বায়ার্নের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস
বায়ার্নের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস

চ্যাম্পিয়নস লিগ

উত্থান-পতনের দুর্দান্ত লড়াইয়ে বায়ার্ন-রিয়ালের ড্র

বায়ার্ন মিউনিখ ২ : ২ রিয়াল মাদ্রিদ

এই না হলে ইউরোপিয়ান ক্লাসিকো! কদিন ধরেই ম্যাচটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল উত্তাপ-উত্তেজনা। ইউরোপের সফলতম দুই দলের লড়াই নিয়ে ছড়িয়ে পড়া রোমাঞ্চ যে ভুল ছিল না, সেটিই যেন প্রমাণ হলো আজ। উত্থান-পতন এবং ঘুরে দাঁড়ানোর ধ্রুপদী লড়াইটিতে অবশ্য শেষ পর্যন্ত জেতেনি বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদের কেউই। মিউনিখে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগের জমজমাট ম্যাচটি ড্র হয়েছে ২-২ গোলে।

আজ রাতে আলিয়েঞ্জ অ্যারেনায় শুরুতে স্বাগতিক বায়ার্নের দাপটের মধ্যে ভিনিসিয়ুসের গোলে রিয়ালের এগিয়ে যাওয়া। বিরতির পর ম্যাচ যখন রিয়ালের নিয়ন্ত্রণে মনে হচ্ছিল, তখন চার মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে উল্টোরথে বায়ার্নকে এগিয়ে দেন লেরয় সানে ও হ্যারি কেইন। এরপর বায়ার্ন যখন জয় নিয়ে ম্যাচ শেষ করার অপেক্ষায় ছিল তখন ফের পাল্টা আঘাত হানে রিয়াল। পেনাল্টি থেকে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল আদায় করে রিয়ালকে সমতায় ফেরান ভিনি। এ সমতাতেই শেষ হয়েছে প্রথম লেগের লড়াই।

ঘরের মাঠে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই নিজেদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে বায়ার্ন। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে যেকোনো মূল্যে জেতার লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামে মিউনিখের ক্লাবটি। ফলে ম্যাচের প্রথম ২১ মিনিটে রিয়ালের পোস্ট লক্ষ্য করে ৬টি শট নেয় বায়ার্ন, যার দুটিই ছিল লক্ষ্যে। এর মধ্যে ওয়ান অন ওয়ানে রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিনকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন সানে। এ ছাড়া কেইন-জামাল ‍মুসিয়ালাদের তৈরি করা আরও কিছু আক্রমণ নষ্ট হয় কাছাকাছি গিয়ে।

অন্যদিকে প্রথম ২০ মিনিট রিয়ালের কেটেছে থিতু হওয়ার চেষ্টাতেই। দুই একবার বল পায়ে পেলেও ঠিকঠাকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিল না তারা। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে ম্যচের ২৪ মিনিটে গোল করার আসল কাজটি ঠিকই সেরে ফেলে রিয়াল।

গোলের পর হ্যারি কেইনের উচ্ছ্বাস

প্রায় মাঝ মাঠের কাছাকাছি জায়গা থেকে বায়ার্নের চার ডিফেন্ডারের ফাঁদ এড়িয়ে দুর্দান্ত এক থ্রো বল বাড়ান টনি ক্রুস। আর সেই বলকে দখলে নিয়ে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে জালের ঠিকানা দেখান ভিনিসিয়ুস। এ নিয়ে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে গোল করার কীর্তি গড়লেন ভিনিসিয়ুস। তাঁর আগে এই কীর্তি গড়েছিলেন জারি লিটমানেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং কেভিন ডি ব্রুইনা।

গোল করা বাদ দিলে ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিট দৃশ্যপটজুড়ে ছিল কেবল বায়ার্নই। এ সময় বলের দখল, সুযোগ তৈরি, পাসিংসহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে ছিল বাভারিয়ান ক্লাবটি। তাতে অবশ্য রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি খুব একটা মন খারাপ হওয়ার কথা নয়। কারণ, কাজের কাজটা ঠিকই সেরে রেখেছিল তাঁর শিষ্যরা।

প্রথম আধাঘণ্টা পেরোনোর পর অবশ্য ধীরে ধীরে ম্যাচে নিজেদের ছাপ রাখতে শুরু করে রিয়াল। বল পায়ে রেখে চেষ্টা করে আক্রমণ শানানোর। এ সময় বায়ার্ন রক্ষণে কয়েকবার হানা দেওয়া চেষ্টাও করে তারা। যদিও তা দ্বিতীয় গোল আদায়ের জন্য সেসব যথেষ্ট ছিল না। এরপরও প্রতিপক্ষের মাঠে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় রিয়াল।

বায়ার্নের মাঠে প্রথমার্ধে রিয়ালের ম্যাচ পরিকল্পনা যেন অনেকটাই ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ইতিহাদের ম্যাচটির সঙ্গে মিলে যায়। সেদিনও সিটিকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রাখতে দিয়ে ধৈর্য ধরে রক্ষণ সামলে গিয়েছিল রিয়াল। আজও নিজেদের রক্ষণের শক্তিতে আস্থা রেখে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল কর্লো আনচেলত্তির দল। যদিও গোল করার পর রিয়াল চেষ্টা করেছিল মাঝমাঠের দখল নেওয়ার।

বিরতির পর রিয়াল চেষ্টা করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রাখার। শুরুতে কয়েকটি সুযোগও তৈরি করে তারা। যদিও মিলছিল না দ্বিতীয় গোলটি। উল্টো ম্যাচের ৫৩ মিনিটে দারুণ এক গোলে বায়ার্নকে এগিয়ে দেন সানে। ডান প্রান্তে বল পেয়ে দারুণ এক শটে কাছের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ান এ জার্মান তারকা।

বায়ার্নের প্রথম গোলটি করেন সানে

এই গোলের রেশ কাটার আগেই বায়ার্নকে পেনাল্টি উপহার দিয়ে বসে রিয়াল। বক্সের ভেতর জামাল মুসিয়ালাকে লুকাস ভাসকেজ ফাউল করলে পেনাল্টিটি পায় বায়ার্ন। লুনিনকে উল্টো দিকে পাঠিয়ে বায়ার্নকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন কেইন। এ গোলে বায়ার্নকে এগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের আসরে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতাও হন কেইন। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৮টি করে গোল করেছেন কেইন ও কিলিয়ান এমবাপ্পে।

এগিয়ে গিয়ে বায়ার্নের আত্মবিশ্বাস যেন আরও বেড়ে যায়। দারুণ কিছু আক্রমণে রিয়ালের ওপর বেশ চাপ তৈরি করে টুখেলের দল। এ সময় তৃতীয় গোলের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যায় তারা। কয়েকবার অল্পের জন্য হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয় বায়ার্নকে। অন্যদিকে বায়ার্নের দাপটে সুযোগ তেরি করতে কষ্ট হচ্ছিল রিয়ালের। তবে রিয়ালের ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ সৌভাগ্য’ ঠিকই ম্যাচে ফিরিয়ে আনে তাদের। ম্যাচের রূপ ফের বদলে যায় ৮৩ মিনিটে রিয়াল পেনাল্টি পেলে। স্পট কিক থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করে রিয়ালকে সমতায় ফেরান ভিনি।   

এ ড্রয়ের পর ম্যাচের নিষ্পত্তির জন্য এখন সবার চোখ থাকবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুয়ে। যেখানে আগামী ৮ মে রাতে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হবে এ দুই পরাশক্তি।