ফুটবল মাঠের ৯০ মিনিটের চেয়ে জীবনের লড়াই কতটা কঠিন, সেই উপলব্ধি অনেক আগেই হয়েছে পল পগবার। ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার বেড়ে উঠেছেন রোইসির হিংসাপ্রবণ এলাকায়। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাতে একসময় ফুডব্যাংকের সামনে মায়ের সঙ্গে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতেন।
সেই পগবাকেই ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় (১ হাজার ২৬৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা) জুভেন্টাসের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, যা এখনো বিনা মূল্যে কোনো খেলোয়াড় কিনে সর্বোচ্চ দামে বিক্রির বিশ্ব রেকর্ড!
পেশাদার ফুটবলে পা রাখার পরই পগবা তাঁর পরিবারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সব সময়ই মনে হয়েছে, সত্যিকারের দারিদ্র্য বিমোচন তখনই হবে; যখন অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারবেন। অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এক ধাপ এগিয়েও গেলেন পগবা। ৩০ বছর বয়সী মিডফিল্ডার সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে নিজস্ব তহবিল চালু করেছেন। তহবিলের সব অর্থ দারিদ্র্য বিমোচনে খরচ করবেন।
ইউনাইটেড থেকে গত বছর আবার জুভেন্টাসে ফিরেছেন পগবা। তবে চোটজর্জর মৌসুমটা ভীষণ বাজে কেটেছে তাঁর। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে পুরো মৌসুমে খেলতে পেরেছেন মাত্র ১৭২ মিনিট। হাঁটুর চোট থেকে সেরে উঠলেও ম্যাচ ফিটনেস ফিরে না পাননি। প্রাক্-মৌসুম প্রস্তুতি নিতে দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও হয়তো দর্শক হয়েই বসে থাকতে হবে। মাঠে সময়টা ভালো না গেলেও মাঠের বাইরের পগবা আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠছেন দানবীর। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে মানবহিতৈষণার কাজে সময় দিয়েছেন।
ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় ম্যানচেস্টারে কাটিয়েছেন পগবা। তাই দারিদ্র্য বিমোচনে যুক্তরাজ্যের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্কাই নিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আপনাকে কোথাও না কোথাও থেকে শুরু করতে হবে। একজনকে দিয়ে শুরু করতে পারেন। এরপর দুই, তিন করে বড় হতেই থাকবে। যতটা সম্ভব মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। যদি সবার কাছে পৌঁছাতে পারি, তাহলে দারিদ্র্য অবসানের লক্ষ্য পূরণ হবে।’
সাক্ষাৎকারে সংগ্রামী জীবনের স্মৃতিও রোমন্থন করেছেন পগবা, ‘মনে পড়ে, যখন আমার বয়স চার কি পাঁচ বছর ছিল, তখন খাবারের সন্ধানে মায়ের সঙ্গে লাইনে দাঁড়াতাম। তারা আমাদের দুধ, চিনি ও অন্য খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করত। বাবা আমার মাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। মা-ই আমাদের তিন ভাইকে বড় করেছেন। ওই অবস্থা থেকে আমি শুধু ঘুরেই দাঁড়াইনি, অনেক টাকাও উপার্জন করেছি। সংগ্রামী জীবন আমাকে বড় হতে সাহায্য করেছে। এখন আমার কাছে টাকা ও জীবনের মূল্য আছে।’
হজ ও ওমরাহ করে আসা পগবা ইসলামি অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলেন। তাঁর দাতব্য প্রতিষ্ঠানটিও ইসলামের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়েছে। এটি যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়াহেদ’-এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দুটি দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি শিক্ষা, টেকসই উন্নয়ন, ইসলামিক অর্থায়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কাজ করবে।
প্রাথমিকভাবে যুক্তরাজ্যে তহবিল গঠন করলেও ভবিষ্যতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হবে জানিয়ে পগবা আরও বলেছেন, ‘এই দান আমাদের জন্য কিছুই না। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য বিশাল হতে পারে।’