কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ–ভারত টেস্ট আয়োজন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা–সমালোচনা। ম্যাচের প্রথম দিনে বৃষ্টির কারণে খেলা হয়েছে মাত্র ৩৫ ওভার, দ্বিতীয় দিনে খেলাই হয়নি। তৃতীয় দিন কোনো বৃষ্টি না হলেও একটা বলও মাঠে গড়ায়নি। বৃষ্টি না থাকার পরও খেলা শুরু করতে না পারার বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত খোদ ভারতীয়রাই। এর মধ্যে খেলোয়াড় এবং সাংবাদিকদের দুই রকম তথ্য দেওয়ার কারণেও তৈরি হয় বিপত্তি।
খেলোয়াড়দের জানানো হয়েছিল আউটফিল্ড ভেজা থাকার কারণে খেলা শুরু করা যাচ্ছে না। আর সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল, আলোক স্বল্পতার কারণে বন্ধ আছে খেলা। এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে বেশ হাসাহাসিও হয়। পরে জানা যায়, অব্যবস্থাপনার কারণে সব সময় স্থানীয় সংবাদিকদের কড়া সমালোচনার মধ্যে থাকেন গ্রিন পার্কের কর্মকর্তারা। ভেজা আউটফিল্ডের কারণটা সে জন্যই নাকি সাংবাদিকদের জানানো হয়নি।
এর মধ্যে জানা গেছে, অব্যবস্থাপনার কারণে ভবিষ্যতে উত্তর প্রদেশের এই মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না–ও দিতে পারে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলেছেন বিসিসিআইয়ের সহসভাপতি রাজীব শুক্লা। কানপুরে দুই দিন ম্যাচ না হওয়ার জন্য অব্যবস্থাপনার দায় অস্বীকার করে বৃষ্টিকেই দুষেছেন তিনি। তিনি বলেন অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণেই যত বিপত্তি। তবে দ্রুত মাঠের সংস্কার কাজ শুরু হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
কানপুর স্টেডিয়াম নিয়ে চলমান সমালোচনার জবাব দিয়ে রাজীব বলেন, ‘হ্যাঁ, সমালোচনা এক জিনিস যেটা আমরা ক্রিকেটে বিসিসিআইয়ের প্রশাসনের মধ্যে দেখে অভ্যস্ত; কিন্তু সব কিছু নিয়েই দেখি সমালোচনা হচ্ছে। যখন আমরা কিছু কারণে কানপুরে ম্যাচ দিই না, তখনো আমি সমালোচনার মুখে পড়ি। আর এখন আমরা ম্যাচ দিচ্ছি এবং আমি এখনো সমালোচিত হচ্ছি। বলা হচ্ছে, কেন কানপুরে ম্যাচ দেওয়া হলো।’
এরপর কানপুরে ম্যাচ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন সমস্যা হচ্ছে, এই মাঠটা প্রায় ৮০ বছরের পুরোনো। এটা আমাদের ঐতিহ্যবাহী মাঠ। মনে করে দেখুন, এটাকে স্থায়ী টেস্ট সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মূল ছয়টি স্থায়ী টেস্ট সেন্টার ছিল কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই ও কানপুর। এটা স্থায়ী সেন্টার। তাই এখানে টেস্ট ম্যাচ আয়োজন নিয়ে ভাবা হয়েছিল। আর ৮০ বছরের মধ্যে প্রথবারের মতো এখানে এত বৃষ্টি হলো, যে কারণে আমরা দুই দিন ম্যাচ আয়োজন করতে পরিনি।’
বিসিসিআই সহসভাপতি বৃষ্টির কথা বললেও তৃতীয় দিনে অবশ্য কোনো বৃষ্টিই হয়নি; কিন্তু এর পরও একটি বলেও খেলার সুযোগ তৈরি করা যায়নি। রাজীব অবশ্য প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে অতিরিক্ত হইচই হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন, ‘ইতিহাস বলছে কানপুরে কখনো কোনো ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়নি। বিশ্বে এমন অনেক ভেন্যু আছে, যেখানে বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। এখন এখানে যদি দুই দিন ম্যাচ খেলা না হয়, তবে সে জন্য হইচই করার কিছু আছে বলে মনে হয় না।’
নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইলেও মাঠের উন্নয়নে দ্রুত কাজ শুরু করবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিসিসিআইয়ের এ কর্মকর্তা, ‘যখন এই মাঠ তৈরি করা হয়, তখন এই স্টেডিয়ামও নির্মাণ করা হয়। সে সময় প্রযুক্তি নাগালে ছিল না। এখন প্রযুক্তি নাগালে। আমাদের লক্ষ্মৌ স্টেডিয়ামের মতো আমরা সেই প্রযুক্তি পেয়েছি। বেনারসে আমরা আরেকটি স্টেডিয়াম তৈরি করছি। সেখানে অনেক উচ্চপ্রযুক্তি আছে। এমন আধুনিক প্রযুক্তি আছে, যা বৃষ্টির পানি শুষে নিতে পারবে। এখানেও আমরা পরিকল্পনা করছি। আজ আমি প্রশাসকদের সঙ্গে কথা বলেছি, কীভাবে আমরা এমন পদ্ধতি গড়ে তুলতে পারি, যাতে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন করা যায়।’
এদিকে গ্রিন পার্ক ভারতের একমাত্র স্টেডিয়াম, যেটির সেই অর্থে কোনো অভিভাবক নেই। ভারতের প্রতিটি টেস্ট ভেন্যুই কোনো না কোনো অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। গ্রিন পার্ক নিয়ে উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সেই অর্থে মাথাব্যথা নেই। দুই দলের ড্রেসিংরুমের পাশেই বড় করে ‘উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন’ লেখা থাকলেও এ স্টেডিয়ামটি উত্তর প্রদেশ ক্রীড়া বিভাগের সম্পত্তি।
ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজীব, ‘আমি এখানে আসার পর সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে লম্বা আলাপ করেছি। কারণ, এই মাঠ সরকারের। তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তির সম্পর্ক। এখন এখানে মাটি খুঁড়তে হবে, নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে হবে এবং আরও যা যা প্রয়োজন করতে হবে। যে কারণে এখানে আসার পর তাৎক্ষণিকভাবে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও আমার সঙ্গে একমত এবং আমি মনে আমরা খুব দ্রুত উন্নতি করতে পারব।’
সবশেষে গ্রিন পার্ক নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের দায় প্রকৃতির কাঁধে তুলে দিয়ে রাজীব আরও যোগ করেন, ‘কখনো কখনো এমনটা হয়। যদিও আমরা সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি, যাতে বৃষ্টি না হয়। আপনারা জানেন, এটা হয়ে যায়। এটা বিশ্বজুড়ে হয়। তাহলে কেন কানপুর এবং গ্রিন পার্কে এমন কিছুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে, যা প্রকৃতির হাতে আছে?’