অনুশীলনে ফিরেছেন মেসি
অনুশীলনে ফিরেছেন মেসি

মেসির মাঠে ফিরতে আরও দেরি, বাড়ছে যে শঙ্কা

সব ভালোরই শেষ আছে। সেই নিয়ম মেনে একদিন ফুটবলকে বিদায় বলে দেবেন লিওনেল মেসিও। কিন্তু মেসি এমন একজন, যাঁর বিদায়ের ভাবনাটাই ফুটবলপ্রেমীদের মনকে বিষাদে ভরিয়ে তুলতে যথেষ্ট। ভক্ত–সমর্থকেরা তো বটেই, প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরাও নাকি অনেক সময় খেলা থামিয়ে মুগ্ধ চোখে দেখেন মেসিকে। নাহ, মেসি এখনো বিদায় বলেননি। খুব দ্রুত বলবেন—এমন ইঙ্গিতও নেই।

কিন্তু মেসির বিদায়ের ভাবনাটা বারবার সামনে নিয়ে আসছে অপয়া চোট। যে চোটে প্রায় দেড় মাস ধরে মাঠের বাইরে আছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। এর মধ্যে গত সপ্তাহে মাঠের অনুশীলনে ফিরে আশা জাগালেও, আশার সেই বেলুন চুপসে গেছে। চিকিৎসকদের সাড়া না পাওয়ায় শিকাগোর বিপক্ষে মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ম্যাচে খেলা হবে না তাঁর, যা মেসি–ভক্তদের হতাশার মাত্রাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে।

গত মাসে কোপা আমেরিকার ফাইনালে চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন মেসি। সেদিন ডাগআউটে বসে কাঁদতেও দেখা যায় তাঁকে। এমন নয় যে আগে কখনো চোটে পড়েননি বা মাঠ ছেড়ে যাননি। কিন্তু এবার কান্না কেন? হয়তো ফাইনাল শেষ না করে মাঠ ছাড়ার হতাশার কারণে কেঁদেছিলেন মেসি। কিন্তু সেদিন মেসির কান্না ভিন্ন এক বার্তাও দিয়েছিল। কে জানে, সেদিন মাঠ ছাড়ার পর মেসি নিজেও হয়তো বিদায়ের আশঙ্কায় তাড়িত হয়েছিলেন। হওয়াটা অবশ্য অমূলক নয়। কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে চোট যে তাঁর পিছুই ছাড়ছে না।

ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট বলছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মেসি এখন পর্যন্ত চোটে পড়েছেন ছয়বার। তবে এবারের মতো লম্বা সময়ের জন্য তাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হয়নি। লিগামেন্টের চোটে সব মিলিয়ে মেসি মাঠের বাইরে আছেন ৪৬ দিন। হাতে গোনা কয়েকবার এর চেয়ে লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। বয়স ও ফিটনেস বিবেচনায় নিলে মেসির এই চোট আতঙ্ক জাগানোর মতোই। এমনও নয় যে চোট কাটিয়ে তিনি ফিরলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই মেসিকে মাঠে ফেরানোর আগে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে তাঁর ক্লাব ইন্টার মায়ামি।

চোট পাওয়ার পর মেসি

মেসির চোট নিয়ে ইন্টার মায়ামি কোচ জেরার্দো মার্তিনো বলেছেন, ‘ছয় সপ্তাহ ধরে এই চোট নিয়ে সে ভুগছে। তার পুরোপুরি সেরে ওঠা জরুরি। তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের শান্ত হয়ে সবদিক বিবেচনা করতে হবে। সে কয়েক সপ্তাহ আগে অনুশীলন শুরু করেছে, প্রাথমিকভাবে সে চিকিৎসক ও শারীরিক প্রশিক্ষকের সঙ্গে কাজ করেছে। এরপর সে আংশিকভাবে দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছে। আমরা এখনো তার উন্নতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

মেসির বারবার এভাবে চোটে পড়া মোটেও ভালো বার্তা দিচ্ছে না। এর মধ্যে ইন্টার মায়ামির হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচ মিস করার পাশাপাশি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচেও দর্শক হয়ে থাকতে যাচ্ছেন তিনি। ২০২৬ বিশ্বকাপ যতই ঘনিয়ে আসছে, মেসির না খেলার শঙ্কাও তাই বেড়ে চলেছে। পূর্ণ ফিট মেসি এখনো প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্কের। কিন্তু একের পর এক চোট রীতিমতো কোণঠাসা করে রেখেছে আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে।

সামনের দিনগুলোতেও এমন চোটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে মেসিকে চাইলেই আগের মতো করে খেলাতে পারবে না আর্জেন্টিনা ও ইন্টার মায়ামি। বিশেষ করে বিশ্বকাপ ভাবনায় রাখলে মেসিকে নিয়ে বিকল্প পরিকল্পনা করতে হতে পারে। তখন হয়তো শুধু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতেই মাঠে নামাতে হবে তাঁকে। এরপরও চোটে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আর্জেন্টিনা দলের কোচ ও সতীর্থরা অবশ্য মেসিকে বিশ্বকাপে পেতে মরিয়া। সম্প্রতি আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্টারও কথা বলেছেন বিষয়টি নিয়ে। লিভারপুলের এই মিডফিল্ডার বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস মেসি বিশ্বকাপে খেলবেন। মেসি নিজেও অবশ্য বিশ্বকাপ খেলা বা না খেলা নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। তবে বিশ্বকাপ খেলতে হলে তাঁকে যে কঠিন এক পথ পাড়ি দিতে হবে, তা বলাই যায়।