ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

নকআউটে গোলের অপেক্ষায় রোনালদো 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুশীলনের মুহূর্তের পোস্ট করা ছবি দেখে মনে হতে পারে, হ্যাটট্রিকের পর সমালোচকদের উদ্দেশে হুংকার ছুড়ছেন। ক্যাপশনে পর্তুগালের পতাকা, প্রার্থনা আর পেশিশক্তির ইমোজি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি আর তাঁর দল সঠিক পথেই আছে।

কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে ‘যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা’ উক্তিকে একটুখানি পরিমার্জন করে ‘যত বড় পারফরম্যান্স নয়, তত বড় অহংবোধ’ লেখা যেতেই পারে। বাস্তবে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠলেও পর্তুগাল আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেনি। আর রোনালদো তো তাঁর শৃঙ্গসম পারফরম্যান্সের ধারেকাছেও নেই।

অথচ রোনালদোর যুগ থেকে যুগান্তরের প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। আর ফ্রান্সের আক্রমণভাগকে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতম করে তুলেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার সবচেয়ে বড় কারিগর তাঁরাই।

মেসি এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচে করেছেন তিন গোল ও করিয়েছেন আরও একটি। পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস না করলে সব ম্যাচেই গোল করার কীর্তি গড়তে পারতেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে যে টান দিয়েছিলেন, তাতে তো মাঝ পঁয়ত্রিশের মহাতারকাকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ বলতে বাধ্য হয়েছিলেন ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরি। 

আগের ম্যাচে সেরাটা দিতে পারেননি রোনালদো

আর এমবাপ্পে তো মাত্র তেইশেই নিজেকে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার অভিযানে নেমেছেন। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতে বড় কিছুর আভাস দিয়েছেন। ফরাসি লিগ আঁ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে ঝলক দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভবিষ্যৎ নন; তিনিই ফুটবলের বর্তমান। আর কাতার বিশ্বকাপে পাঁচ গোল আর দুই অ্যাসিস্টে যেন সরাসরি বার্তা দিতে চাইছেন, ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠা তাঁর কাছে সময়ের ব্যাপার মাত্র। বল নিয়ে চিতার বেগে ছুটছেন, একটুখানি জায়গা পেলেই প্রতিপক্ষদের সর্বনাশ করে ছাড়ছেন। আক্রমণভাগে করিম বেনজেমা–ক্রিস্টোফার এনকুনকুর অভাব একাই ভুলিয়ে দিয়েছেন।

মেসি–এমবাপ্পের তুলনায় রোনালদোকে বেশ ম্লান মনে হওয়াই স্বাভাবিক। মেসির মতোই নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামলেও মনে রাখার মতো খুব বেশি স্মৃতি এখন পর্যন্ত উপহার দিতে পারেননি পর্তুগিজ তারকা।

নিজেদের প্রথম ম্যাচে সফল পেনাল্টিতে প্রথম পুরুষ ফুটবলার হিসেবে টানা পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করার নজির গড়লেও সেটা নিয়ে আছে বিতর্ক। এবারের বিশ্বকাপে ওই গোলই প্রথম, ওই গোলই শেষ। নেই কোনো অ্যাসিস্ট। একসময়কার দলের অপরিহার্য সদস্য এখন যেন ‘অধিনায়ক আর প্রভাবশালী কোটায়’ খেলছেন। পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোস তিন ম্যাচেই তাঁকে তুলে নিয়ে এ ধারণাকে আরও বিকশিত করেছেন।

এত সব নেতিবাচক দিককে সঙ্গী করেই আজ রাতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামছেন রোনালদো। তবে এখানেও কোনো সুখবর নেই। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে যে কখনো গোল পাননি ৩৭ বছর বয়সী মহাতারকা। মেসি অবশ্য শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে নিজের ১০০০তম ম্যাচে সেই গেরো খুলেছেন। এবার রোনালদোর পালা। আজ গোল পেলে ইউসেবিওকেও ছুঁয়ে ফেলবেন রোনালদো। বিশ্ব মঞ্চে পর্তুগালের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৯ গোল করেছেন ‘কালো চিতা’খ্যাত কিংবদন্তি।

যদিও এমন উপলক্ষের আগে খোদ পর্তুগালের মানুষ রোনালদোর বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। দেশটির ক্রীড়া দৈনিক এ বোলার এক জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ মানুষ সিআর সেভেনকে শুরুর একাদশে চান না। তবে তিনি নিশ্চয় সহজে দমে যাওয়ার মানুষ নন। সব সমালোচনা–অপমানের জবাব পায়ের জাদুতে দিয়ে এসেছেন বলেই তো ‘বুড়ো’ রোনালদোকে নিয়েও বাজি ধরা যায়। আজ গেরো খুললে আরেক দফা নিন্দুকদের মুখে কুলুপ এঁটে দেবেন। রোনালদোকে নিয়ে বাজি ধরবেন নাকি!