আল হিলালের জার্সি গায়ে নেইমার
আল হিলালের জার্সি গায়ে নেইমার

নেইমার কি ইউরোপে এই শতাব্দীর সেরা ব্রাজিলিয়ান

দীর্ঘশ্বাস? তা আসতেই পারে। ২০১৩ সালে ইউরোপ জয় করতে এসেছিলেন নেইমার। দলীয়ভাবে জিতেছেন অনেক কিছুই, ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে হয়তো দীর্ঘশ্বাসটা থাকবে। সময়ও তো কম পাননি। ইউরোপের ময়দানে দীর্ঘ এক দশক ছিলেন নেইমার। ঠিকানা পাল্টে ব্রাজিলিয়ান তারকা এখন সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালের খেলোয়াড়। পেছন ফিরে তাকালে প্রশ্নটা উঠতেই পারে, এই শতাব্দীতে ইউরোপে খেলা ব্রাজিলের অন্য তারকা ফুটবলারদের তুলনায় কেমন করেছেন নেইমার?

সবার আগে নেইমারের ইউরোপে খেলার সময়টা আবারও জানিয়ে রাখা যাক। সান্তোস থেকে ২০১৩ সালে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দেন নেইমার। চার মৌসুম সেখানে কাটিয়ে ২০১৭ সালে দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড (২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো) গড়ে যোগ দেন পিএসজিতে। ফরাসি ক্লাবটিতে ছয় মৌসুম কাটিয়ে কাল আনুষ্ঠানিকভাবে আল হিলালে যোগ দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা।

দুই বছরের চুক্তি করেছেন সৌদি ক্লাবটির সঙ্গে। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আল হিলালে দুই বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ করে ইউরোপে ফিরে আসতে পারবেন নেইমার। তখন তাঁর বয়স হবে ৩৩ বছর। সে সময় নেইমার ইউরোপে ফিরবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তার আগে এই দশকে ইউরোপে নেইমারের পারফরম্যান্সটা দেখে নেওয়া যাক।

ট্রান্সফারমার্কেট জানাচ্ছে, বার্সেলোনায় ১৮৬ ম্যাচ খেলেছেন নেইমার। পিএসজিতে খেলেছেন ১৭৩ ম্যাচ। বার্সার হয়ে করেছেন ১০৫ গোল আর পিএসজিতে তাঁর গোলসংখ্যা ১১৮। বার্সা ও পিএসজি মিলিয়ে নেইমার মোট ৩৫৯ ম্যাচে ২২৩ গোল করেছেন। অর্থাৎ ম্যাচপ্রতি ০.৬২ গড়ে গোল করেছেন। এ দুটি ক্লাবে নেইমারের অ্যাসিস্টসংখ্যা (গোল করানো) ১৫৩টি।

আল হিলালে চুক্তি সইয়ের পর ক্লাবটির সভাপতি ফাহাদ বিন নাফেলের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন নেইমার

ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, এই শতাব্দীতে ইউরোপে খেলা ব্রাজিলের তারকা ফুটবলারদের মধ্যে গোলসংখ্যায় নেইমারের ধারেকাছে আছেন শুধু রোনালদিনিও। ২০০১ সালে পিএসজিতে সই করার মাধ্যমে ইউরোপে পা রাখা রোনালদিনিও বার্সেলোনা ও এসি মিলান মিলিয়ে মোট ১৪৫ গোল করেছেন। তবে নেইমারের চেয়ে ম্যাচ খেলেছেন বেশি—৩৭৫। অ্যাসিস্টসংখ্যা মানে গোল করিয়েছেন ১১৬টি।

ম্যাচপ্রতি গড় গোলের পরিসংখ্যানে নেইমারের কাছাকাছি আছেন ইন্টার মিলানের ‘সম্রাট’খ্যাত আদ্রিয়ানো। ২০০১ সালে ইন্টারে যোগ দিয়ে ইউরোপে পা রেখেছিলেন ব্রাজিলের সাবেক এই স্ট্রাইকার। পার্মা, ফিওরেন্তিনা ও রোমাতেও খেলেছেন। ইউরোপে এই চারটি ক্লাবে মোট ২৪৫ ম্যাচে ১০৭ গোল করেছেন আদ্রিয়ানো। ম্যাচপ্রতি তাঁর গড়ে ০.৪৩টি করে গোল করেছেন আদ্রিয়ানো। তবে গোল করানোর পরিসংখ্যানে নেইমারের সবচেয়ে কাছে অবস্থান করছেন কাকা। এসি মিলান ও রিয়াল মাদ্রিদ ক্যারিয়ারে মোট ১২০টি গোল বানিয়েছেন ব্রাজিলের সাবেক এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।

ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে ১৪টি বড় শিরোপা জিতেছেন নেইমার। ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, এই শতাব্দীতে ইউরোপে খেলা ব্রাজিলের তারকা ফুটবলারদের মধ্যে আদ্রিয়ানোই শিরোপা জয়ের সংখ্যায় নেইমারের সবচেয়ে কাছে অবস্থান করছেন। সেটাও অর্ধেকের কম—৬টি। রোনালদিনিও জিতেছেন ৫টি শিরোপা। নেইমার ২০১৩ সালে বার্সায় যোগ দেওয়ার পর বিবেচনা করা হয়েছিল লিওনেল মেসি ও রোনালদোর আধিপত্য কেউ ভাঙতে পারলে নেইমারই পারবেন।

কিন্তু ব্যক্তিগত পুরস্কার জয়ের ক্ষেত্রে প্রতিভাকে অনূদিত করতে পারেননি নেইমার। ২০১৫ ও ২০১৭ ব্যালন ডি’অরে শীর্ষ তিনে (তৃতীয়) ছিলেন। এর বেশি আর এগোতে পারেননি। অর্থাৎ নেইমার তাঁর সমসাময়িক দুই তারকা ফুটবলারের সঙ্গে হয়তো পারেননি তবে ইউরোপে এই শতাব্দীতে খেলা ব্রাজিলের তারকা ফুটবলারবদের মধ্যে পারফরম্যান্সে নেইমারকে এগিয়ে রাখছে পরিসংখ্যান।