জানুয়ারির শুরুতে আলোচনায় ছিল কিলিয়ান এমবাপ্পের দলবদল
জানুয়ারির শুরুতে আলোচনায় ছিল কিলিয়ান এমবাপ্পের দলবদল

রিয়ালের আয়নায় এমবাপ্পে থাকার পরও কেন দলবদলে এত মন্দা

জানুয়ারিতে এমন নীরব দলবদল শেষ কবে দেখা গিয়েছিল? মাসের শেষ সপ্তাহে এসে কেউ চাইলে এ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। ছোটখাটো কিছু দলবদল বাদ দিলে এবারের শীতকালীন দলবদল যেন নীরবেই শেষ হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় কোনো দলবদলের ঘটনা ঘটেনি। ঘটতে পারে এমন ইঙ্গিতও সামান্য।

প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো শীতকালীন দলবদলে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করে খেলোয়াড় কিনে অভ্যস্ত। সংখ্যায় বেশি না হলেও দুই–তিনজন এমন খেলোয়াড় সব সময় থাকেন। গতবার যেমন চেলসি কিনেছিল মিখাইল মুদরিককে আর লিভারপুল নিয়ে এসেছিল কোডি গাকপোকে। কিন্তু এবার চিত্রটা ভিন্ন। প্রশ্ন হচ্ছে, এবার দলবদলের বাজারে কেন এমন মন্দা?

ক্লাবগুলোর অর্থ স্বল্পতা

বৃহৎভাবে ভাবলে এবার দলবদলের খরচ আশ্চর্যজনকভাবে কমে যাওয়ার পেছনে আগের দলবদলগুলোর বড় ভূমিকা আছে। সম্প্রচারস্বত্ব এবং বাণিজ্য খাত থেকে আয়ে প্রিমিয়ার লিগের আধিপত্য থাকায় দলবদলে বড় অঙ্কে খেলোয়াড় কেনার শুরুটা তারাই করে। পরে বাকি লিগের ক্লাবগুলো নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাতে অংশগ্রহণ করে।

গত দুই গ্রীষ্মের দলবদলে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবলে খরচের রেকর্ড ভেঙেছে দুবার। ২০২২ সালে ২০ ক্লাব মিলে খরচ করেছিল ২ বিলিয়ন পাউন্ড। গত গ্রীষ্মে ফের এ রেকর্ড ভাঙে এবং খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ২.৪ বিলিয়ন পাউন্ডে। মহামারি–পরবর্তী সময়ে এই ব্যয় যথেষ্ট চোখধাঁধানো ছিল। শুরুতে প্রকৃত চিত্রটা বোঝা না গেলেও এখন এসে স্বাভাবিকভাবেই ক্লাবগুলো অর্থ স্বল্পতায় ভুগতে শুরু করেছে। যার প্রভাব এবারের দলবদলে স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে।

১০ পয়েন্ট জরিমানা করা হয়েছে এভারটনকে

এভারটনের পয়েন্ট কাটা যাওয়ার পর আতঙ্ক

একসময় ক্লাবগুলো নিজেদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে খরচ করত। অনেক ক্ষেত্রেই খেলোয়াড় কেনায় খরচ করার ক্ষেত্রে নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করা হতো না। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার স্বাধীন ফুটবল নিয়ন্ত্রক নীতি এনে ক্লাবগুলোকে ব্যাপকভাবে চাপে ফেলেছে। আর্থিক নীতির ক্ষেত্রে ক্লাবগুলোকে বড় ধরনের শাস্তির মধ্যেও যেতে হচ্ছে। যেমন আর্থিক নিয়ম ভঙ্গ করে ১০ পয়েন্ট জরিমানা দিতে হয়েছে এভারটনকে।

এর আগে গত মৌসুমে পয়েন্ট জরিমানায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছিল ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাস। অন্যদের মধ্যে নটিংহাম ফরেস্ট এবং ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবকেও আর্থিক সংগতি নীতি ভাঙার কারণে শাস্তির শঙ্কায় দিন পার করতে হচ্ছে। আর স্প্যানিশ লিগে বার্সেলোনা অর্থনৈতিক সংকটের গল্প তো এখন নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খরচের ব্যাপারে খুবই সাবধানী পথ অবলম্বন করতে হচ্ছে ক্লাবগুলোকে।

