ইয়োহান ক্রুইফ
ইয়োহান ক্রুইফ

‘কোনো দিন টাকার বস্তাকে গোল করতে দেখিনি’

খেলোয়াড় হিসেবে তিনি সর্বকালের সেরাদের একজন। কিন্তু ইয়োহান ক্রুইফকে আসলে শুধু তাঁর খেলোয়াড়ি সত্তা দিয়ে বিচার করার কোনো উপায় নেই। ফুটবল নিয়ে ভাবনা, সেটা নিজের মধ্যে ধারণ করা, মাঠে ও মাঠের বাইরে সেই বহুমুখী ভাবনার প্রকাশ এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করা—ক্রুইফের চেয়ে ভালো এটা আর কেউ করতে পারেননি। নেদারল্যান্ডস ছাড়িয়েও তাই তিনি সারা বিশ্বের, নিজের সময় ছাড়িয়েও তিনি তাই সব সময়ের। এ কারণেই ক্রুইফ হয়তো সর্বকালের সেরা ফুটবল দার্শনিকও। ২০১৬ সালে ৬৮ বছর বয়সে অন্যলোকে চলে যাওয়া ডাচ এই কিংবদন্তির আজ জন্মদিন। কেমন ছিল তাঁর জীবন ও ফুটবল-দর্শন, সেটা কিছুটা খুঁজে পাওয়া যাবে বিভিন্ন সময়ে বলা ক্রুইফের নানা কথায়—
কীভাবে জিততে হয়

‘বেশি দৌড়ানোর দরকার নেই। ফুটবল খেলতে হয় মস্তিষ্ক দিয়ে।’


আগে তো শট নিতে হবে, নইলে গোল করবে কী করে!’


‘সহজ ম্যাচে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে দুর্বল প্রতিপক্ষকে বাজে খেলানো।’


‘জিততে হলে প্রতিপক্ষের চেয়ে একটা গোল বেশি করতে হয়।’

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১৯৭৪ বিশ্বকাপের ম্যাচে ক্রুইফ


‘সব পজিশনের জন্য যদি একজন করে সেরা খেলোয়াড় বেছে নেন, আপনি সেরা একাদশে পাবেন না, বরং ১১টা ‘‘সেরা ১’’ পাবেন।’


‘খুব কম খেলোয়াড়ই আছে, যখন কেউ মার্ক করে না, তখন কী করতে হবে, সেটা জানে। সুতরাং মাঝেমধ্যে কোনো খেলোয়াড়কে পরামর্শ দিন: ওই ফরোয়ার্ড খুব ভালো, কিন্তু ওকে মার্ক কোরো না।’

টেকনিক নিয়ে

‘একটা বল নিয়ে এক হাজারবার জাগল করাটা টেকনিক নয়। যে কেউ যথেষ্ট অনুশীলন করে এটা করতে পারবে। তারপর সার্কাসে চাকরিও করতে পারবে। টেকনিক হচ্ছে প্রথম স্পর্শেই সঠিক গতিতে নিজের দলের খেলোয়াড়ের সঠিক পায়ে বলটা পাস দিতে পারা।’

‘আমার বয়স যখন ১৫ ছিল, আমি বলে বাঁ পা দিয়ে লাথি মেরে ১৫ মিটারও নিতে পারতাম না, ডান পায়ে বড় জোর ২০ মিটার যেত। আমার সামর্থ্য, টেকনিক ও দূরদৃষ্টি কম্পিউটারে শনাক্ত করা যাবে না।’

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইংল্যান্ড কিংবদন্তি ববি চার্লটন, ইয়োহান ক্রুইফ, পর্তুগিজ কিংবদন্তি ইউসেবিও ও পেপ গার্দিওলা
‘কম্পিউটারে পরিসংখ্যান দেখে যখন প্রতিভাকে প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া হয়, আমার কাছে সেটা জঘন্য মনে হয়। আয়াক্সে এখন যেভাবে খেলোয়াড় নেওয়া হয়, আমিও প্রত্যাখ্যাত হতাম।’

