটা বুটের মাথা দিয়ে জালের দিকে ঘুরিয়ে দিল সেটা সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। জার্মানির গোলটাও ছিল দেখার মতো। সব মিলিয়ে ম্যাচ থেকে চোখ সরানো যায়নি। এটাই হচ্ছে আধুনিক কালের হিসেবি ফুটবল, যেখানে আসল খেলাটা দুই কোচ খেলেছেন ডাগআউটে দাঁড়িয়ে।
শেষ পর্যন্ত জেতেননি কেউ। তবে স্পেনের সঙ্গে এই ড্রটা জার্মানিকে নতুন জীবন দিল। কে জানে জার্মানি অনেক দূর চলে যাবে না!