আরেকটি হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন নিউক্যাসলের খেলোয়াড়েরা
আরেকটি হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন নিউক্যাসলের খেলোয়াড়েরা

প্রিমিয়ার লিগের সৌদি–মালিকানার ক্লাবটি কেন পথহারা

রীতিমতো জোরজবরদস্তি করেই ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসল কিনেছিল সৌদি আরব সরকার। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ রাজি না থাকলেও ক্লাবটি কিনতে মরিয়া ছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২০২১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে তিনি এমনও বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ নিউক্যাসল বিক্রিতে বাধা দিলে সেটি সৌদি আরব–যুক্তরাজ্য কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে।

২০২১ সালের মে মাসে সৌদি সরকারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, পিসিপি ক্যাপিটাল পার্টনার্স ও আরবি স্পোর্টস অ্যান্ড মিডিয়া ঘোষণা দেয়, নিউক্যাসলের শতভাগ মালিকানা কিনে নিয়েছে তারা। সৌদি মালিকানায় যাওয়ার পর মাঠের ফুটবলে প্রথম মৌসুম বেশ ভালোই কেটেছিল নিউক্যাসলের। এডি হাওয়ের অধীনে দলটি চতুর্থ হয় প্রিমিয়ার লিগে, যার মাধ্যমে ২০০৩ সালের পর প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেয়। এ ছাড়া লিগ কাপের ফাইনালও খেলে দলটি, যদিও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে রানার্সআপে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। অনেকে ধারণা করেছিলেন, ২০২৩–২৪ মৌসুমে নিউক্যাসলের অগ্রযাত্রা আরও বাড়বে। কিন্তু এবার দলটি মুদ্রার উল্টো পিঠই দেখছে।

প্রিমিয়ার লিগে ২৮ ম্যাচ শেষ, বাকি ১০টি। এমন সময়ে নিউক্যাসলের অবস্থান ১০ নম্বরে। এফএ কাপ আর লিগ কাপ—দুটিতেই হাওয়ের দলের যাত্রা থেমে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে তো প্রথম রাউন্ডই পার হতে পারেনি দলটি।

সৌদি মালিকানায় যাওয়ার পর প্রথম বছর ভালো, কিন্ত পরের বছরই নিউক্যাসল এমন মন্দ খেলছে কেন? সেই কারণই খুঁজে দেখেছে এএফপি।

খরচে লাগাম

এবারের প্রিমিয়ার লিগে ‘প্রফিট অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি রুলস’ (পিএসআর) চালু হয়েছে। এই নিয়মে নিউক্যাসলের মতো ভুক্তভোগী ক্লাব কমই আছে। দেড় দশক আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত ম্যানচেস্টার সিটির মালিকানা কিনে বড় বিনিয়োগ করতে পারলেও নিউক্যাসলের ক্ষেত্রে সৌদি সরকার সেটা করতে পারেনি। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার বিধি আগের থেকে বেশ কঠোর। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুবাদে নিউক্যাসলের আয়ের পথ বেড়েছে। আরও বাড়ত, যদি নকআউট পর্বে আগানো যেত। সে ক্ষেত্রে খরচের হাতটাও আরেকটু প্রসারিত করতে পারত মালিকপক্ষ।

নিউক্যাসলকে নতুন মালিকানায় প্রথম তিন মৌসুমে খরচ সাড়ে ৩১ কোটি মার্কিন ডলারের মধ্যে রাখতে হবে। প্রধান নির্বাহী ড্যারেন ইয়েলস বলেছেন, খেলোয়াড় কেনায় বিনিয়োগ করার জন্য বর্তমান দলের দামি খেলোয়াড় বিক্রি করে দিতে হতে পারে নিউক্যাসলকে। এ ক্ষেত্রে ব্রুনো গিমেরেস ও আলেক্সান্দার আইজ্যাকদের ক্লাব ছাড়তে হতে পারে। ২০২২–২৩ মৌসুমে ৭ কোটি ৩০ লাখ ইউরো লস করেছিল নিউক্যাসল।