‘এখনকার খেলোয়াড়েরা শুধু বুটের ফিতার অংশ দিয়ে শট নিতে পারে। আমি দুই পা দিয়েই বুটের ভেতরের দিক, বাইরের দিক, ফিতার অংশ দিয়ে শট নিতে পারতাম। তার মানে বলা যায়, আমি এখনকার খেলোয়াড়দের চেয়ে ছয় গুণ ভালো ছিলাম।’


‘ভালো খেলতে হলে ভালো খেলোয়াড়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু একজন ভালো খেলোয়াড়ের প্রায় সব সময়ই কার্যকারিতার অভাবের সমস্যা থাকে। সে সব সময়ই যেভাবে দরকার, তা না করে যেভাবে সুন্দর, সেভাবে কাজটা করতে চায়।’

ভুল নিয়ে


‘আমি কোনো ভুল করার আগে ওই ভুলটা কখনো করি না।’


‘অন্যের দূরদৃষ্টির ওপর আস্থা রেখে পস্তানোর চেয়ে নিজেরটার ওপর আস্থা রেখে পস্তানো ভালো।’

নেদারল্যান্ডসের জার্সিতে ইয়োহান ক্রুইফ
‘ফুটবল ভুলেরই খেলা। যে দল কম ভুল করবে, ওরাই জিতবে।’


‘সময়মতো আসার শুধু একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তই আছে। যদি সেটা না পারেন, তাহলে হয় আপনি অনেক আগে এসেছেন, না হয় অনেক পরে।’


‘যেসব খেলোয়াড় প্রকৃতিগতভাবে নেতা নয়, কিন্তু হতে চায়, তারা সব সময় অন্য খেলোয়াড়দের ভুলের জন্য পরে ধমকাধমকি করে। সত্যিকারের নেতারা আগেই জানে যে তাঁর খেলোয়াড়েরা ভুল করবে।’

সবকিছু সহজ রাখার গুরুত্ব



‘ফুটবল খেলা খুব সহজ। কিন্তু সহজ ফুটবল খেলা সবচেয়ে কঠিন।’


‘রাস্তা থেকে উঠে আসা ফুটবলাররা প্রশিক্ষিত কোচের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

রজার মিলা, পেলে ও ইয়োহান ক্রুইফ
সংবাদমাধ্যম ও সমালোচকদের নিয়ে



‘আমি যদি মনে করতাম তোমার এটা বোঝা দরকার, তাহলে তো ভালোভাবে বুঝিয়েই বলতাম।’


‘গতি কী? খেলার পাতায় অনেক সময় দেখি, গতির সঙ্গে অন্তর্দৃষ্টিকে গুলিয়ে ফেলে। দেখুন, আমি যদি আরেকজনের চেয়ে একটু আগে দৌড়ানো শুরু করি, আমাকে তো দ্রুততর মনে হবে।’


‘যে মানুষগুলো আমার পর্যায়ের নয়, তারা কখনো আমার আমার সততাকে প্রভাবিত করতে পারে না।’

জীবন ও সাফল্য নিয়ে



‘কোনো কিছু জিতে যাওয়ার পর আপনি আর শতভাগ থাকেন না, ৯০ ভাগ হয়ে যান। এটা আসলে এক বোতল কার্বোনেটেড পানির মতো। ছিপিটা খুলে ফেলার একটু পর ভেতরে যেমন গ্যাস একটু কমে যায়।’

ইয়োহান ক্রুইফ ও ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ড
কেন আপনি ধনী ক্লাবকে হারাতে পারবেন না! আমি তো কোনো দিন টাকার বস্তাকে গোল করতে দেখিনি।

‘আমি ধার্মিক নই। স্পেনে দেখতাম, দুই দলের ২২ খেলোয়াড়ই মাঠে ঢোকার আগে বুকে অদৃশ্য ক্রুশ আঁকত। এতে যদি কাজ হতো, সব ম্যাচই তো ড্র হওয়ার কথা।’


‘আমি সাবেক খেলোয়াড়, সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, সাবেক কোচ, সাবেক সাম্মানিক সভাপতি। এই তালিকা দেখে বোঝা যাচ্ছে, সবকিছুই এক সময় শেষ হয়।’


‘একদিক থেকে আমি সম্ভবত অমর।’