শেষ পর্যন্ত জয়ী দল কোস্টারিকা
শেষ পর্যন্ত জয়ী দল কোস্টারিকা

জাপানকে হারিয়ে জার্মানিকে টিকিয়ে রাখল কোস্টারিকা

প্রথম ম্যাচেই জার্মানিকে হারিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল জাপান। সে চমকের কারণেই কিনা কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে আলাদা একটা প্রত্যাশা ছিল সবার—আরও একবার কি অঘটন ঘটাবে জাপান! না, এবার আর পারেনি সূর্যোদয়ের দেশ। আগের ম্যাচে স্পেনের কাছে ৭ গোল খাওয়া কোস্টারিকার বিপক্ষে আজ ১-০ গোলে হেরে গেছে জাপান।

এ ম্যাচে জয় পেলে যেখানে জাপানের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে যেত, সেখানে হেরে গিয়ে নিজেদের অনিশ্চয়তার মধ্যেই ফেলে দিয়েছে ব্লু সামুরাইরা। গোটা ম্যাচে গোলে একটি শট নিয়ে সেটিই কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করেছে কোস্টারিকা। আর জাপানের এই হারে নিশ্চিতভাবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে জার্মানিও। তাদের জন্য যে এটা একটা লাইফ লাইনই! পুরো ম্যাচে কোস্টারিকার গোল লক্ষ্য করে ১৫টি শট নিয়েছে জাপান, যার ৮টিই ছিল গোলে।

আল রাইয়ানের আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে শুরু থেকে আধিপত্য ছিল জাপানেরই। কিন্তু আক্রমণের পর আক্রমণে কোস্টারিকার রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করে ফেললেও কাজের কাজটা তারা করতে পারেনি। কোস্টারিকা দলের খেলোয়াড়দের ম্যাচের বেশির ভাগ সময়ই বলের পেছনে ছুটিয়েছে জাপানিরা। অথচ শেষ পর্যন্ত জয়ী দল কোস্টারিকা!

কেশের ফুয়েরের শট চলে যাচ্ছে জাপানের গোলে

জার্মানির বিপক্ষে জেতা দলে এদিন পাঁচটি বদল এনেছিল জাপান। শুরু থেকেই কোস্টারিকার রক্ষণে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে গেছে তারা। অন্যদিকে কোস্টারিকা যেন প্রথম থেকেই স্পেন ম্যাচের বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে রক্ষণটাকে আঁটসাঁট করার চেষ্টায় ছিল। জাপানের আক্রমণগুলোও বারবার আছড়ে পড়েছে কোস্টারিকার সে রক্ষণের সামনে।

তবে প্রথমার্ধের খেলায় বলার মতো তেমন কিছুই ঘটেনি। জাপান বেশি আক্রমণ করলেও দুই দলের খেলাই দর্শকদের বিরক্তি উদ্রেক করেছে। এবারের কাতার বিশ্বকাপে এটিই প্রথম ম্যাচ, যে ম্যাচে কোনো দলই প্রথমার্ধে গোল পোস্ট লক্ষ্য করে একটি শটও নিতে পারেনি। প্রথমার্ধের শেষভাগে কোস্টারিকা কিছুটা গা ঝাড়া দিয়ে উঠে জাপানি সীমানায় আক্রমণে গেছে, কিন্তু ওই পর্যন্তই। এই অর্ধে আক্রমণগুলোর মধ্যে জাপান দুবার কোস্টারিকার সীমানায় গোল হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কিন্তু কোস্টারিকার অভিজ্ঞ গোলকিপার কেইলর নাভাসকে সেগুলো বিব্রত করতে পারেনি।

একটি সুযোগ পেয়ে সেটিই কাজে লাগিয়েছে কোস্টারিকা

দ্বিতীয়ার্ধে ইউতো নাগামোতোর জায়গায় নামানো হয় জার্মানির বিপক্ষে জাপানের জয়সূচক গোলের নায়ক তাকুমা আসানোকে, আয়াসে উয়েদার জায়গায় জুনিয়া ইতোকে ও ইয়ামানের জায়গায় মিতোমাকে। এ বদলগুলোর পর জাপানের আক্রমণের ধার বাড়ে। মাঠে নেমেই দলের আক্রমণের প্রভাবক হয়েছিলেন আসানো। তাঁর ব্যাকহিল থেকে বল পেয়ে হিদেমাসা মোরিতা বক্সের মাথা থেকে শট নেন, তবে কোস্টারিকান গোলকিপার নাভাস ছিলেন প্রস্তুত। নাভাস আজ নিজের অভিজ্ঞতার সর্বস্ব দিয়েই খেলেছেন।

জাপানি আক্রমণের ঢেউ সামলে বার দুয়েক জাপানের রক্ষণভাগে হানা দিয়েছিল কোস্টারিকা। ৮০ মিনিটে সবাইকে থমকে দিয়ে গোল পেয়ে যায় কনকাক্যাফের দেশটি। জাপানি ডিফেন্ডারের ভুলে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান কেশের ফুয়ের। বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে তিনি জাপানি গোলকিপার শুইচি গোন্দাকে পরাভূত করেন। জাপানের গোলমুখে সেটিই ছিল কোস্টারিকার প্রথম শট।

নিজেদের ঘর সামলে জয় তুলে নিয়েছে কোস্টারিকা

গোল হজমের পর ম্যাচে ফিরতে জাপান অনেক চেষ্টা চালালেও কোস্টারিকার রক্ষণ ভাঙা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। তবে এটা ঠিক, আক্রমণের পর আক্রমণ করে গেলেও শেষ দিকে কোস্টারিকান খেলোয়াড়দের সঙ্গে শরীরী টক্করে বারবার পিছিয়ে পড়েছেন জাপানের খেলোয়াড়েরা। প্রথম ম্যাচে জার্মানির মতো ফুটবলশক্তিকে হারিয়ে সবাইকে অবাক করে দেওয়া জাপান শেষ পর্যন্ত হেরেই মাঠ ছেড়েছে।

এ হারে ২ ম্যাচ থেকে জাপানের পয়েন্ট ৩। কোস্টারিকাও ২ ম্যাচে পেয়েছে সমানসংখ্যক ৩ পয়েন্ট। জাপানের এ জয়ে সুবিধা হয়েছে জার্মানির। আজ রাতের ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে হেরে গেলেও জার্মানির দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার আশা টিকে থাকবে। গ্রুপ ‘ই’ থেকে এখন দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ আছে সবারই।