২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যে দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছিল, সে দুটিতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল হজম করেছিল দল। পার্থের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৫–০ গোলে। সেই ম্যাচে সকারুরা প্রথম দুটি গোল করেছিল ১০ মিনিটের মধ্যেই (৬ ও ৮ মিনিটে)। পরের ৩টি গোল হয়েছিল ২০, ২৯ ও ৬১ মিনিটে। এর মধ্যে তৃতীয় গোলটি তপু বর্মণের আত্মঘাতী। ঢাকার ম্যাচেও বাংলাদেশ প্রথম গোল খেয়েছিল ষষ্ঠ মিনিটে। ৪–০ গোলে হারার সেই ম্যাচে অবশ্য চারটি গোলই হয়েছিল প্রথমার্ধে। প্রথম ম্যাচে ২৯ মিনিট আর দ্বিতীয় ম্যাচের ৪৫ মিনিট অস্ট্রেলিয়াকে গোলবঞ্চিত রাখতে পেরেছিল বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের আরও একটি ম্যাচ। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে কেমন খেলবে বাংলাদেশ? এবারও কি ২০১৫ সালের ফলের পুনরাবৃত্তি হবে, নাকি ২০২২ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে চ্যালেঞ্জ জানানো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বাংলাদেশ?
আপাতত মেলবোর্নের এই ম্যাচকে সামনে রেখে চলছে জামাল ভূঁইয়া–বিশ্বনাথ ঘোষ–রাকিব–মোরছালিনদের জোর প্রস্তুতি। কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ভাবছেন কী কৌশলে, কোন পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের চোখে চোখ রেখে লড়বে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ১৮৩তম স্থানে থাকা বাংলাদেশ। দলীয় শক্তিমত্তায় তো বটেই, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত সামর্থ্যেও যে দল যোজন এগিয়ে, তাদের বিপক্ষে মাঠের কৌশলটা কেমন হওয়া উচিত। আজ মেলবোর্নে দলের দ্বিতীয় দিনের অনুশীলন শেষে রাইট ব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষ তারই একটা ছবি তুলে ধরেছেন সবার সামনে। তিনি মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শুধু রক্ষণভাগই নয়, দলের প্রতিটি জায়গার খেলোয়াড়দের একসঙ্গে পারফর্ম করতে হবে, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে আমাদের সবাইকেই একসঙ্গে পারফর্ম করতে হবে। স্ট্রাইকার, মিডফিল্ডার, ডিফেন্ডার, গোলকিপার—সবাইকে এক সুতোয় গেঁথেই খেলতে হবে। প্রতিটি খেলোয়াড়কে নিজেদের জায়গা থেকে শতভাগ দিতে হবে, তাহলেই ভালো কিছু করা সম্ভব।’
কীভাবে ম্যাচটা বাংলাদেশ খেলতে চায়। কী কৌশলে খেলতে চায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। বিশ্বনাথ একটা ধারণা দিয়েছেন সে ব্যাপারে, ‘কোচ আমাদের ব্লকিং নিয়ে কাজ করাচ্ছেন। মিড ব্লক বা লো ব্লক যেটা বলি আর কি! আমরা বিল্ডআপ শুরু করব সাইড ব্যাকের পজিশন থেকে। রাইট ব্যাক ও লেফট ব্যাকদের এ ভূমিকাটা নিতে হবে। লো–ব্লককে আঁটসাঁট রাখার লক্ষ্য নিয়েই আমরা পরিকল্পনাটা সাজাচ্ছি।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে গোলকিপার মিতুল মারমাকে। নিয়মিত গোলকিপার আনিসুর রহমানকে শৃঙ্খলাজনিত কারণে নিষিদ্ধ করেছে তাঁর ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। সে কারণে জাতীয় দলেও নেই তিনি। অভিজ্ঞ আনিসুরকে না পাওয়া বড় একটা ধাক্কাই বাংলাদেশের। তবে মিতুলও কম যান না। সেপ্টেম্বরে হাংজু এশিয়াডে মিয়ানমার, ভারত ও চীনের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২৩ দলের গোলবার সামলেছেন তিনি। দুর্দান্ত খেলেছেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডেম মালদ্বীপের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেও মিতুলের পারফরম্যান্স চমৎকার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি তাঁর বিশাল এক পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় উতরে যেতে নিজের মতো করেই পরিকল্পনা করেছেন এ তরুণ গোলকিপার, ‘জাতীয় দলের হয়ে প্রতিটি ম্যাচই কঠিন। প্রতিটি ম্যাচই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আমাদের সবার প্রস্তুতিও তেমনই হতে হবে। আপনারা সবাই জানেন অস্ট্রেলিয়া কতটা শক্তিশালী। আমরা সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে ভালো খেলেছি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তার চেয়েও বেশি ভালো খেলতে হবে আমাদের। আমার লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোল না খাওয়া। নিজের সেরা খেলাটা খেলা।’