আজ হার এড়ালেই অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে লেভারকুসেন
আজ হার এড়ালেই অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে লেভারকুসেন

‘ইনভিন্সিবল’ হওয়ার অপেক্ষায় লেভারকুসেন

জার্মানিতে বুন্দেসলিগার শিরোপা নির্ধারণ হয়ে গেছে আরও আগে। আজ রাতে শেষ ম্যাচে মাঠে নামার আগে চ্যাম্পিয়ন লেভারকুসেনের সঙ্গে রানার্সআপ বায়ার্ন মিউনিখের পয়েন্টের পার্থক্য ১৭। এমন পরিস্থিতিতে শেষ দিনের খেলাগুলো নিছক নিয়ম রক্ষারই হওয়ার কথা। এরপরও আজ ফুটবল-বিশ্বের চোখ থাকবে লেভারকুসেনের মাঠ বে অ্যারেনার দিকে। যেখানে অগসবুর্গকে আতিথ্য দেবে বুন্দেসলিগা চ্যাম্পিয়নরা

আজ সন্ধ্যার ম্যাচটিতে হার এড়ালেই নতুন একটি ইতিহাস গড়বে লেভারকুসেন। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রেকর্ড ৫০ ম্যাচে অপরাজিত থাকা দলটি অপরাজিত থেকে লিগ মৌসুমও শেষ করতে পারবে। এটি করতে পারলে ফুটবল ইতিহাসে ‘ইনভিন্সিবলস’ বা অজেয়দের ছোট তালিকায় নাম লেখাবে তারা। যে ছন্দে লেভারকুসেন এত দিন খেলেছে, সেটি ধরে রাখলেই নতুন এই কীর্তি গড়া খুব কঠিন কিছু হওয়ার কথা নয়।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচে ২৭ জয় ও ৬ ড্র পেয়েছে লেভারকুসেন। এর আগে অগসবুর্গের বিপক্ষে তাদের মাঠে প্রথম লেগের ম্যাচে জয় পেয়েছিল লেভারকুসেন।

সেদিন মাঠের খেলায় একচ্ছত্র দাপট দেখালেও একটির বেশি গোল দেওয়া হয়নি লেভারকুসেনের। অথচ ম্যাচে ৭৬ শতাংশ বলের দখল রেখে ২৪টি শট নিয়েছিল জাবি আলোনসোর দল। বিপরীতে অগসবুর্গ শট নিতে পেরেছিল মাত্র ৩টি, যা কোনোটিই লক্ষ্যে ছিল না। আজকের ম্যাচেও এই দাপট ধরে রেখে জয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিরোপা-উৎসব সারতে চাইবে লেভারকুসেন। পাশাপাশি এটি দিয়ে ইউরোপা লিগ ফাইনালের প্রস্তুতিও সেরে নিতে পারবে ক্লাবটি।

আজ অপরাজিত থেকে মৌসুম শেষ করলে ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগের মধ্যে ১২তম দল হিসেবে এ কীর্তি গড়বে লেভারকুসেন। এর আগে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে প্রথম কীর্তিটি গড়েছিল প্রেস্টন নর্থ এন্ড। সেটি ছিল ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবলে প্রথম মৌসুম (১৮৮৮-৮৯)। সেবার ২২ ম্যাচের লিগে ১৮টি জয়ের সঙ্গে ৪ ম্যাচে ড্র করে প্রেস্টন। এরপর একই কীর্তি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯১২-১৩ মৌসুম পর্যন্ত। সেবার ইতালিয়ান লিগের ক্লাব প্রো ভেরসেলি ১৮ ম্যাচে অপরাজিত থেকে জিতে নেয় লিগ শিরোপা। এ তালিকায় পরের দলটিও ইতালির। ভেরসেলির ঠিক ১০ বছর পর ২৮ ম্যাচের লিগে অপরাজিত থেকে শেষ করে জেনোয়া।

