বড় মেয়ে মিয়ার কপালে চুমু খাচ্ছেন দি মারিয়া
বড় মেয়ে মিয়ার কপালে চুমু খাচ্ছেন দি মারিয়া

‘পাথর দিয়ে ফুটবল খেলার পর বিশ্বকাপ জিতেছে’, দি মারিয়াকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট ১১ বছরের মেয়ের

আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে আনহেল দি মারিয়ার পথচলা শেষ হয়েছে গত রোববার। কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ১-০ গোলে জয়ের ম্যাচটাই ছিল জাতীয় দলের হয়ে এই উইঙ্গারের শেষ ম্যাচ। আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে দি মারিয়া কিংবদন্তির মর্যাদাই পাবেন। দুবার কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলারকে নিয়ে গর্বিত তাঁর বড় মেয়ে মিয়া। নিজের ইনস্টাগ্রাম আইডি থেকে এ নিয়ে গতকাল আবেগমথিত এক বার্তাও দিয়েছেন দি মারিয়ার ১১ বছর বয়সী বড় মেয়ে।

দি মারিয়ার জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়া প্রসঙ্গে মিয়া লিখেছে, ‘প্রিয় বাবা, আমি জানি অনেকেই এই দিনটি দেখতে চায়নি। কিন্তু সেই দিনটা আজ (পরশু) এসে গেল। ১৬ বছর পেরিয়ে যাওয়া একটি ক্যারিয়ারের ইতি ঘটল। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, তোমার সবচেয়ে বড় সমালোচকেরাও কখনো তোমার জাতীয় দল ছেড়ে যাওয়া দেখতে চায়নি। অনেক সমালোচনা হয়েছে কিন্তু তুমি সব সময় স্রোতের প্রতিকূলে লড়াই করেছ এবং অনেক চেষ্টার পর সফলও হয়েছ। ছয়টি ক্লাবে খেলেছ এবং বিভিন্ন কারণে ভুগেছ অনেক বছর। কিন্তু ফুটবল সব সময় তোমাকে পুরস্কৃত করেছে।’

২০১৩ সালে মিয়ার জন্মের সময় কঠিন সময় কেটেছে দি মারিয়ার

মিয়া এরপর লিখেছে, ‘নিজের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যটা তুমি অর্জন করতে পেরেছ। বিশ্বকাপ এবং আরও অনেক শিরোপা—৩৪টি! জাতীয় দলে এবং বিভিন্ন দেশের ক্লাবে তুমি অবশ্যই বড় ছাপ রেখেছ। ওয়েম্বলি, মারাকানা, কাতার—তিনটি জায়গা অবশ্যই তোমার জাদুর সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মনের মধ্যে কষ্ট নিয়েও অনেক ভালোবাসার সঙ্গে আমরা তোমাকে বিদায় জানিয়েছি। জার্সির জন্য জীবন উৎসর্গকারী একজন মানুষকে নিয়ে আর কী-ইবা বলা যায়? আমি জানি অনেকের কাছেই তুমি নায়ক নও, এমনকি জাতীয় দলে ঈশ্বরও নও। কিন্তু আমার হৃদয়ে তুমিই বিশ্বের সেরা বাবা ও খেলোয়াড়। খুব খুশি হয়েছি, কারণ তুমি যেভাবে চেয়েছ এবং যেটা তোমার প্রাপ্য সেভাবেই ক্যারিয়ারটা উপভোগ করতে পেরেছ। সেই রাতগুলো মনে পড়ছে যখন তুমি অনুশীলন থেকে ফিরে তোমার সঙ্গে কী কী ঘটেছে সব বলতে।’

মিয়া তাঁর দীর্ঘ এই স্ট্যাটাসের শেষ দুই অনুচ্ছেদে লিখেছে, ‘আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে তোমার ক্যারিয়ারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। অবদানের জন্য অনেকেই তোমাকে মনে রাখবে। কিন্তু আমি তোমাকে মনে রাখব এভাবে—সেই ছেলেটি যে রাস্তায় পাথর দিয়ে ফুটবল খেলার অনেক বছর পর সতীর্থদের সঙ্গে বিশ্বকাপ জিতেছে, আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হয়েছে। তোমার যেকোনো সিদ্ধান্তে সমর্থন থাকবে। এটা নিয়ে সংশয় কোরো না। সেরা বাবা ও সেরা সঙ্গী হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সব সময় তোমার পাশেই থাকব। আরও অনেক কিছুই লিখতে পারতাম। কিন্তু কতটা গর্বিত সেটা বোঝানোর মতো শব্দভান্ডার আমার নেই। তোমাকে ভালোবাসি। মিয়া।’

কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলেন দি মারিয়া

দি মারিয়ার দুই মেয়ে মিয়া ও পিয়া। ২০১৩ সালের এপ্রিলে তিন মাসের অকালজাত সন্তান হিসেবে পৃথিবীর আলো দেখেছিল মিয়া। মাদ্রিদের একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) প্রায় দুই মাস চিকিৎসার পর মিয়াকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছিলেন দি মারিয়া। আর্জেন্টিনার সাবেক এ উইঙ্গার ২০২১ কোপা আমেরিকায় মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল করেছিলেন। ওয়েম্বলিতে অনুষ্ঠিত ২০২২ ফিনালিসিমাতেও ইতালির বিপক্ষে গোল করেছিলেন। এরপর কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালেও ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল করেছিলেন। তিনটি শিরোপাই জিতেছিল আর্জেন্টিনা।