সাফ অনূর্ধ্ব–১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী বাংলাদেশ নারী দল
সাফ অনূর্ধ্ব–১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী বাংলাদেশ নারী দল

মেয়েদের সাফে শুধু একটি ট্রফিই অধরা বাংলাদেশের

২০১৭ সালে প্রথম, এর পর থেকে সাফের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট মানেই যেন বাংলাদেশের মেয়েদের শিরোপা জয়। আসলে সাফে মেয়েদের ফুটবলেই বাংলাদেশের জয়জয়কার। গতকাল নেপালে শেষ হয়েছে অনূর্ধ্ব–১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এই টুর্নামেন্টও শেষ হয়েছে বাংলাদেশের কিশোরীদের শিরোপা জয়ের হাসিতে। মূল টুর্নামেন্টসহ এই নিয়ে মেয়েদের সাফ ফুটবলে ৭টি শিরোপা জিতল বাংলাদেশ।

এরপরও একটা আফসোস হয়তো থাকবে বাংলাদেশের মেয়েদের! সাফে মেয়েদের যে কয়টি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট আছে, একটি ছাড়া এর সব কটিই জিতেছে বাংলাদেশ। জিততে পারেনি শুধু অনূর্ধ্ব–১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ। এটা জিতলেই সাফে মূল টুর্নামেন্টসহ সব শিরোপা জয়ের চক্রপূরণ হবে বাংলাদেশের। মেয়েদের সাফের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন যে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলই।

মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সাফের দুটি বয়সভিত্তিক শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারির শুরুতে মেয়েরা জিতেছে সাফ অনূর্ধ্ব–১৯ টুর্নামেন্টের শিরোপা। তবে সেটি ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে। তবে অনূর্ধ্ব–১৬ সাফের শিরোপাটায় আর কাউকে ভাগ বসাতে দেয়নি মেয়েরা। ফাইনালে প্রথমে পিছিয়ে পড়েও ৭১ মিনিটে সমতা ফিরিয়ে টাইব্রেকারে ভারতকে তারা হারিয়েছে স্নায়ু ধরে রেখে। সাফের বয়সভিত্তিক ফুটবলে অনূর্ধ্ব–১৯ টুর্নামেন্টটিই দুবার জিতেছে বাংলাদেশ।

২০১৭ সালে ঢাকার শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব–১৫ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়ের পর বাংলাদেশ দলের উল্লাস l

সাফের ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের এ সাফল্য–যাত্রার শুরু ২০১৭ সাল থেকে। সেবারই প্রথম সাফে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট শুরু হয়। ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ জিতেছিল অনূর্ধ্ব–১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। এরপর অনূর্ধ্ব–১৫ সাফের শিরোপা কেন যেন বাংলাদেশ আর জিততে পারেনি। অনূর্ধ্ব–১৫ টুর্নামেন্টে ২০১৭ সালের পর বাংলাদেশ ফাইনালে খেলেছে আরও তিনবার। সালের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের মেয়েরা অনূর্ধ্ব–১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে ২০১৮–এ, ভুটানের মাটিতে। এরপর ২০২২ সালে ঢাকায় ভারতকে হারিয়ে ট্রফি এসেছে অনূর্ধ্ব–১৯ টুর্নামেন্টে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবার এ শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে। এর অনূর্ধ্ব–২০ শিরোপা ২০২৩ সালে, ঢাকায় নেপালকে হারিয়ে। আর গতকাল জিতল অনূর্ধ্ব–১৬–এর শিরোপা।

বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে প্রায় সব শিরোপাই এসেছে সাবেক কোচ গোলাম রব্বানীর হাত ধরে। ২০২৩ সালে তিনি মেয়েদের ফুটবলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর দায়িত্ব পান জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ফুটবলার সাইফুল বারী। কোচ বদল হলেও বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্যের ধারা থামেনি। সাইফুল বারী জিতলেন টানা দুটি শিরোপা। কাল ম্যাচ শেষে কোচ সাইফুল বারী অনূর্ধ্ব–১৬ দলের শিরোপার কৃতিত্ব ভাগাভাগি করেছেন তাঁর কোচিং স্টাফদের সঙ্গে।

গোলাম রব্বানীর সহকারীদের প্রায় সবাই সাইফুল বারীর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান ছিলেন গোলাম রব্বানীরও সহকারী। এ ছাড়া অন্য সহকারীদের মধ্যে মাহমুদা আক্তার অনন্যা, তৃষ্ণা চাকমা, মিরোনা আক্তার, সুই নু প্রু মারমারা দেশের মেয়েদের ফুটবলের প্রায় সব সাফল্যের সঙ্গেই নিজেদের জড়িয়ে রেখেছেন। সাইফুল বারীর কোচিং স্টাফে যুক্ত হয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলকিপার আরিফুর রহমান পান্নু।

২০১৭ সালে সাফ বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল চালুর পর বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে কোনো ফাইনালই হয়নি। সাফল্যের পথে হেঁটে দেশের ফুটবলে নতুন প্রাণের সঞ্চার করা দেশের নারী ফুটবলে এর চেয়ে সুখের আর কী হতে পারে!