১৭ বছর বয়সেই দুবার ব্রাজিলিয়ান লিগ জিতেছেন এনদ্রিক
১৭ বছর বয়সেই দুবার ব্রাজিলিয়ান লিগ জিতেছেন এনদ্রিক

বলছেন এনদ্রিক

‘পেলের পা ছোঁয়ার যোগ্যও কেউ হতে পারবে না কখনো’

বয়স মাত্র ১৭। এরই মধ্যে পেলে ও নেইমারের সঙ্গে তুলনা চলছে এনদ্রিকের। এই কিশোরের মধ্যেই নতুন করে আশা খুঁজতে শুরু করেছেন ব্রাজিলিয়ানরা। তবে প্রশংসায় ভেসে না গিয়ে পা মাটিতেই রাখছেন এনদ্রিক, বলেছেন তাঁকে ঘিরে যে উন্মাদনা চলছে, তা নিয়ে ভাবেন না তিনি।

কদিন আগেই পালমেইরার্সকে ব্রাজিলের শীর্ষ লিগ সিরি ‘আ’ জিতিয়েছেন তরুণ এই ফরোয়ার্ড। আগামী বছর আঠারোয় পা দেওয়ার পর স্প্যানিশ পরাশক্তি রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাওয়া এনদ্রিক পেলের সঙ্গে তুলনাতেও বিব্রত, ‘আমি জানি পেলের পা ছোঁয়ার যোগ্যও কেউ হতে পারবে না কখনো। তিনিই ফুটবলের রাজা।’

সাও পাওলোয় কাল নতুন এক স্পনসরের সঙ্গে চুক্তির অনুষ্ঠানে বার্তা সংস্থা এএফপিকে এনদ্রিক বলেন, তিনি শুধু নিজের সঙ্গেই তুলনীয় হতে চান, ‘আমি শুধু এনদ্রিক হতে চাই। এনদ্রিক কে, সেটিই আমি তাঁদের দেখাতে চাই।’

১৬ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক এনদ্রিকের। তখন থেকেই তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন বল পায়ে কতটা জমাট, ক্ষিপ্র ও চতুর। পেশাদার ফুটবলে দুই মৌসুম খেলেই পালমেইরার্সের হয়ে দুবার ব্রাজিলের শীর্ষ লিগ জিতেছেন। শুধু লিগই নয়, ব্রাজিলিয়ান সুপার কাপ ও সাও পাওলো রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপও জেতা হয়ে গেছে এনদ্রিকের। গত মাসে তো কিংবদন্তি রোনালদোর পর সবচেয়ে কম বয়সে ব্রাজিল জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছিলেন

ব্রাজিলিয়ান সিরি ‘আ’ ট্রফি মাথায় তুলে রাখলেন এনদ্রিক

রিয়াল মাদ্রিদ ২০২২ সালেই এনদ্রিককে দলে টানার কাজ সম্পন্ন করে রেখেছে। সাড়ে ৬ কোটি মার্কিন ডলারে চুক্তিটা সেরেছে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় নাম রিয়াল। তাতে ব্রাজিলিয়ানদের বিশ্বকাপ আশার পালে একটু হলেও হাওয়া লেগেছে। সেই ২০০২ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপ জেতা দলটির সমর্থকেরা ভাবছেন এনদ্রিক ফেরাবেন ব্রাজিল ফুটবলের গৌরবের দিন।

নেইমার ও তাঁর সতীর্থেরা টানা তিনটি বিশ্বকাপে ব্যর্থ হয়েছেন ব্রাজিলিয়ানদের ‘হেক্সা’ উপহার দিতে। ২০২৬ বিশ্বকাপেও বাছাইপর্বেও বাজে সময় যাচ্ছে সেলেসাওদের। ১০ দলের ডাবল লিগ পদ্ধতির কনমেবল অঞ্চলের বাছাইপর্বে এই মুহূর্তে ব্রাজিল আছে ছয়ে। টানা তিনটি ম্যাচ হেরেছে দলটি। তাতে বড় এক কলঙ্কের দাগও লেগে গেছে ব্রাজিল ফুটবলে। গত মাসে মারাকানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে হারটা যে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ইতিহাসে ঘরের মাঠে ব্রাজিলের প্রথম হার।

অনেক খেলোয়াড়ই জাতীয় দলে ৯ নম্বর জার্সিটা চায়। আমি আমার নাম্বার নিয়ে ভাবি না। আমি শুধু দলে থাকতে চাই ও খেলতে চাই।
এনদ্রিক, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার

দলটির অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ফের্নান্দো দিনিজের ওপর চাপ শুধু বাড়ছেই। এনদ্রিককে প্রথম একাদশে রাখার দাবি উঠেছে, দাবি উঠেছে রোনালদো ও তোস্তাওয়ের মতো সাবেক তারকারা যে ৯ নম্বর জার্সি পরতেন, সেই ৯ নম্বর জার্সিটা এনদ্রিককে দেওয়ার।

তবে এএফপিকে এনদ্রিক বলেছে জার্সি নাম্বারে কিছু আসে যায় না, ‘অনেক খেলোয়াড়ই জাতীয় দলে ৯ নম্বর জার্সিটা চায়। আমি আমার নাম্বার নিয়ে ভাবি না। আমি শুধু দলে থাকতে চাই ও খেলতে চাই।’

গত মাসে ব্রাজিল জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে এনদ্রিকের

১৮তম জন্মদিনের পরেই রিয়াল মাদ্রিদে যাবেন এনদ্রিক। সেখানে কি তিনি প্রত্যাশা মেটাতে পারবেন? চাপ নিয়ে কীভাবে খেলতে হয়, সেটি অবশ্য এরই মধ্যে জানা হয়ে গেছে তাঁর। ২০২২ সালে সাত ম্যাচে ৩ গোল করে পালমেইরার্সকে লিগ জিততে সাহায্য করছেন। ২০২৩ মৌসুমের শুরুটা ভালো ছিল না এনদ্রিকের। প্রথম ১৯ ম্যাচে মাত্র ৪টি গোল পেয়েছিলেন। একটা সময়ে তো গোল না পাওয়ায় মাঠে কান্নাকাটিও করেছিলেন।

এএফপিকে সেই বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন এনদ্রিক, ‘মৌসুমের শুরুটা অনেকটা অগোছালো ছিল। এরপর আমি মাথার মধ্যে থাকা “ছোট চাবিটা” বদলে ফেললাম, উপলব্ধি করলাম আমি সুখী। এরপর তো দলকে শিরোপা জিততে সাহায্য করলাম। আশা করছি, পরের বছর আরও বেশি অবদান রাখতে পারব।’ প্রথম ১৯ ম্যাচে ৪ গোল করা এনদ্রিক পরের ১২ ম্যাচে করেছেন ৭ গোল।

বদলে ফেলা ‘ছোট চাবিটা’ কী ছিল, সেটিও বলেছেন এনদ্রিক। এনদ্রিক এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে কী লেখা হয়, সেগুলো পড়েন না। এর বদলে এখন পরিবার ও বন্ধুবান্ধবে সময় কাটান তিনি। দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক অনুশীলনের বাইরেও আলাদাভাবে অনুশীলন শুরু করেছেন, শুরু করেছেন ইংলিশ ও স্প্যানিশ ক্লাসে যাওয়াও। ফলটা নগদেই পেয়েছেন এনদ্রিক। গোল করতে শুরু করেছেন। আর পালমেইরার্সও স্নায়ুক্ষয়ী সময় পেরিয়ে বোতাফোগোকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লিগে।

সিরি আ জয়ের পর সেলফি তুলছেন এনদ্রিক

দলের সাফল্যে বড় ভূমিকা রাখলেও এনদ্রিক সেটিকে খুব বড় করে দেখতে রাজি নন, ‘তাঁরা বলে আমিই নায়ক, তবে আমি সে রকম ভাবি না। আমার কাছে পুরো দলই নায়ক। আমি শুধু ভালো লাগার ক্লাবটিকে সাহায্য করতে পেরেই খুশি।’

‘নার্ভাস না হয়ে যান’—তাই মাদ্রিদে যাওয়া নিয়েও খুব একটা ভাবেন না বলেও জানালেন এনদ্রিক। বললেন, স্পেনে তাঁর ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ ভিনিসিয়ুস জুনিয়র যে বর্ণবাদী আচরণে শিকার হয়েছেন, সে বিষয়েও খুব ভালো জানা তাঁর। তবে ব্রাজিলেও যে তিনি বর্ণবাদের আঁচ পেয়েছেন, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি এ নিয়ে বেশি ভাবতে চাইনি। আমি শুধু খেলা চালিয়ে গেছি। আমি শুধু তাই করতে চেয়েছি, যা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে—ফুটবল খেলা।’