চোট ও নিষেধাজ্ঞা

গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ১০ কোটি ইউরোর বেশি খরচ করেছে নিউক্যাসল, এর মধ্যে ৭ কোটিই গেছে সান্দ্রো তোনালির জন্য। কিন্তু ইতালির এই মিডফিল্ডারের কাছ থেকে তেমন কিছুই পায়নি দল। কারণ, এসি মিলানে থাকার সময় বেটিং–অপরাধে জড়ানোর দায়ে আট মাসের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন তোনালি। নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগে নিউক্যাসলের হয়ে মাত্র ১২ ম্যাচই খেলতে পেরেছেন এই ইতালিয়ান। বেশি দামে কেনা আরেক খেলোয়াড় হারভি বারনাস। প্রায় সাড়ে চার কোটি ইউরোয় কেনা এই ইংলিশ উইঙ্গারও চোটের কারণে মাসের ওপর মাঠের বাইরে কাটিয়েছেন। চোটে বেশ কয়েকটি ম্যাচ মিস করেছেন নিক পোপ, ক্যালাম উইলসনরাও। আর জোয়েলিংতন ও সেন বোটমানদের মৌসুমের বাকি সময়ে আর পাওয়াই যাবে না।

বড় অঙ্কে কেনা সান্দ্রো তোনালি মাত্র ১২ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন

ভাগ্যও বিপক্ষে

চলতি মৌসুমে ভাগ্যও নিউক্যাসলের পক্ষে কথা বলেনি। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে পিএসজি, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও সাতবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন এসি মিলানকে। এর মধ্যে পিএসজি ও ডর্টমুন্ড এখন প্রতিযোগিতার শেষ আটেও উঠে গেছে। ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে নিউক্যাসল লিগ কাপে শুরুতেই পড়েছিল ম্যানচেস্টার সিটির সামনে। গত সেপ্টেম্বরে পেপ গার্দিওলার দলকে হারিয়ে পরের রাউন্ডেও উঠে যায় নিউক্যাসল। চতুর্থ রাউন্ডে প্রতিপক্ষ ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, সেটিও কাটিয়ে ওঠার পর কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা চেলসির সঙ্গে। ১–১ সমতার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হারতে হয়েছে তাদের। আর এফএ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হয়েছিল সিটির সঙ্গে। সেপ্টেম্বরে লিগ কাপে হারালেও মার্চের এফএ কাপে আর গার্দিওলার দলকে ঠেকানো যায়নি।

অ্যাশওর্থকে হারিয়ে ফেলা

নিউক্যাসল ইউনাইটেডের অন্যতম শক্তি ছিল স্পোর্টিং ডিরেক্টর ড্যান অ্যাশওর্থ। জিম র‍্যাটক্লিপ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিকানা নেওয়ার পর অ্যাশওর্থকে নিয়ে যেতে চান, যেতে চান অ্যাশওর্থও। এখনো ইউনাইটেড–অ্যাশওর্থ চুক্তি না হলেও অ্যাশওর্থ এরই মধ্যে নিউক্যাসল ছেড়ে গেছেন। ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁর অনুপস্থিতিও দলকে ভোগাচ্ছে।

নিউক্যাসল ইউনাইটেড কোচ এডি হাও

হাওয়ের অনিশ্চয়তা


কোচ হিসেবে এডি হাওয়ের চাকরি থাকবে কি না, এ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। গুঞ্জন আছে, পর্তুগিজ কোচ জোসে মরিনিও সেন্ট জেমস পার্কে কোচ হতে পারেন। সম্প্রতি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন মরিনিও। সেখানে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের গভর্নর ও নিউক্যাসলের চেয়ারম্যান ইয়াসির আল–রুমাইয়ানের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে মরিনিওকে। এমনিতে নিউক্যাসল সমর্থকদের মধ্যে হাও খুব জনপ্রিয়। অবনমনের লড়াইয়ে থাকা একটি দলকে লিগের সেরা চারে তুলে আনায় সমর্থকেরা তাঁকে পছন্দ করেন। কিন্তু কোনো ট্রফি না জেতায় সৌদি মালিকপক্ষ নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার যথেষ্টই সম্ভাবনা আছে।