বায়ার লেভারকুসেন কোচ জাবি আলোনসো

ইউরোপিয়ান শীর্ষ লিগে ‘ইনভিন্সিবল’দের তালিকায় পরের দুটি নাম স্পেনের। এক মৌসুমের বিরতি দিয়ে দারুণ এ কীর্তিতে নিজেদের নাম লিখিয়েছিল অ্যাথলেটিক বিলবাও এবং রিয়াল মাদ্রিদ। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে বিলবাও এবং ১৯৩১-৩২ মৌসুমে রিয়াল অপরাজিত থেকে লিগ শেষ করে। অপরাজিত থেকে লিগ জেতার পথে ১০ ম্যাচে জয়ের বিপরীতে ৮ ম্যাচে ড্র করে রিয়াল।

তবে এরপর আরও অনেক সাফল্য অর্জন করলেও আর কখনো ইনভিন্সিবল থেকে লিগ জিততে পারেনি রিয়াল। চলতি মৌসুমে অবশ্য এ কীর্তিটি আরেকবার করার সুযোগ ছিল রিয়ালের। এখন পর্যন্ত খেলা ৩৬ ম্যাচের মাত্র ১টিতে হেরেছে তারা। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে হেরে না গেলে এখন ইনভিন্সিবল হওয়ার পথে থাকত তারাও।

এরপর জার্মান ক্লাব ড্রেসডনার এই তালিকায় নাম লেখায় ১৯৪২-৪৩ মৌসুমে, যারা সেবার অপরাজিত ছিল ২৩ ম্যাচে। ইউরোপের শীর্ষ পরবর্তী অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়নদের পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৭৮-৭৯ মৌসুম পর্যন্ত। লম্বা এ বিরতির পর সেবার নাম লেখায় ইতালিয়ান ক্লাব পেরুজিয়া। তখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩০ ম্যাচে অপরাজিত ছিল দলটি। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে ২৬ ম্যাচে অপরাজিত থেকে এই তালিকায় নিজেদের যুক্ত করে পূর্ব জার্মানির ক্লাব বার্লিনার।

ফুটবলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ার সাপেক্ষে এরপর অজেয় থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ধারা ধীরে কমতে শুরু করে। বলে রাখা ভালো, ১৯৮২-৮৩ মৌসুমের পর শীর্ষ পাঁচ লিগের কেবল তিনটি ক্লাব এ কীর্তি করে দেখাতে সক্ষম হয়। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে ফ্যাবিও ক্যাপেলোর এসি মিলান ৩৪ ম্যাচের কোনোটিতে না হেরে সিরি আ শিরোপা ঘরে তুলেছিল। সেবার ৩৪ ম্যাচের ২২টিতে জয়ের পাশাপাশি ১২ ম্যাচে ড্র করে মিলান।

আজ রাতে আবারও উৎসবে মাতার অপেক্ষায় লেভারকুসেন সমর্থকেরা

আধুনিক ফুটবলে সবচেয়ে ঐতিহাসিক ইনভিন্সিবল দলটির নাম আর্সেনাল। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম অজেয় থেকে লিগ জেতা দলও তারা। ২০০৩-০৪ মৌসুমে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৩৮ ম্যাচে অপরাজিত থেকে লিগ জেতার অবিশ্বাস্য এক কীর্তি গড়ে আর্সেনাল। আর্সেন ওয়েঙ্গারের সেই দল ৩৮ ম্যাচের মৌসুমে ২৬টিতে জয়ের পাশাপাশি ড্র করে অন্য ১২ ম্যাচে। সে মৌসুমে দ্বিতীয় হওয়া চেলসির সঙ্গে আর্সেনালের পয়েন্টের ব্যবধান ছিল ১১। তবে ইনভিন্সিবল হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আর কোনো লিগ শিরোপা জেতা হয়নি গানারদের।

আর্সেনালের পর ইতালিয়ান পরাশক্তি জুভেন্টাস অপরাজিত থেকে লিগ জেতে ২০১১-১২ মৌসুমে। ২৩ ম্যাচে জয়ের সঙ্গে ১৫ ম্যাচে ড্র করে তারা। তবে জুভেন্টাসের পর এই কীর্তি গড়ে দেখাতে পারেনি আর কোনো দল। এখন ইউরোপিয়ান শীর্ষ ৫ লিগে একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দল হিসেবে এ কীর্তি গড়ার অপেক্ষায় আছে লেভারকুসেন। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জানা যাবে, বিরল হতে থাকা এই ক্লাবে আলোনসোর দল নাম লেখাতে পারল কি না!