ডর্টমুন্ডে ফিরে গেছেন জাডন সানচো

সৌদি আরবের অর্থের প্রবাহ থেমে থাকা

এমন সংকটের সময় ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোকে স্বস্তি এনে দিতে পারত সৌদি প্রো লিগ। গত গ্রীষ্মের দলবদলে ব্যাপক অর্থ খরচ করেছিল তারা। প্রত্যাশা ছিল এবারও তারা তেমন কিছু করবে। বিশেষ করে গত ডিসেম্বরে আল ইত্তিফাকের বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে দলবদলের বাজারে নামার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই হয়নি। যে কারণে খেলোয়াড় বিক্রি থেকে বড় কোনো আয়ের মুখ দেখেনি ইউরোপের ক্লাবগুলো। ধারণা করা হচ্ছে, সৌদি প্রো লিগের ক্লাবগুলো গ্রীষ্মের দলবদলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে সময় ইউরোপের সেরা তারকাদের পাওয়াটা তাদের জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। ফলে এই মুহূর্তে সৌদি ক্লাবগুলোর নীরবতার প্রভাব পড়েছে ইউরোপের দলবদলের বাজারেও। এর মধ্যে অবশ্য অন্য ধাক্কাও খেয়েছে সৌদি প্রো লিগ। ৬ মাসের মাথায় ফিরে এসেছেন ইংলিশ মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসন।

বিকল্পের অভাব

দলবদলে ক্লাবগুলোর তৎপরতার ঘাটতিকে আরেকটি বিষয় দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। সেটি হলো, বড় ক্লাবগুলোর নেওয়ার মতো যথেষ্ট মানসম্পন্ন খেলোয়াড় না থাকা। যেমন চেলসি ও আর্সেনালের মতো ক্লাবগুলো যোগ্য স্ট্রাইকারের খোঁজে আছে। এই দলবদলে নেওয়ার মতো বিকল্প হাতে থাকলে দুটি ক্লাবই মাঠে নামত। কিন্তু বাজারে এ মুহূর্তে যোগ্য নাম্বার নাইনের বেশ ঘাটতি।

সম্প্রতি ব্রেন্টফোর্ডের ইভান টনির কথা বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু যেহেতু বিকল্প নেই, তাই তাঁকে বিক্রি করে বড় অঙ্কের অর্থ আনার দিকেই চোখ ব্রেন্টফোর্ডের। একই কথা প্রযোজ্য নাপোলির তারকা স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমেনের ক্ষেত্রেও। ফলে ক্লাবগুলোও খেলোয়াড় কেনা থেকে পিছিয়ে গেছে। এ ছাড়া অন্য ক্লাবগুলোও নিজেদের দুর্বল পজিশনকে শক্তিশালী করতে পছন্দের খেলোয়াড় খুঁজছে। কিন্তু সাধ্যের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে এমন খেলোয়াড়ের সংকট রয়েছে দলবদলের বাজারে। যে কারণে ক্লাবগুলোও আপাতত খেলোয়াড় কেনা থেকে পিছিয়ে গেছে।

হেন্ডারসন ফিরে এসেছেন ইউরোপে

ফ্রি ট্রান্সফারে চোখ

গত কয়েক মৌসুম ধরে দলবদলে সবচেয়ে আলোচিত নাম কিলিয়ান এমবাপ্পে। এবারও দলবদলের শুরু থেকে এমবাপ্পের রিয়ালে যাওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। গ্রীষ্মের দলবদলে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে তাঁর। তবে এমবাপ্পে চাইলে এখনই কথা পাকা করে রাখতে পারেন। এমবাপ্পেকে বিনা মূল্যে পেতে মুখিয়ে আছে রিয়ালও। এখন পর্যন্ত অবশ্য কোনো কিছু চূড়ান্ত নয়।

তবে এমবাপ্পে যদি রিয়ালের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তির খবর আগাম নিশ্চিত করত, সেটা এককভাবে দলবদলের বাজারকে চাঙা করে তুলতে পারত। শুরুতে তেমন ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও পরে এই খবর আর বিশেষ ডালপালা মেলেনি। এমবাপ্পে ছাড়াও আরও বেশ কজন তারকা খেলোয়াড় এ মৌসুম শেষেই ফ্রি এজেন্ট হয়ে যাবেন। আর মোহাম্মদ সালাহ, কেভিন ডি ব্রুইনা এবং ফেদেরিকো কিয়েসারা আছেন চুক্তির শেষ বছরে। ফলে সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় ক্লাবগুলোও। যার প্রভাব এবারের বদবদলেও পড়েছে।

শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা

ওপরের সব আলাপের পরও এটা মনে রাখা দরকার যে জানুয়ারির দলবদল এখনো শেষ হয়নি। শেষ মুহূর্তের দু–একটি দলবদল বদলে দিতে পারে পুরো চিত্র। এর মধ্যে জ্যাডন সানচো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে গেছেন। ম্যান সিটি ছেড়ে ধারে ওয়েস্ট হামে গেছেন কালভিন ফিলিপস। যদিও এই দলবদলগুলো বাজারে বড় প্রভাব ফেলতে পারেনি। এখন অপেক্ষা শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তার। তেমন কিছু আদৌ হয় কি না, সেদিকেই চোখ সবার।