আর্জেন্টিনা তারকা লিওনেল মেসি ও নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফন গাল
আর্জেন্টিনা তারকা লিওনেল মেসি ও নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফন গাল

কাতার থেকে উৎপল শুভ্র

মেসি বনাম ফন গাল

শেষ আটে আজ একই দিনে মাঠে নামছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। মেসির দলের সামনে নেদারল্যান্ডস। কেমন হবে সেমিফাইনালে ওঠার এই লড়াই? দোহা থেকে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন উৎপল শুভ্র

লিওনেল মেসি বনাম ভার্জিল ফন ডাইক?

বড্ড ক্লিশে শোনাচ্ছে। এর চেয়ে লিওনেল মেসি বনাম লুই ফন গাল বললে কেমন হয়!

খটকা লাগছে? ফুটবল ম্যাচে কি আর প্রতিপক্ষ কোচের সঙ্গে কোনো খেলোয়াড়ের সরাসরি লড়াই হয়! এই ম্যাচে কাউকে নেদারল্যান্ডসের কোচের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চাইলে তা হবেন আরেক লিওনেল। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। মেসি কেন?

আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস কোয়ার্টার ফাইনালের আবহে কিন্তু তেমনই মনে হচ্ছে। লিওনেল মেসি যে ম্যাচে থাকেন, আলোটা অবধারিতভাবে তাঁর ওপরই সবচেয়ে বেশি পড়ে। এই ম্যাচের আগেও মেসি-মেসি রবে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই। যা অবাক করার মতো, তা হলো নেদারল্যান্ডস নিয়ে যেকোনো আলোচনায় দলের সব খেলোয়াড়কে ছাপিয়ে কোচের সামনে এসে দাঁড়ানো।

লুই ফন গালকে যাঁরা চেনেন, তাঁদের অবশ্য একটুও অবাক হওয়ার কথা নয়। ডাচ কোচের বায়োডাটা খুব সমৃদ্ধ। আয়াক্স, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড—বড় বড় ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন। এর আগে নেদারল্যান্ডসকেও দুই দফায়। খ্যাতি অবশ্য শুধু এসব কারণে নয়। বর্ণময় এক ব্যক্তিত্ব। মনের কথা অকপটে বলে ফেলায় বলতে গেলে তুলনাহীন। ৭১ বছর বয়সী শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধার পরও দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বকাপে দল নিয়ে এসেছেন। আগের তুলনায় একটু নরম হয়েছেন বলে শোনা যায়। সেই ‘নরম’-ও এমন যে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রায়ই লেগে যাচ্ছে।

ডাচ ফুটবলে লুই ফন গাল বর্ণময় এক চরিত্র

তাই বলে তাঁকে মেসির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া কেন? কারণ, এই ম্যাচের আগে মেসির দিকে একটা তির তিনিই ছুড়েছেন। এর আগে কোনো কোচ যা করেছেন বলে জানা নেই। আর্জেন্টিনা দলে মেসিই সবচেয়ে বিপজ্জনক—এই রুটিন কথা দিয়ে শুরু করে ফন গাল শেষ করেছেন মেসির একটা দুর্বলতার কথা বলে। আর্জেন্টিনার পায়ে যখন বল থাকে না, মেসি তখন কিছুই করেন না। এটাকেই কাজে লাগাতে চান বলে জানিয়ে দিয়েছেন ফন গাল।

কথাটা একদমই মিথ্যা নয়। আধুনিক ফুটবলে বল হারানো মাত্র প্রেসিং করাটা যেকোনো ফুটবলারের জন্য অবশ্যপালনীয় এক কর্তব্য। তিনি ডিফেন্ডার না স্ট্রাইকার, তাতে কিছু আসে–যায় না। মেসি এই ক্ষেত্রে আশ্চর্য এক ব্যতিক্রম হয়েই আছেন। প্রতিপক্ষ যখন আক্রমণে ওঠে, বলতে গেলে মাঠে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকেন। ভার্জিল ফন ডাইক এটাকেই সেদিন বলছিলেন, ‘মেসি ইজ চিলিং সামহোয়ার’।

ফন ডাইক কথাটা বলেছিলেন অন্য অর্থে। ‘চিল’ করতে থাকা মেসির কথা ভুলে গেলেই যে বিপদ, এটা বোঝাতে। লুই ফন গাল উল্টো অর্থে কথাটা প্রকাশ্যে বলার একটাই কারণ, কোনো না কোনোভাবে যেন তা মেসির কান পর্যন্ত পৌঁছায়। বড় খেলোয়াড়দের অহমে লাগলে তাঁরা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন। বোঝাই যাচ্ছে, লুই ফন গাল তাতে থোড়াই কেয়ার করেন। মেসিকে খোঁচা দিয়ে কোনো লাভের সম্ভাবনা না দেখলে প্রকাশ্যে ওই কথা বলতেন না।

ডাচদের বাধা কি পার হতে পারবেন মেসি

আর্জেন্টাইন ফুটবল ইতিহাসে নেদারল্যান্ডসের একটা আলাদা জায়গা আছে। ১৯৭৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েই আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্ব জয়। বিস্ময়কর হলো, আজ মুখোমুখি হওয়ার আগে ৯ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার এই একটাই জয়। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অবশ্য না জিতেও জিতেছিল। টাইব্রেকারে সেই হারের জ্বালা এখনো ভোলেননি লুই ফন গাল। সেই বিশ্বকাপেও তো তিনিই নেদারল্যান্ডসের কোচ। আবার আর্জেন্টিনার সঙ্গে দেখা হওয়া নিশ্চিত হতেই তাই সোজা বলে দিয়েছেন, ‘একটা হিসাব মেটানোর আছে।’

শেষ বিশ্বকাপে অধরা ট্রফিটা জিততে চান লিওনেল মেসি। লুই ফন গালেরও এটি শেষ বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। বিদায় নেওয়ার আগে তিনিও তো চাইবেন ডাচ ফুটবলের চির অতৃপ্তি ঘুচিয়ে দিতে।

এই দেখুন, মেসির প্রসঙ্গে আবারও এসে গেলেন তিনি। বলছিলাম না, ম্যাচটা লিওনেল মেসি বনাম লুই ফন গাল!